বুধবার, ১০ই অক্টোবর, ২০১৮ ইং ২৫শে আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

ইতালিতে নতুন অভিবাসী বিরোধী আইন নিয়ে দুশ্চিন্তায় বাংলাদেশিরা

ইতালি প্রতিনিধি: ইতালিতে সরকারের মন্ত্রী পরিষদে অনুমোদিত নতুন অভিবাসী বিরোধী আইনে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করায় চিন্তায় পরেছে ইতালিতে বসবাসরত বৈধ-অবৈধ হাজার হাজার বাংলাদেশি। যৌন হয়রানি, সন্ত্রাসবাদ, মানবপাচার ও মাদক চক্রের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের এ আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। ফলে এতে অভিবাসীরা চরম বিপাকে পড়তে পারেন।

বর্তমানে দেশটিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ব্যাপক জোরদার করা হয়েছে। ২৪ সেপ্টেম্বর আইনটি অনুমোদন করেছে দেশটির মন্ত্রিপরিষদ। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি সেরজো মাতারেল্লা স্বাক্ষর করার পর তা কার্যকর করা হয়।

এছাড়া যে কোন ছোট অপরাধের কারণে বৈধতা হারাতে পারেন বাংলাদেশি অভিবাসীরা। বেশ কয়েক বছর যাবৎ ইতালিতে অভিবাসী সমস্যা চলছে। চলমান এ অভিবাসী সমস্যা সমাধান করতে বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাই অভিবাসীদের নতুন আইনের আওতায় এনে অপরাধ কমানোর চেষ্টা চলছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এই সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে- আইন প্রণয়ন করে ইতালির সকল রোম ক্যাম্প বন্ধ করা। ব্যক্তি ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা।

নতুন আইন প্রসঙ্গে ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত আব্দুস সোবহান সিকদার বলেন, সালভিনির আইনটি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। অবৈধদের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশিদের জন্য খুব একটা সমস্যা হবে না কারণ ইতালিতে বসবাসরত বাংলাদেশিরা বেশিরভাগ বৈধ। ইতালি অভিবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশিদের অবস্থান অষ্টম। এর মধ্যে ২০১৬ সালে বাংলদেশিদের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার। ২০১৭ সালে কমে গিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ২৫ হাজার।

তাই এখন কোন বাংলাদেশির বৈধতা পেতে সমস্যা নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ আইন বাংলাদেশিদের চিন্তার কোন কারণ হতে পারে না। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি একটি টেলিভিশনে স্বাক্ষাতকারে বলেন, ইতালি অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে আছে। তাই ঋণ কমাতে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ অনেক ক্ষেত্র থেকে অর্থনৈতিক চাপ কমিয়ে আনা হয়েছে। ফলে দেশ আস্তে আস্তে ঋণমুক্ত হবে। ঋণমুক্ত হতে নতুন আইনে বাংলাদেশিসহ সকল অভিবাসীদের সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে আনা হবে।

এছাড়া যেসব অভিবাসী এর আগে ইতালিতে মানবিক আশ্রয় চেয়েছে তা এখন স্বল্প আকারে বিশেষ আবেদন হিসেবে গণ্য করা হয়। সেই সঙ্গে কঠোরভাবে তদন্ত করা হবে আশ্রয় প্রার্থীদের আবেদন। একই সঙ্গে অবৈধদেরকে কঠোর হস্তে দমন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ইতালিয়ানদের কর্ম ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে অবৈধদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত প্রমাণ পেলে বাংলাদেশিরা ইতালিয়ান নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হবেন। এ ব্যাপারে সামাজিক সংগঠন ইল ধুমকেতু অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক বাংলাদেশ সমিতির সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকী বাচ্চু বলেন, নতুন আইন কার্যকর হওয়াতে বাংলাদেশি অভিবাসীরা চরম সমস্যার পড়বেন। ভবিষ্যতে আইনের ঝামেলায় অভিবাসীদের ইতালিতে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সমিতির সাবেক সভাপতি জি এম কিবরিয়া বলেন, যেভাবে আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের অধিকার আদায় করেছি ঠিক ঐ ভাবেই এই কালো আইনের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রবাসীদের এগিয়ে আসতে হবে।

অল ইউরোপীয়ান বাংলাদেশ এসোসিয়েশন আয়েবার মহাসচিব কাজী এনায়েত উল্লা ইনু বলেন, অভিবাসী বিরোধী সকল আইনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দলমত নির্বিশেষে লড়তে হবে। বিডি প্রতিদিন