শনিবার, ১০ই নভেম্বর, ২০১৮ ইং ২৬শে কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

রোগ-ব্যাধির যম তুলসী

অনলাইন ডেস্ক : বাড়িতে একটি তুলসী গাছ আপনাকে শত রকমের রোগ-ব্যাধি থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করবে। তুলসী অত্যন্ত উচ্চমাত্রার একটি ঔষধিগাছ। এটি সর্দি, কাশি, কৃমি ও বায়ুনাশক, হজমকারক ও এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও আছে আরও নানা ব্যবহার।

তুলসী পরিচিতি
তুলসী এর ইংরেজি নাম Holy basil এবং বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Ocimum basilicum Linn. তুলসী সাধারণত একটি ঘন শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট ২-৪ ফুট উঁচু ছোট গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এর পাতা ১-৩ ইঞ্চি লম্বা হয়। পাতার কিনারা খাঁজকাটা, শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগ হতে ৫টি পুষ্পদন্ড বের হয় ও প্রতিটি পুষ্পদন্ডের চারদিকে ছাতা আকৃতির ১০-২০ টি স্তরে ফুল থাকে। প্রতিটি স্তরে ৬টি করে ছোট ফুল ফোটে। বীজ থেকেই তুলসী গাছ জন্মায়। সারাবছর এর পাতা সংগ্রহ করা যায়। তুলসী বিভিন্ন রকম ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া ও ফাংগাস থেকে শরীরকে রক্ষা করে। পাতা কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া যায়। অনেকে বেটে রসটা খান। তুলসী পাতার চা বেশ সুস্বাদু।

সাদা তুলসী গাছটাই সাধারণত চোখে পড়ে, তবে কালো তুলসী গাছও আছে যাকে বলা হয় কৃষ্ণ তুলসী।

তুলসী পাতার উপকারিতা:

পেট খারাপ হলে তুলসীর ১০ টা পাতা সামান্য জিরার সঙ্গে পিষে ৩-৪ বার খান৷ সমস্যা চলে যাবে। অর্থাৎ, বারবার টয়লেটে যাওয়া বন্ধ হবে।

জ্বর হলে পানির মধ্যে তুলসী পাতা, গোল মরিচ এবং মিছরি মিশিয়ে ভাল করে সিদ্ধ করুন৷ অথবা তিনটি দ্রব্য মিশিয়ে বড়ি তৈরি করুন৷ দিনের মধ্যে তিন-চার বার ওই বড়িটা পানির সঙ্গে খান৷ জ্বর খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে৷

কাশি যদি না কমে সেই ক্ষেত্রে তুলসী পাতা এবং আদা পিষে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খান৷ দ্রুত উপশম হবে।

ডায়রিয়া হলে ১০ থেকে বারোটি পাতা পিষে রস খেয়ে ফেলুন।

শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগান, এতে জ্বালাপোড়া কমে যাবে। পোড়া জায়গাটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে এবং পোড়া দাগ ওঠে যাবে।

বমি কিংবা মাথা ঘুরলে তুলসী পাতার রসের মধ্যে গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যাবে।

সকালবেলা খালি পেটে তুলসী পাতা চিবিয়ে রস পান করলে খাবার রুচি বাড়ে।

চোখের সমস্যা দূর করতে রাতে কয়েকটি তুলসী পাতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে ওই পানি দিয়ে সকালে চোখ ধুয়ে ফেলুন।

মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দিনে ৪-৫ বার তুলসী পাতা চিবান৷

ত্বকের চমক বাড়ানোর জন্য, ত্বকের বলিরেখা এবং ব্রন দূর করার জন্য তুলসী পাতা পিষে মুখে লাগান৷

বুদ্ধি এবং স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন ৫-৭ টা তুলসী পাতা চিবান৷

প্রস্রাবে জ্বালা-পোড়া হলে তুলসী পাতার রস ২৫০ মিলি দুধ অথবা ১৫০ মিলি পানির সঙ্গে মিশিয়ে পান করুন৷

তুলসী মূল শুক্র গাঢ় কারক। তুলসী পাতার ক্বাথ, এলাচ গুঁড়া এবং এক তোলা পরিমাণ মিছরি পান করলে শুক্রানু শক্তিশালী হয়। এটি অত্যন্ত ইন্দ্রিয় উত্তেজক। প্রতিদিন এক ইঞ্চি পরিমাণ তুলসী গাছের শিকড় পানের সাথে খেলে যৌনদুর্বলতা দূর হয়।

রক্ত দূষিত হলে কালো তুলসী পাতার রস কিছুদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।

তুলসী পাতা দিয়ে চায়ের মত করে খেলে অনেক রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। তুলসী চা হিসাবেও এটি বেশ জনপ্রিয়।

তুলসি পাতার রসে লবন মিশিয়ে দাদে লাগালে উপশম হয়।

তুলসীর বীজ পানিতে ভিজালে পিচ্ছিল হয়। এই পানিতে চিনি মিশিয়ে শরবতের মত করে খেলে প্রস্রাবজনিত জ্বালা উপশম হয়।

মুখে বসন্তের কালো দাগে তুলসীর রস মাখলে দাগ মিলিয়ে যায়। হামের পর যে সব শিশুর শরীরে কালো দাগ হয়ে যায়, তুলসী পাতার রস মাখলে গায়ে স্বাভাবিক রং ফিরে আসে।

তুলসী পাতা কিডনীর বেশ কিছু রোগের সমাধান করে দিতে পারে। তুলসী পাতার রস প্রতিদিন পান করলে কিডনীতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। যদি কিডনীতে পাথর হয় তবে তুলসী পাতার রস টানা ৬ মাস পান করলে পাথর মূত্রের সঙ্গে বেরিয়ে যায়।

সামান্য গরম পানিতে তুলসী পাতা দিয়ে সিদ্ধ করে নিয়ে, সেই পানি দিয়ে গার্গল করলে গলার ব্যাথা দ্রুত সেরে যাবে।

তুলসী পাতা হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ায় ও এর স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

মাথা ব্যাথা ও শরীর ব্যাথা কমাতে তুলসী খুবই উপকারী।

পোকার কামড়ে আক্রান্ত স্থানে তুলসী পাতার তাজা রস লাগিয়ে রাখলে ব্যাথা ও জ্বলা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যায়।

চর্বিজনিত হৃদরোগে এন্টি অক্সিডেন্টের ভূমিকা পালন করে তুলসী।

তুলসীর অ্যালকোহলিক নির্যাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

দাঁতের রোগে উপশমকারী বলে টুথপেস্ট তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

তুলসীর ভিটামিন সি ও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। এই উপাদানগুলো নার্ভকে শান্ত করে। এছাড়াও তুলসী পাতার রস শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

ভিটামিন সি, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস ও এর এসেন্সিয়াল অয়েলগুলো চমৎকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কাজ করে যা বয়সজনিত সমস্যাগুলো কমায়। সুতরাং, আপানার জীবনকে সুস্থ-সুন্দর রাখতে বাসায় একটা তুলসী গাছ রাখুন। রোগ-ব্যধি দূরে রাখুন।