বুধবার, ১০ই অক্টোবর, ২০১৮ ইং ২৫শে আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

আবার ক্ষমতায় এলে প্রতিটি বিভাগেই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়: প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার রুটিন ওয়ার্ক ছাড়া অন্য কোন কাজ করতে পারে না। কাজেই আমাদের হাতে এখন আর চিকিত্সকদের পক্ষে থেকে করা ১৬ দফা দাবি বিবেচনার সুযোগ নেই। তাই দাবিগুলো আমি রেখে দিলাম। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে যদি আমরা আবার সরকার গঠন করতে পারি, তখন এই দাবিগুলো মেনে নেব।

রবিবার বিকালে গণভবনে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) আয়োজিত ‘চিকিত্সক সম্মিলন-২০১৮’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘জনগণের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। ক্ষমতাকে আমরা হাতে নিয়েছি জনগণের সেবা করার দায়িত্ব হিসেবে। মানুষের সেবার মতো মহত্ কাজ আর হতে পারে না। নিজেরা কী পেলাম, না পেলাম সে চিন্তা করি না। চিন্তা একটাই মানুষকে কতটুকু দিতে পারলাম।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের যারা সাধারণ মানুষ, যাদের বিদেশ যাওয়ার মতো সঙ্গতি নেই। তাদের চিকিত্সা সেবাটা নিশ্চিত করা সরকার হিসেবে আমাদের দায়িত্ব কর্তব্য। মানুষ হিসেবে এটি আমাদের দায়িত্ব কর্তব্য বলে মনে করি। মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন সময় আপনারা কিছু দাবি দাওয়া করলেন, যখন বেলা শেষ। ৫ বছর মেয়াদ আমাদের পূর্ণ হয়ে গেছে। সামনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, চিকিত্সকদের দাবি করার আগেই কিন্তু অনেক কাজ আমরা আপনাদের জন্য করে দিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, চিকিত্সা শিক্ষাটা হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই বিশেষায়িত শিক্ষা বহুমুখী চিকিত্সা সেভাবে নার্সিং ট্রেনিং এগুলো আমাদের জন্য প্রয়োজন। কারণ আমাদের যারা বিত্তশালী সম্পদশালী। তারা তো একটু হাঁচি-কাশি হলেও বিদেশে চলে যেতে পারে চিকিত্সার জন্য। কিন্তু সাধারণ মানুষ তো সেই সুযোগ পায় না। বড়লোক বিত্তবানরা যাক তাতে আমাদের সিট খালি থাকবে, সাধারণ মানুষ চান্স পাবে। আমার আপত্তি নেই। কিন্তু আমার দেশের মানুষ যারা মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত যাদের বিদেশ যাওয়ার মতো সামার্থ নেই, তাদের চিকিত্সা সেবাটা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের মানুষগুলোকে ট্রেনিং দিয়ে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে চাই। মানুষের সেবা করাটা কিন্তু সর্বপ্রথম কর্তব্য। আর এখন আমাদের স্যাটেলাইট নিজস্ব হয়ে গেছে। আমরা সারা দেশে ইন্টারনেট সার্ভিস চালু করে দিয়েছি। প্রায় ৯৯ ভাগ জেলায় ইতিমধ্যে ব্রডব্যান্ড চালু হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করে দিয়েছি। সব পথেরই কিন্তু উন্নয়ন করে দিচ্ছি। কাজেই এখন আর আমাদের কেবল রাজধানীতেই শুধু থাকতে হবে তা না, সারা বাংলাদেশেই আমাদের চিকিত্সা সেবাটা নিশ্চিত করতে হবে। সেইদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন বলে আমি আশা করি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রায় ১০ বছর সম্পন্ন হতে চলল। এ দশ বছরে একটানা এবং এর আগে ছিলাম ৫ বছর। বাংলাদেশের জনগণের সেবা, জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। কারণ এটা আমি সবসময় স্মরণ করি যে, এই দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা-এটাই ছিল আমার একমাত্র চিন্তা।

প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এত চিকিত্সক নিয়োগ দিচ্ছি। ডাক্তারদের জন্য সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি, তারপরও উপজেলায় ডাক্তার পাই না। তারা উপজেলার হাসপাতালে থাকতে চান না। যে উপজেলায় ১০ জন ডাক্তার থাকার কথা সেখানে ডাক্তার পাওয়া যায় চার-পাঁচজন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সেখানে যদি ডাক্তার না থাকে, মানুষ তাহলে সেবা পাবে কীভাবে? উপজেলাসহ তৃণমূল স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ডাক্তার থাকার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, শুধু রাজধানী নয়, সারাদেশের মানুষের চিকিত্সাসেবা নিশ্চিত করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশে কোনো মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। আমরাই প্রথম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করি। এছাড়া আরো তিনটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। আবার যদি ক্ষমতায় আসতে পারি তাহলে প্রতিটি বিভাগেই একটি করে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেব। তিনি বলেন, গত ১০ বছরে চিকিত্সা সেবার অনেক উন্নতি হয়েছে। উপজেলায় যেসব হাসপাতালে ৩০ বেড ছিল সেগুলো ৫০ থেকে ১০০ বেডে উন্নীত করা হয়েছে। আগে ডিপ্লোমা পাস করে নার্স আসতো এখন গ্র্যাজুয়েট নার্স আসছে। নার্সদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা দিয়েছি।

এছাড়া প্রাইভেট হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলজেগুলো যাতে ভালোভাবে চলতে পারে, এ কারণে মেডিক্যাল ইকুইবম্যান্ট ও যন্ত্রপাতির ওপর ট্যাক্স প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন করে দিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, পদ আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি, কিন্তু সেখানে আমরা ডাক্তার পাই না। নিয়োগও আমরা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কেন এই অবহেলা মানুষের প্রতি। এটা নিশ্চিয়ই মানুষ আকাঙ্ক্ষা করে না। সেটা আমি আপনাদের ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করবো। তৃণমূলে চিকিত্সকদের আবাসন সমস্যার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর বলেন, একটা অসুবিধা আছে সেখানে, সেটা হলো- থাকার অসুবিধা। সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রতিটি উপজেলায় আমরা বহুতল বিশিষ্ট ফ্ল্যাট তৈরি করে দেব। যারাই যাবে তারা যেন ভাড়া থাকতে পারেন।

অনুষ্ঠানে বিএমএ’র পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ক্রেস্ট উপহার দেওয়া হয়। সম্মেলনের শুরুতে জাতীয় ও সাংগঠনিক পতাকা উত্তোলন করা হয়। প্রায় আট বছর পর গণভবনে চিকিত্সকদের এ মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাজধানীসহ সারাদেশের বিএমএ’র সদস্যরা যোগদান করেন। বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে উপস্থিত অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- কনফেডারেশন ফর মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ইন এশিয়া অ্যান্ড ওশেনিয়া (সিএমএএও)-এর সভাপতি রাভিন্দ্রান আর নাইডু, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, বিএমএ’র মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী।