বাংলাদেশিদের অন এ্যারাইভাল ভিসা দেবে চীন
বাংলাদেশি নাগরিকেদের চীন ভ্রমনের জন্য অন এ্যারাইভাল ভিসা চালু করবে দেশটি। ঢাকা সফররত চীনা জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ও পার্টি কমিটির সম্পাদক ঝাও কেঝি এই প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।শুক্রবার (২৬ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে ঝাও কেঝি’র সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সকাল ১০টায় দুই দেশের দুই মন্ত্রীর নেতৃত্বে দুইঘন্টা ব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে তিনটি চুক্তি সাক্ষর হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এগুলো হলো আইন শৃঙ্খলা-বাহিনীর প্রশিক্ষন সহযোগিতা চুক্তি, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে সহযোগিতা চুক্তি ও পুলিশ বিভাগের জন্য অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ চুক্তি।তিনি বলেন, বাংলাদেশি নাগরিকদের এখন থেকে যাতে চীনে ভ্রমনে যাওয়ার আগে দেশ থেকে ভিসা না নিলেও চলে এজন্য অন এ্যারাইভাল ভিসা চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন চীনা স্বরাষ্ট্র ও জননিরাপত্তা মন্ত্রী। এখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। তারপর চুক্তি সাক্ষর হবে।
বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু, জননিরাপত্তা, আঞ্চলিক শান্তি ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো, সন্ত্রাসবাদ দমনে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও প্রশিক্ষণ, সাইবার অপরাধ, মানি লন্ডারিং নিয়েও দু’দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব বিষয়ে জয়েন্ট ওয়াকিং গ্রুপ গঠনেও রাজী হয় দুই দেশ।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের আমাদের দেশে থাকা ‘মিয়ানমারের নাগরিক’দের দ্রুত সময়ে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানিয়েছি। তারাও স্বীকার করেছে ১ মিলিয়ন ‘মিয়ানমারের নাগরিক এখানে থাকায় বাংলাদেশ সমস্যায় পড়েছে।’ স্বল্প সময়ে বাংলাদেশ এতো সংখ্যক মানুষকে আশ্রয় দেওয়ায় তারা বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে।
‘তারা বলেছে দ্রুত সময়ের মধ্যে রোগিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফেরত যাবে। এজন্য চীন কার্যকর উদ্যোগ নেবে। মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে সাক্ষরিত চুক্তিগুলো যাতে মিয়ানমার যথাযথ ভাবে পালন করে সে বিষয়েও কার্যকর উদ্যোগ নেবে বলে বৈঠকে জানিয়েছে চীন –বলেন কামাল।তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আয়োজিত বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। তবে তারা বিশ্বাস করে রোহিঙ্গারা দ্রুত তাদের ভিটেমাটিতে ফিরে যাবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমার আজ চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি ও তিনটি চুক্তি সাক্ষর করেছি। আমরা তাদের ভিসা সহজ করতে বলেছি। জবাবে তারা অনএ্যারাইভাল ভিসা চালুর প্রস্তাব দিয়েছে। তারা সমস্যা বুঝতে পেরেছে।আমরা ট্রান্স ন্যাশনাল টেরিরিজম, এন্টি টেরিরিজম, কাউন্টারটেরিজম, মাদক, হিউম্যান ট্রাফিকিং, সাইবার ক্রাইম, গোয়েন্দা তথ্য আদান প্রদান, প্রশিক্ষন নিয়েও কথা বলেছি বলেন কামাল।
তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষন দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।চীনের জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী তিন দিনের সফরে বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসেন। চীনের এই মন্ত্রী চলতি মাসে ভারত ও মিয়ানমার সফর করেন।এর আগে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে চীনের জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী সচিবালয়ে উপস্থিত হলে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।
লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয় চীনের মন্ত্রীকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাঙ্গণে অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একটি দলের সালাম গ্রহণ করেন ঝাও কেঝি।বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও অধীন সংস্থাপ্রধানরা উপস্থিত রয়েছেন। চীনের পক্ষে রয়েছেন ঝাও কেঝির নেতৃত্বে দেশটির ২৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল।