আন্তর্জাতিক ডেস্ক :এক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য প্রচারণা শুরুর পর থেকেই একে একে সব ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্প যে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী দৌড়ে থাকবেন সেটা খুব কম মানুষই ভেবেছিল, কিন্তু তিনি ভালোভাবেই ছিলেন। অনেকেই ভেবেছিলেন, তিনি ভোট পর্যন্ত টিকতে পারবেনা, তিনি টিকলেন।
তারা ভেবেছিলেন কোনো প্রাইমারিতেও তিনি জিততে পারবেন না, কিন্তু তিনি পারলেন। রিপাবলিকান পার্টি তাকে মনোনয়ন দেবে না বলে অনেকে মনে করলেও তা হয়নি।
বিরোধীরা এমনও ভেবেছিল যে এই নির্বাচনে জেতা দূরের কথা ট্রাম্পের পক্ষে প্রতিযোগতায় থাকা কোনোভাবে সম্ভব না। কিন্তু এতো জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বেলা শেষে ট্রাম্পই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন।
অনেকের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত এই জয়ের পেছনে কি কারণ কাজ করেছে তা খুঁজে করার চেষ্টা করেছে বিবিসি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনে জিতে তিনি এমন পাঁচটি কৌশল নিয়েছিলেন, যা অনেকের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুর্বোধ্য ছিল।
এগুলো হলো- ট্রাম্পের ‘শ্বেত জোয়ার’, বিতর্ক ও কেলেঙ্কারির পরেও অবিচল থাকা, রাজনীতিতে ‘বহিরাগত’ হয়েও কাউকে পাত্তা না দেওয়া, হিলারির ই-মেইল নিয়ে এফবিআই পরিচালক জেমস কোমির তৎপরতা এবং নিজের ধারণার উপর ট্রাম্পের আস্থা।
ট্রাম্পের ‘শ্বেত জোয়ার’
জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে একের পর এক হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের রাজ্যগুলো চলে গেল ট্রাম্পের দখলে। হিলারি ক্লিনটনের ব্লু ফায়ারওয়াল ভেদ করে এই বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছেন তিনি।
মধ্যপশ্চিমাঞ্চলে তার শক্তির উপরই ডেমোক্রেটদের শেষ ভরসা ছিল। মূলত কালো ও শ্রমিক শ্রেণির সাদা ভোটারদের উপর ভিত্তি করে ওই রাজ্যগুলোতে কয়েক দশক ধরে গেঁড়ে বসেছিল ডেমোক্র্যাটরা।
ওই সব সাদা শ্রমিকরা- বিশেষ করে কলেজের দোরগোঁড়া না পেরনো নারী ও পুরুষরা- দলবেঁধে দলকে পরিত্যাগ করেছে।
ভোট পড়েছে বেশি গ্রামীণ মানুষের। তারা ওই সব আমেরিকান যারা কায়েমি শক্তির কাছে উপেক্ষিত বোধ করেছে এবং উপকূলীয় অভিজাতদের পেছনে পড়েছিলেন। তারা নিজের পক্ষে আওয়াজ শুনেছেন। যেখানে ভার্জিনিয়া ও কলোরাডোর মতো জায়গায় ঘাঁটি শক্ত থাকলেও উইসকনসিনের পতন হয়েছে; সঙ্গে মিসেস ক্লিনটনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্নও।
বিতর্ক সৃষ্টিতে ট্রাম্প
ট্রাম্প যুদ্ধফেরত সাবেক সেনা কর্মকর্তা জন ম্যাককেইনকে অপমান করেছেন; ফক্স নিউজ ও এর জনপ্রিয় উপস্থাপক মেগান কেলির সঙ্গে ঝগড়ায় জড়িয়েছেন।
শিরোপা জয়ী হিস্পানিক সুন্দরীর ওজন নিয়ে কীভাবে মস্করা করেছেন, তা জানতে চাইলে তিনি বিপুল উদ্যমে আরও বাড়িয়ে বলেছেন।
নারীদের প্রতি নিজের অভদ্রোচিত যৌন আগ্রহের বিষয়ে নিজের বক্তব্যের গোপন ভিডিও প্রকাশ পেলে অনিচ্ছাকৃতভাবে ক্ষমা চেয়েছেন।
এগুলোর কোনো কিছুই তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। সম্ভবত এসব বিভিন্ন বিতর্ক এতো শক্ত ও দ্রুত এসেছে যে সেগুলো রক্তক্ষরণের সুযোগ পায়নি। সম্ভবত ট্রাম্পের ব্যক্তিত্ব ও আবেদন এতোটাই জোরালো ছিল, যে ওই সব কেলেঙ্কারি গায়ে বাড়ি খেয়ে ফিরে গেছে। কারণ যাই হোক, ট্রাম্প ছিলেন ‘বুলেটপ্রুফ’।
রাজনীতিতে বহিরাগত
তিনি ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে শুধু নয় নিজের দলে যারা ক্ষমতাসীন তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন এবং সবাইকে পরাস্ত করেছেন।
দৃঢ় আত্মবিশ্বাস
প্রাইমারিতে নিজের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মার্কো রুবিও, টেড ক্রুজ ও জেব বুশসহ দলের সুপরিচিত অনেক নেতাকে পথ থেকে হঠাতে পেরেছেন, যাদের কেউ কেউ তার বশ্যতা স্বীকার করেছেন। কেউ কেউ এখন দলের যোগাযোগেই নেই।
এমনকি হাউজ স্পিকার থেকে শুরু করে দলের বাকি নেতাদেরও সহায়তা লাগেনি তার। বাস্তবে হয়তো তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার দৃঢ়তাই হয়তো তাকে জিতিয়েছে।
কাউকে পাত্তা না দেওয়ার মানসিকতা
ট্রাম্পের সবার বিরুদ্ধে ‘পাত্তা না দেওয়ার’ এই মনোভাব তার স্বাতন্ত্র্য ও বহিরাগত অবস্থান এমন সময়ে প্রকাশ করেছে যখন বেশিরভাগ আমেরিকান ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ।
এই মনোভাব ডেমোক্র্যাট বার্নি স্যান্ডার্স ও টেড ক্রজের মতো আরও কয়েকজন জাতীয় রাজনৈতিক ধরতে পেরেছিলেন। তবে হোয়াইট পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ট্রাম্প ছাড়া আর কেউ এটাকে কাজে লাগাতে পারেনি।
