রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার ভূমিকা কি?
ভারতীয় নায়িকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে নিয়ে রাষ্ট্রপতির মন্তব্যে অবাক এবং ক্ষুব্ধ হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
আজ মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) আসিফ নজরুল তার ফেসবুক পেইজে প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে রাষ্ট্রপতির হাস্যরসের বিষয়ে বেশ কিছু মন্তব্য করেছেন। বিডি২৪লাইভের পাঠকদের জন্য তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো:-
ভারতীয় নায়িকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে নিয়ে রাষ্ট্রপতির মন্তব্যে আমি অবাক এবং ক্ষুব্ধ। প্রিয়াঙ্কা এদেশে এসেছিলেন ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে। আমাদের রাষ্ট্রপতির সেটা মনে রেখে তার উদাহরণ মানুষকে অনুসরণ করতে বলা উচিত ছিল। তিনি বরং নায়িকা হিসেবে প্রিয়াঙ্কার প্রতি একধরনের মানুষের যে সুপ্ত আকর্ষণ রয়েছে সেদিকে সুড়সুড়ি দিয়ে তাকে নিয়ে অশ্লীল ও আপত্তিকর কথা বলেছেন।
আমি মনে করি, রাষ্ট্রপতির কাজ মানুষকে যা তা বলে হাসানো না। সস্তা রসিকতা করার সময় তার দিকে ছাত্র-ছাত্রীদের আমি শ্রদ্ধা নিয়ে তাকাতে দেখি না, বরং মনে হয় কোন কৌতুক অভিনেতার কথা শোনার সময় মানুষের যে অভিব্যক্তি হয় সেভাবে তাকিয়ে থাকে তার দিকে তারা।
আর সত্যি বলতে কি তার কোনো কথাবার্তা আমার এখন আর মূল্যবান ও অর্থবহ মনে হয় না। তিনি স্পিকার থাকার সময় মোটামুটি নিরপেক্ষভাবে সংসদ পরিচালনা করতেন, বহু মানুষের মতো আমিও তাকে শ্রদ্ধা করতাম। কিন্তু রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার ভূমিকা কি? আজ পর্যন্ত একটা কালো আইন তিনি স্বাক্ষর না করে ফিরিয়ে দিয়েছেন? আজ পর্যন্ত কোথাও কোন ভাষণে তিনি সরকারের প্রতি অভিভাবক সুলভ নির্দেশনা দিয়েছেন? কোন ক্রান্তিকালে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করার মতো কিছু করেছেন, কোনোদিন কোন একটা রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছেন?
তার এখনকার কথাবার্তা শুনে হয় উনার প্রধান কাজ হচ্ছে যুবসমাজকে কিছু সস্তা বিনোদন বিতরণ করা। আমার মনে হয় না রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তির কাছে এটা আমাদের চাওয়া হতে পারে।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে চুপ করে বসে থাকবেন, তা কিন্তু হবে না। কারণ তিনি অনেক মজার মানুষ। স্টেজে তিনি যখন বক্তব্য দেন মজার মজার কথা বলেন। তার কথা বলার স্টাইল, ধরণ ও রসিকতা উপস্থিত দর্শনার্থীদের নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করবে।
শনিবার (৬ অক্টোবর) ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তনের অনুষ্ঠান। সেখানে রাষ্ট্রপতি ছিলেন প্রধান অতিথি। নিজের বক্তব্য দেওয়ার সময় বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া প্রসঙ্গে রসিকতা করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
নিক জোনাসের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার বিয়ে প্রসঙ্গে তিনি রসিকতা করে একটি মন্তব্য করেন। রাষ্ট্রপতির মজার মন্তব্য শুনে হেসে উঠেন দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়টির নবীন গ্র্যাজুয়েটরা।
এ সময় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেন, ‘কিছুদিন আগে প্রিয়াঙ্কা দেশে এসেছিল। বাংলাদেশে দেশের বাইরে থেকে যতো রাষ্ট্রপতি, গণ্যমান্য ব্যক্তি আসেন তাদের সবাই শেষ দেখা করতে আসেন গণভবনে। প্রিয়াঙ্কা যেদিন আসবে তার আগের দিন আমার স্ত্রীকে বললাম এবার তো প্রিয়াঙ্কা চোপড়া আসবে। তারপর আর প্রিয়াঙ্কা আসলো না। পরে শুনেছি, আমার স্ত্রী নাকি টেলিফোন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলেছে, প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার বঙ্গভবনে আসার কী দরকার!’
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘প্রিয়াঙ্কা যাওয়ার কিছুদিন পরই জানতে পারলাম প্রিয়াঙ্কা নাকি আমেরিকা গিয়ে তার চেয়ে বয়সে ১০-১২ বছরের ছোট নিক না কি জানি নাম এক ছেলেকে বিয়ে করেছে। এখন আমি তো তার ৩০ বছরের বড়। সে যদি ১০ বছর নিচে নামতে পারে তাহলে ৩০ বছরের উপরেও তো সে উঠতে পারতো। এ ধরনের একটা সুযোগ নষ্ট করে তো সে ঠিক করে নাই!’
রাষ্ট্রপতি নিছক মজা করেই এই মন্তব্য করেন। তার এই বক্তব্য শুনে হাসির রোল উঠে ছাত্র-ছাত্রীদের ভেতর। তার বক্তব্যের ভিডিওটিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এই বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপতির রসবোধেরও প্রশংসা করছেন সবাই।
সূত্র: বিডি২৪লাইভ