পুলিশ অনুমতি ছাড়া ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করতে পারবেন না
নিউজ ডেস্ক।। সম্প্রতি রাজধানীর রামপুরা চেকপোস্টে কয়েকজন পুলিশ সদস্যের হাতে এক নারী হয়রানির ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় সমাজে তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ভিডিওটি আপলোড করেন এক পুলিশ সদস্য। এতে একজন নারীকে তল্লাশি না করে অপ্রাসঙ্গিক ও আজেবাজে মন্তব্য করতে শোনা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ রকম অসংবেদনশীল আচরণের জন্য পুলিশের সমালোচনা করেন সাধারণ মানুষ।
এই পেক্ষাপটে আজ শনিবার পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা বলেন ‘একজন পুলিশ কর্মকর্তা তার ইউনিট প্রধানের অফিসিয়াল অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত ধারণকৃত ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করতে পারবেন না। সেটি জনকল্যাণমূলক কিংবা অপারেশনাল যে ধরনের ভিডিওই হোক না কেন। যে কাউকে এ ধরনের ভিডিও আপলোড এবং শেয়ার করার আগে প্রোপার চ্যানেলে (নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায়) অনুমতি নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে পুলিশ সদস্যদের আগে থেকেই সতর্ক হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। ২-১ দিনের মধ্যে আবারও নতুন করে অফিসিয়াল আদেশ দেয়া হবে।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম-ফেসবুকে প্রায়ই ভিডিও আপলোড করতে দেখা যায়। এর কোনোটি ব্যক্তিগত ‘সুনাম’ আবার কোনোটি অন্যের ‘দুর্নাম’ ছড়ানোর জন্য।
সম্প্রতি রাজধানীর রামপুরায় পুলিশ চেকপোস্টে এক তরুণীকে হয়রানি এবং সেই ভিডিও পোস্ট করায় তীব্র সমালোচনায় পড়ে পুলিশ। তদন্ত শুরু হয় অভিযুক্ত পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে।
তবে এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগেও পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে দিয়ে সুনাম অর্জনের চেষ্টা করেছে। তবে এবারের ঘটনা নাড়া দিয়েছে গোটা বাহিনীকে। এর স্থায়ী সমাধান হিসেবে পুলিশ সদস্যদের ফেসবুক ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা হচ্ছে। ফেসবুকে কোনো ভিডিও আপলোড করতে হলে ঊর্ধ্বতন অফিসার অথবা ইউনিট প্রধানের অনুমতি লাগবে।
এ ঘটনায় রামপুরা থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ইকবাল হোসেন ও মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের (পিওএম) চার কনস্টেবল রকিবুল, জিতু, তৌহিদুল ও মিজানুরকে শনাক্ত করে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। পাশাপাশি দায়িত্ব থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে টিম লিডার এএসআই ইকবাল হোসেনকে।
এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘যে এ ভিডিওটি ধারণ করে ফেসবুকে আপলোড করেছেন তিনিও পুলিশেরই সদস্য। তিনি ভেবেছিলেন ওই ভিডিওটা প্রকাশ করলে তার হয়তো সুনাম হবে।’
তবে ‘সুনাম অর্জনের’ জন্য পুলিশের এ ধরনের কাজকর্ম এটাই প্রথম নয়। চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুর ১৩ নম্বরে স্কলাস্টিকা স্কুলের সামনে পুলিশের প্রতি ‘সরকারদলীয় এমপির মেয়ে’ দাবি করা এক নারীর আগ্রাসী আচরণের ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করেন ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট ঝোটন সিকদার। ভিডিওটি দেখে অনেকেই ওই নারীকে নিয়ে কটূক্তি করেন। তবে ভিডিওটিতে নারীর অসদাচরণের আগের কোনো চিত্র ছিল না। ঘটনার প্রেক্ষাপটটিও উল্লেখ করা হয়নি ভিডিওতে।
এ ছাড়া চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের সামনে গাড়িতে চড়ে উল্টোপথে ফিরছিলেন একজন সাংবাদিক নেতা ৷ সার্জেন্ট কাওসার হামিদ গাড়িটি আটকে দিলে তার সঙ্গে ওই সাংবাদিক নেতার কথা কাটাকাটি হয়। সেটি এক প্রত্যক্ষদর্শী ভিডিও করে ফেসবুকে দিয়েছিলেন। ভিডিওটি দেখে অনেকেই সাংবাদিক নেতা ও সাংবাদিকদের তীব্র সমালোচনা করেন। উৎস : জনকণ্ঠ