স্তন ক্যান্সার দ্রুত শনাক্তকরণে করণীয়
স্বাস্থ্য ডেস্ক : সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারজনতি কারণে নারী মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ ‘স্তন ক্যান্সার’ এবং দুঃখজনক হলেও সত্যি এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। বলা হয়ে থাকে ‘প্রতি ৯ জনের মধ্যে ১ জন’ নারী তার জীবদ্দশায় এই মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। বিপজ্জনক হলেও সত্যি যে, ‘স্তন বা Breast ক্যান্সার’ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা সম্ভব হলে তা সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে প্রায় সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য।
দ্রুত / পূর্ব শনাক্তকরণ জীবন বাঁচায় : দ্রুততম সময়ে ও সঠিকভাবে ‘স্তন ক্যান্সার’ শনাক্তকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা যত প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার নির্ণয় করা যাবে এবং যত দ্রুত রোগীকে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া যাবে, ততই রোগীর রোগমুক্ত ও সুদীর্ঘ জীবনের সম্ভাবনা বাড়বে। কিন্তু এজন্য প্রয়োজন সচেতন হওয়া ও স্তন ক্যান্সার এর উপসর্গ ও চিকিৎসার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সঠিক ধারণা থাকা।
করণীয় কি : নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করা (Self Breast Examination) ঃ ২০ বছর বয়সের পর থেকে প্রত্যেক নারীর উচিত নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করা। যাদের নিয়মিত মাসিক হয় তারা প্রতি মাসে মাসিক শেষে এবং যাদের অনিয়মিত মাসিক হয় বা যারা ঋতুজরা (Post menopausal) তারা প্রতি মাসের একটি নির্দিষ্ট তারিখে পরীক্ষা করবেন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাত দুটো প্রথমে দুই পাশে এবং কোমরে রেখে ও পরে মাথায় উপর উঠিয়ে স্তনে কোনো পরিবর্তন আছে কিনা (যেমন- আকার পরিবর্তন, চামড়ায় টোল, নিপল ভিতরে ঢুকে যাওয়া, বগলে চাকা ইত্যাদি) দেখতে হবে।
পরে শোয়া অবস্থায় ডান হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে বাম স্তন ও বাম হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে ডান স্তনে কোন চাকা আছে কিনা তা দেখতে হবে। পুরো প্রক্রিয়াটি একজন ব্রেস্ট সার্জন বা চিকিৎসক বা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীর কাছ থেকে শিখে নিন।
চিকিৎসক দ্বারা স্তন পরীক্ষা (Clinical Breast Examination) : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা স্তন পরীক্ষা করান। ২০-৪০ বছর পর্যন্ত তিন বছরে অন্তত একবার। ৪০ ঊর্ধ্ব মহিলাদের জন্য বছরে অন্তত একবার।
ইমেজিং মেমোগ্রাফি : ৪০ বছর বয়সের পর বছরে অন্তত একবার (বিশেষ করে যারা অতিরিক্ত ঝুঁকিতে আছেন, যেমন স্তন বা Ovary ক্যান্সার পারিবারিক ইতিহাস আছে এমন)। ৬০ ঊর্ধ্ব বয়সের জন্য তিন বছর অন্তর একবার। আল্ট্রাসনোগ্রাফি (Ultrasonography) সারধণত ৩৫ বছরের কম বয়স্ক নারীদের করা হয়। এমআরআই (MRI) : অল্প বয়সী রোগীর পাবািরিক ইতিহাস থাকলে। ইমপ্ল্যান্ট থাকলে। নির্দিষ্ট প্রকার (Lobular Carcinoma) স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ে।
বায়োপসি (Biopsy) বা এফএনএসি (FNAC)
1. Biopsy : চামড়ায় ছোট করে কেটে যন্ত্রের মাধ্যমে কয়েকটি মাংসের টুকরা নিয়ে পরীক্ষা করে ক্যান্সার রোগ নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা সম্ভব। এই পদ্ধতি এখন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।
2. FNAC : সুঁইয়ের মাধ্যমে রস নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে রোগ নির্ণয় সম্ভব হয় না। স্তনে চাকা হওয়া মানেই তা ক্যান্সার এমন নয়। তবে স্তনে চাকা বা পিণ্ড অনুভূত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষ করে যারা স্তন ক্যান্সারের বেশি ঝুঁকিতে আছেন। তাই এসব বিষয় নিয়ে অবহেলা না করে আমাদের যথেষ্ঠ সচেতন হতে হবে। সূত্র: বিডি-প্রতিদিন
ডা. আফরিন সুলতানা, সার্জারি বিশেষজ্ঞ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।