অনলাইন ডেস্ক : বাঁধাকপি বা পাতাকপি শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি একটি পাতা জাতীয় সবজি। বাঁধাকপি ভাজি আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় খাবার। এছাড়াও বাঁধাকপি কাঁচা কিংবা রান্না করে খাওয়া যায়। বিশেষ করে মাংসের সাথে বাঁধাকপির ঝোল বেশ উপাদেয় খাবার। সালাদে শসা, গাজর, টমেটোর সাথে কচি বাঁধাকপি মেশালে তার স্বাদ হয় অত্যন্ত চমত্কার।
বাঁধাকপির ইংরেজি নাম Cabbage। এর বৈজ্ঞানিক নাম Brassica oleracea। বাঁধাকপির ইতিহাস সঠিকভাবে জানা না গেলেও অনুমান করা হয় যে খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দে ইউরোপের কোনো এক জায়গায় চাষ হয়। বিশেষ করে এই জায়গাট ধরা হয় ভূমধ্যসাগরীয় দক্ষিণ ইউরোপে। বাংলাদেশে ১৯৬০-এর দশকে বাঁধাকপির চাষ শুরু হয়। আমাদের দেশে শুধুমাত্র সবুজ বাঁধাকপি পাওয়া গেলেও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এর কয়েকটি ধরন দেখতে পাওয়া যায়। যেমন লাল, সাদা, গাঢ় সবুজ, হালকা সবুজ, বেগুনী ইত্যাদি রঙের বাঁধাকপি। বাঁধাকপি পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সবজি।
পুষ্টিবিদদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম বাঁধাকপিতে রয়েছে –
খাদ্যশক্তি- ২৫ কিলোক্যালরি
শর্করা- ৫.৮ গ্রাম
চিনি- ৩.২ গ্রাম
খাদ্যআঁশ- ২.৫ গ্রাম
চর্বি- ০.১ গ্রাম
আমিষ- ১.২৮ গ্রাম
থায়ামিন- ০.৬৬১ মিলিগ্রাম
রিবোফ্লেভিন- ০.০৪০ মিলিগ্রাম
নিয়াসিন- ০.২৩৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৬- ০.১২৪ মিলিগ্রাম
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড- ০.২১২ মিলিগ্রাম
ফোলেট- ৪৩ আইইউ
ভিটামিন সি- ৩৬.৬ মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে- ৭৬ আইইউ
ক্যালসিয়াম- ৪০ মিলিগ্রাম
আয়রন- ০.৪৭ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম- ১২ মিলিগ্রাম
ম্যাংগানিজ- ০.১৬ মিলিগ্রাম
ফসফরাস- ২৬ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম- ১৭০ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম- ১৮ মিলিগ্রাম
জিংক- ০.১৮ মিলিগ্রাম
ফ্লুরাইড- ১ আইইউ
পুষ্টিগুণের পাশাপাশি বাঁধাকপির রয়েছে নানান রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাও। যেমন –
– বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। বাঁধাকপিতে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের ভিটামিনই আছে। এতে রয়েছে রিবোফ্লোভিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, থায়ামিন, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি ও কে।
– বাঁধাকপি হাড় ভালো রাখতে সহায়তা করে। বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও সোডিয়াম যা হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। এছাড়াও বাঁধাকপিতে উপস্থিত ভিটামিন হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। যাঁরা নিয়মিত বাঁধাকপি খান তাঁদের বার্ধক্যজনিত হাড়ের সমস্যার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
– বাঁধাকপি এমন একটা খাবার যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। বাঁধাকপিতে খুবই সামান্য পরিমাণে কোলেস্টেরল ও সম্পৃক্ত চর্বি রয়েছে। এছাড়াও বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যআঁশ রয়েছে। যাঁরা ওজন কমাতে চান তাঁরা তাঁদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বাঁধাকপি রাখুন। বিশেষ করে বাঁধাকপির সালাদ। সালাদে প্রচুর পরিমাণে বাঁধাকপি থাকলে অতিরিক্ত ক্যালোরি বাড়ে না বললেই চলে। তাই ওজন কমাতে চাইলে নিয়মিত খাবার তালিকায় প্রচুর পরিমাণে বাঁধাকপি রাখুন।
– বাঁধাকপি আলসার নিরাময়ে উপকারী। পাকস্থলির আলসার ও পেপটিক আলসার প্রতিরোধে বাঁধাকপি বিশেষভাবে সহায়ক। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, বাঁধাকপির রস আলসারের জন্য সবচেয়ে উপকারী প্রাকৃতিক ওষুধ।
– বাঁধাকপি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যাঁরা নিয়মিত বাঁধাকপি খান তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। বাঁধাকপিতে উপস্থিত ভিটামিন সি ও মিনারেল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
– বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা ত্বকের সমস্যা দূর করে। নিয়মিত বাঁধাকপি খেলে ত্বকে সহজে বয়সের ছাপ পড়ে না। এছাড়া বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যানসার প্রতিরোধেও সহায়তা করে।