রাজশাহী ও কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: বিহারের বন্যার কারণে ভারত ফারাক্কা বাঁধের সবগুলো গেইট খুলে দেয়ায় রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার পানির উচ্চতা আরও ৯ সেন্টিমিটার বেড়েছে। বর্তমানে ১৮ দশমিক ২৬ মিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বিপৎসীমার (১৮ দশমিক ৫০) মাত্র ২৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মার পানি।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, যে দ্রুত গতিতে পানি বাড়ছে তাতে শনিবার রাতেই পানি বিপদসীমা স্পর্শ করতে পারে। হঠাৎ করেই পানি বাড়তে থাকায় নগরীর মানুষের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
শুক্রবার নগরীর কুমারপাড়া, বড়কুঠি, পুলিশ লাইন্স ও জিয়ানগর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মার পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। মধ্যচরের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। সামান্য কিছু কাঁশবন মাথা উচু করে জানান দিচ্ছে এখানে এক সপ্তাহ আগেও মধ্যচর বলে কিছু ছিল। গত শুষ্ক মৌসুমে মধ্যচরে যেসব বাড়ি করে দেয়া হয়েছিল সেগুলোর চালা ছাড়া সবই ডুবে গেছে পানিতে। শহররক্ষা বাঁধের প্রায় সমান উচ্চতা নিয়েই পানি বয়ে যাচ্ছে। এতে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে শহরের বুলনপুর পুলিশ লাইন্স, সোনাইকান্দি, বেড়পাড়া এবং নবগঙ্গা এলাকা।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘পুলিশ লাইন্সের সামনের এলাকাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবুও পানি উন্নয়ন বোর্ড অবহেলা করে তারা সঠিক সময়ে সংস্কার কাজ শুরু করেনি। পদ্মায় পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে যেকোনো সময় পুলিশ লাইন্সের সামনের বাঁধসহ সোনাইকান্দি, বেড়পাড়া, নবগঙ্গা এলাকার শহর রক্ষা বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে ভাঙন দেখা দিতে পারে। এসব এলাকায় ভাঙন দেখা দিলে পুরো রাজশাহী শহর পানিতে তলিয়ে যাবে। কারণ শহর রক্ষা বাঁধের চেয়ে রাজশাহী শহর নিচু। বর্তমানের শহরের লেবেলের চেয়ে পানি উঁচুতে প্রবাহিত হচ্ছে।’
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার থেকে পদ্মায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত সোমবার পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ৭৬ মিটার। এর পরদিন গত মঙ্গলবার ১৭ দশমিক ৯৪ মিটার, বুধবার ১৮ দশমিক ১০ মিটার, বৃহস্পতিবার পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয় ১৮ দশমিক ১৭ মিটার। শুক্রবার আরও ৯ সেন্টিমিটার বেড়ে পানির উচ্চতা হয়েছে ১৮ দশমিক ২৬ মিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়েবসাইট ফ্লাড ফোরকাস্টিং অ্যান্ড ওয়ারনিং সেন্টার (এফএফডব্লিউসি) পূর্বাভাস বলছে, শনিবার সকাল ৬টায় পানির উচ্চতা থাকবে ১৮ দশমিক ৩৭ মিটার, রোববার ১৮ দশমিক ৪৬ এবং সোমবার বিপৎসীমা ছাড়িয়ে পানি প্রবাহিত হবে ১৮ দশমিক ৫৪ মিটারের ওপর দিয়ে।
তবে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানিবিজ্ঞান প্রকৌশল বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এসএম আলী মর্ত্তুজা বলেন, ‘পানি যে গতিতে বাড়ছে তাতে মনে হচ্ছে শনিবার রাতেই বিপৎসীমা স্পর্শ করবে। সেক্ষেত্রে যদি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা বাঁধে কোনো গর্ত থাকে তখন শহরে পানি প্রবেশ করতে পারে। তবে যমুনায় পানি কম থাকায় ভয়ের কিছু নেই। আশা করা হচ্ছে খুব শিগগিরই পানি কমে যাবে।’
আমাদের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, পদ্মা নদীর ওপর হার্ডিঞ্জ সেতু এলাকায় পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। প্রতি তিন ঘণ্টায় দুই সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
এদিকে, হঠাৎ করে পদ্মায় পানি বাড়ায় দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ও রামকৃষ্ণ ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নৈমূল হক বলেন, ‘যে গতিতে পানি বাড়ছে তাতে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। আমাদের টিমের সদস্যরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন।’
তিনি আরও জানান, ভারত ফারাক্কা বাঁধের দরজা খুলে দিয়েছে। এতে পদ্মায় পানি বেড়ে যাচ্ছে। পানি বৃদ্ধি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদীর এ পয়েন্টে পানির বিপৎসীমা হচ্ছে ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। সেখানে শুক্রবার বেলা ১২টায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১৪ দশমিক ৬ সেন্টিমিটারে।
এর আগে ১৮ আগস্ট এ পানির মাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার। ১৯ আগস্ট ছিল ১৩ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার। ২৫ আগস্ট ছিল ১৩ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার। প্রতি তিন ঘণ্টায় ২ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে।
দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহম্মেদ জানান, পদ্মায় আকস্মিক পানি বাড়ায় চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে করে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুজিব-উল-ফেরদৌস বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের পুরো বিষয়ের ওপর নজর রাখতে বলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে চিলমারী ইউনিয়নে ছয় টন চাল দেয়া হয়েছে। এছাড়া আমাদের পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রস্তত আছে। ইউএনওরা প্রতিবেদন দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ সমকাল