মোদির সামনে জোড়া বিপদ
অনলাইন ডেস্ক : হয়তো একেই বলে ‘বোঝার ওপর শাকের আঁটি’ অথবা ‘গোদের ওপর বিষফোঁড়া’। রাফায়েল নিয়ে জেরবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নতুন চিন্তা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরকে ঘিরে। যৌন নির্যাতনের একের পর অভিযোগ যাঁকে ঘিরে আবর্তিত, সেই আকবরকে তিনি ইস্তফা দিতে বলবেন কি না, আপাতত সেই জল্পনায় মশগুল ভারতের রাজনীতি।
আর, এই জল্পনার মধ্যেই রাফায়েল নিয়ে নতুন করে চাপ সৃষ্টি করলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। ফরাসি প্রচার মাধ্যম নতুন তথ্য জানানোর পর বৃহস্পতিবার রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন ডেকে তিনি আরও একবার বললেন, ‘আমি আবারও বলছি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিগ্রস্ত। দুর্ভাগ্যের বিষয় এটাই যে, নির্বাচনের আগে এই মানুষটাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা বলেছিলেন। আপনাদের নন, উনি আসলে অনিল আম্বানির প্রধানমন্ত্রী।’
নাইজেরিয়া থেকে আকবরের দেশে ফেরার কথা চলতি সপ্তাহে। তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের অভিযোগকারীরা সবাই প্রতিষ্ঠিত নারী সাংবাদিক। এখনো পর্যন্ত অভিযোগকারীর সংখ্যা আট। একটি অভিযোগের জবাবও আকবরের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। অভিযোগ নিয়ে কোনো প্রশ্নের জবাবও দেননি কোনো বিজেপি মন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ মৌন থেকেছেন। বৃহস্পতিবার প্রশ্ন এড়ালেন বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্রও। তবে কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ও তাঁর আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, যে সাহসী নারীরা নির্যাতন নিয়ে এগিয়ে এসেছেন, মুখ খুলেছেন, তাঁদের পাশে তাঁরা রয়েছেন। হুইসিল ব্লোয়ারদের লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আকবরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে যদিও তাদের বক্তব্য, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরই উচিত অভিযোগের জবাব দেওয়া।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি এখনো দেয়নি। মন্ত্রণালয়ের সূত্রের খবর, অভিযোগগুলো একান্তই ব্যক্তিগত। জবাব দেওয়ার মালিকও মন্ত্রী নিজে। তাঁকেই নাকি বলা হয়েছে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে।
বিরোধী কংগ্রেস ও বামপন্থীরা আগেই আকবরের ইস্তফা দাবি করেছে। বৃহস্পতিবার বিজেপির শরিকদের মধ্য থেকেও আকবরকে বরখাস্ত করার দাবি উঠল। শিবসেনা বলেছে, এতগুলো অভিযোগের পর আকবরের পদে থাকার কোনো অধিকারই নেই। যে দল ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’য়ের স্লোগান দেয়, তাদের উচিত মন্ত্রীকে বরখাস্ত করা। বিজেপির সাবেক সঙ্গী তেলেগু দেশম পার্টিও জানিয়েছে, সরকার এখনো কেন চুপ তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। আকবর মন্ত্রী থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।
একই দাবি এমআইএম নেতা আসাউদ্দিন ওয়াইসির। তাঁর বক্তব্য, সংসদে যিনি তিন তালাক বিল সমর্থন করেন তাঁর মন্ত্রী থাকার অধিকার নেই।
রাফায়েলের মোকাবিলায় ব্যস্ত বিজেপি আচমকা এই নতুন অভিযোগে আরও জেরবার। রাফায়েল নিয়ে নতুন তথ্য বিরোধীদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। বলেছিলেন, অনিল আম্বানির কোম্পানিকে বরাত দেওয়ার বিষয়টি দাসল্ট-এর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সুপারিশটা ছিল ভারত সরকারের। তাদের কিছু করার ছিল না। প্রায় সেই সুরেই কথা বলেছেন দাসল্টের এক কর্তা লয়েক সিগালেঁ। ফ্রান্সের সংবাদ মাধ্যম মিডিয়া পার্ট-এর খবর অনুযায়ী, ওই কর্তা গত বছর এক অনুষ্ঠানে দাসল্টের কর্তাদের কাছে ব্যাখ্যা করে জানিয়েছিলেন, অনিল আম্বানির কোম্পানিকে ৩০ হাজার কোটি রুপির অফসেট চুক্তির বরাত ছিল মূল চুক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে ‘বাধ্যতামূলক’। দাসল্টের কাছে তা মেনে নেওয়া ছাড়া বিকল্প ছিল না।
বুধবার এ খবর প্রচারিত হওয়ার দিনেই ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ফ্রান্স সফরে যান। তিনি দাসল্ট সংস্থাতেও যাবেন এবং রাফায়েল চুক্তির অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেবেন। সেই দিনেই ভারতের সর্বোচ্চ আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেন, রাফায়েল চুক্তির পদ্ধতিগত বিষয়গুলো মুখ বন্ধ খামে ২৯ অক্টোবরের মধ্যে জমা দিতে। সুপ্রিম কোর্টে এই নির্দেশ, নির্মলা সীতারামনের ফ্রান্স সফর এবং ফরাসি সংবাদ মাধ্যমের দেওয়া নতুন তথ্য রাহুল গান্ধীকে উৎসাহিত করে নতুনভাবে আক্রমণ শানাতে। রাহুলের প্রশ্ন, ‘প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুট করে ফ্রান্স উড়ে গেলেন। তিনি দাসল্টেও যাবেন। হঠাৎ কী এমন জরুরি কাজ এল যে প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে ফ্রান্সে পাঠাতে হচ্ছে? দুর্নীতি চাপা দিতে দাসল্টের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে?’
স্পষ্টতই, মোদি সরকারের পক্ষে এটা মোটেই সুসময় নয়।