ভারতীয় রুপিকে ধরে ফেলছে টাকা
নিউজ ডেস্ক : ভারতীয় মুদ্রা রুপির রেকর্ড দরপতন ঘটেছে। এখন প্রায় ১১৪ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে ১০০ রুপি। অথচ এক বছর আগেও এটা ছিল প্রায় ১৩০ টাকা।
সে হিসেবে গত এক বছরে বাংলাদেশি টাকার বিপরীতে ভারতীয় রুপির মান কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রুপির দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছায়।
মানি এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, আজ সোমবার ১০০ রুপি পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ১১৪ টাকায়। গত বৃহস্পতিবার যা ছিল ১১৩ টাকায়। টাকার বিপরীতে রুপির এ দর এযাবতকালের সর্বনিম্ন।
অর্থ বিশ্লেষকরা বলছেন, রুপির বিপরীতে টাকার মান শক্তিশালী হলে পণ্য আমদানিতে কিছু সাময়িক সুবিধা পাওয়া যায়। তবে রপ্তানিতে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তবে ভ্রমণ কিংবা চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে যাবেন তারা লাভবান হবেন। কারণ রুপি কিনতে এখন আগের চেয়ে টাকা কম লাগবে।
এ প্রসঙ্গে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং- সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, গত কয়েক মাসে ডলারের বিপরীতে রুপির ব্যাপকহারে পতন হয়েছে। রুপির মান নিয়ন্ত্রণে ভারতের শক্ত অবস্থান না থাকার কারণেই এটি হয়েছে। বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের সতর্কমূলক নীতির কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার মান অতটা কমেনি।
‘রুপির এ মান ধারাবাহিক কমতে থাকলে এক সময় টাকা আর রুপি সমান হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে কিছুটা সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে রপ্তানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
জানা গেছে, রুপির দাম কমে যাওয়ায় পর্যটনসহ বিভিন্ন কারণে ভারতে যাওয়া বাংলাদেশিরাও বাড়তি সুবিধা ভোগ করছে। একই কারণে আগের চেয়ে বেশিসংখ্যক পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারতে যাচ্ছে। দরপতনের কারণে অনেকেই টাকা দিয়ে রুপি কিনে রাখছে।
সেলিম রায়হান বলেন, রুপির দাম কমে যাওয়ার কারণে যারা ভারতে ডাক্তার দেখাতে, অস্ত্রোপচার করাতে, তাজমহল দেখতে বা দার্জিলিং ঘুরতে যাবেন বাড়তি সুবিধা ভোগ করবেন। তবে তা সাময়িক। কারণ সেখানে তাদের খরচও বাড়বে।
‘রুপির দরপতনের কারণে আমরা সাময়িক লাভবান হচ্ছি। তবে প্রতিবেশী দেশের মুদ্রার মান কমে যাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কেও আমাদের সতর্ক থাকা দরকার।’
এর আগেও ২০১৩ সাল ও ২০১৬ সালে কয়েকবার এমন হয়েছিল, কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
ভারত সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে মোট ২০ লাখ বাংলাদেশি ভারত সফর করেছেন। অর্থাৎ দেশটির বিদেশি পর্যটকদের এক-পঞ্চমাংশ বাংলাদেশি। ২০১৩ সালে যেখানে সোয়া পাঁচ লাখ বাংলাদেশি ভারত সফর করেছেন, সেখানে ২০১৭ সালে তা তিনগুণ বেড়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর বলছে, মুদ্রাবাজারে রুপির এই অস্থির অবস্থাকে কেন্দ্র করে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আবারও স্থগিত করেছে। এ ঘটনার পর শুক্রবার এক ডলার কেনাবেচা হয়েছে ৭৪ রুপির উপরে। রুপির মানের এই পতন এযাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।
অর্থ বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল বৃহত্তম দেশটির অর্থনীতি যে শ্লথের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, সে বিষয়টি স্পষ্ট করছে।
এইএসবিসির কয়েকজন অর্থনীতিবিদ বলেন, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ভারত প্রবৃদ্ধিতে একটি চমক দেখিয়েছে। কিন্তু এখান থেকে আবারও পেছনের দিকে যেতে হতে পারে। তারা বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ভারতের জন্য এখন মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।