দেশে ফিরে ভোটে অংশ নেবেন সালাহউদ্দিন
নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশে ফিরে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে চান ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। শুক্রবার শিলংয়ের আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে দেশে ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তিনি। এখন বাকি আইনগত বাধ্যবাধকতা শেষ করার প্রস্তুতি চলছে। শিগগিরই আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হতে পারে বলেও জানিয়েছেন সাবেক এই যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী। তাকে শিগগির নিজের দেশে ফেরত পাঠাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পূর্ব খাসি হিলস জেলার পুলিশ সুপার ডেভিস মারককেও এ দিন নির্দেশ দেয় আদালত। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও মেঘালয় রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এই দুই সরকারই আমাকে সর্বোচ্চ সহায়তা করেছে।’
শিলং থেকে গতকাল সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদককে ফোনে সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘আমি দ্রুত দেশে ফিরতে চাই। এখানে আইনগত কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদি খুব শিগগিরই দেশে ফিরতে পারি, তাহলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেব। আবার এখানে পূর্ণাঙ্গ রায় পেতে বিলম্ব হলে দেশে ফিরতে দেরি হবে। সে ক্ষেত্রে আমার নির্বাচনে অংশ নেওয়া অনিশ্চিত হয়ে যাবে।’ ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায় থেকে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ শুক্রবার শিলংয়ের ডিস্ট্রিক্ট অ্যান্ড সেশন জজ আদালতে বেকসুর খালাস পান। জুুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (প্রথম শ্রেণি) ডি জে খারশিং বিএনপি নেতার রায় পড়ে শোনান। এ ব্যাপারে সালাহউদ্দিনের আইনজীবী এস পি মহান্ত জানান, ‘আমার মক্কেল সমস্ত অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। কারণ তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি।’
দেশে ফেরার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, শিলংয়ের আদালত ভারত সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমাকে দেশে পাঠাতে। এখন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিএসএফের মাধ্যমে আমাকে বাংলাদেশের বর্ডার গার্ডের কাছে হস্তান্তর করতে পারে। এরপর বিজিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে পারে। পরে আইনিভাবে আমাকে মামলাগুলো মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কতগুলো মামলা তা সঠিক বলতে পারব না। তবে ৭০টির কম হবে না। বেশ কিছু মামলায় আমার বিরুদ্ধে চার্জশিটও দেওয়া হয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে অনেক মামলায়। এগুলো নিয়ে আমি ভাবছি না।’
মামলায় কিসের ভিত্তিতে খালাস পেলেন জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এটা এখনই বিস্তারিত বলা যাবে না। পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর তা বলা যাবে। তবে সংক্ষিপ্ত রায়ে যা বুঝতে পেরেছি, তা হলো আমি যে স্বেচ্ছায় ভারতে যাইনি, তা আমার আইনজীবী আদালতে প্রমাণ করতে পেরেছেন। অন্যদিকে বাদীপক্ষ থেকে স্বাক্ষ্য-প্রমাণ করতে পারেনি। আমি যে নির্দোষ তা প্রমাণে যথেষ্ট প্রমাণ আদালতে তুলে ধরা হয়।’ নিজের ইচ্ছায় সীমান্ত পেরিয়ে তিনি যে ভারতে প্রবেশ করেননি সে কথাও জানান এই বিএনপি নেতা।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি স্বেচ্ছায় ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করিনি। আমাকে পিছমোড়া করে চোখ বেঁধে শিলংয়ের একটি জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল। আদালতের রায়ও প্রমাণ করে দিয়েছে যে আমি নির্দোষ।’ আদালতের এই রায়ে স্বভাবতই খুশি সালাহউদ্দিন এ দিন আরও জানান, ‘মহান আল্লাহতায়ালাকে ধন্যবাদ। দেশবাসীর দোয়াও আমার সঙ্গে ছিল। আমি বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
বাংলাদেশে আমি যে কোনো রাজনৈতিক পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে রাজি আছি। বাংলাদেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করবে।’ গত ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে ঢাকার উত্তরার বাসা থেকে নিখোঁজ হন সালাহউদ্দিন আহমেদ। নিখোঁজ হওয়ার প্রায় দুই মাস পরে ১১ মে ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ের গল্ফ লিঙ্ক এলাকায় তার খোঁজ মেলে। কিন্তু ভারতে প্রবেশের কোনো বৈধ নথি না থাকায় পরদিন ১২ মে তাকে গ্রেফতার করে মেঘালয় পুলিশ। ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ১৯৪৬ সালের ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪ ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা করা হয়।বাংলাদেশ প্রতিদিন