পবিত্র কাবাঘরের ছবির ওপর হিন্দু শিবের ছবি বসিয়ে ফেসবুকে আপলোডের ঘটনার জেরে নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়ি-ঘর ও মন্দির ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবাদে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ-মানববন্ধন চলছে। মানবাধিকার সংগঠন, বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সবাই প্রতিবাদে সরব রয়েছেন। দিচ্ছেন নানা বক্তব্য-বিবৃতিও। দেশের সম্প্রতি বজায় রাখতে মন্দির ভাঙার তীব্র প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ সময়ে দাবি। অন্যায়ভাবে কারও উপর হামলা, ভিন্নধর্মী লোকদের উপাসনালয় ভাঙচুর সমর্থন করে না মানবতার ধর্ম ইসলাম। কাবাঘরের ওপর শিবের ছবি বাসানো যেমন ধর্ম অবমাননা, হিন্দুদের মন্দির ভাঙাও হিন্দুধর্ম অবমাননা।
নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দেয়ার জন্য যারা মন্দিরে হামলা করেছেন, তাদের সম্পর্কে ইসলাম কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। নবী মুহাম্মদ সা. বলেছেন, যারা মানুষকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে ডাকে, যারা সাম্প্রদায়িকতার জন্য যুদ্ধ করে এবং সাম্প্রদায়িকতার জন্য জীবন উৎসর্গ করে তারা আমাদের সমাজভুক্ত নয়। [আবু দাউদ. হাদিস : ৫১২৩]
বর্তমানে অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলে মন্দির ভাঙার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন সুশীলসমাজ ও বুদ্ধিজীবীরা। তারা বক্তব্য দিচ্ছেন, লিখছেন কলামও। সাম্প্রদায়িক উস্কানির বিরুদ্ধে কলম ধরে সমাজের মানুষকে সোচ্চার করে তোলা এক প্রকারের দেশপ্রেম। তবে, সুশীলসমাজে মন্দির ভাঙা নিয়ে কলম ধরলেও পবিত্র কাবাঘরের বিকৃতি নিয়ে কোনো লেখা পাওয়া কি গেছে আদৌ? হয়তো এমন কোনো ঘটনাই ঘটতো না যদি ‘রজরাস দাস’ তার ফেসবুকে কাবাঘরের বিকৃত ছবি প্রকাশ না করত।
এঘটনার পর দুর্বৃত্তকরীরা মন্দিরে হমলা করেছে যা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে শুধুমাত্র সেই শ্রেণি উপকৃত হলো, যারা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। তবে, লক্ষ্য রাখতে হবে মন্দির ভাঙার পরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কয়েকটি মাদরাসার সামনে কাবাঘরের ওপর শিবের ছবি সম্বলিত পোস্টার টানানোর কথা। ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি, দুর্বৃত্তকারীরা গত ৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ভোরে আবার হিন্দুদের মন্দিরে হামলা চালায়। ধারাবাহিকতায় শনিবার নাসিরনগরে বিতুই গ্রামে একটি ‘মসজিদ’ থেকে হিন্দুদের মূর্তি উদ্ধারও করা হয়! এতেকরে মসজিদ-মন্দির উভয়ের অপমান হচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতার ভয়াবহতা আরও তীব্র আকার ধারণ করছে।
হাদিসে আছে ‘কেউ যদি নিরীহ মুসলিম বা সংখ্যালঘুদের নির্যাতন বা হয়রানি করে, কষ্ট দেয় তাহলে বেহেশত তো দূরের কথা, বেহেশতের গন্ধও পাবে না তারা।’ আর কোথাও অন্যায়-অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে দেখেও যখন কেউ চুপ করে থাকে তাহলে তাদেরকে বোবা শয়তান বলা হয়। সুতরাং আমাদের উচিত মসজিদ-মন্দিরের পবিত্রতা রক্ষায় সোচ্চার হওয়া। একইসঙ্গে প্রতিবাদ করা। সমাজের সাম্প্রদায়িকতা উস্কে না দিয়ে ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখার চেষ্টা করা।