ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’ বাংলাদেশে আঘাতের সম্ভাবনা কম
নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি আরও শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’-তে রূপ নিয়েছে। তবে গভীর সমুদ্রে থাকা ঘূর্ণিঝড়ের বর্তমান গতিপথ অনুযায়ী, এটি বাংলাদেশে আঘাত হানার সম্ভাবনা কম। এটি বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা ও উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
ঘূর্ণিঝড়ের জন্য সমুদ্রবন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেতের পরিবর্তে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানানো হয়েছে, ‘পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও সামান্য পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’-তে পরিণত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গভীর নিম্নচাপ হচ্ছে একটি ঝোড়ো হাওয়ার অঞ্চল, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ৫১ থেকে ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে। কোনো ঝোড়ো হাওয়ার অঞ্চলে বাতাসের গতিবেগ ৬১ থেকে ৮৮ কিলোমিটারের মধ্যে হলে তাকে বলে ঘূর্ণিঝড়।
ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’ বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে কি না- জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি এখনও অনেক দূরে, কক্সবাজার থেকে ৯০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে এটি। সাগরের মধ্যে যখন একটি ঘূর্ণিঝড় মুভমেন্ট করে তখন এর গতিপথ অনেক সময় পরিবর্তন হয়ে যায়।’
তিতলি ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটারের বাতাসের গতি সম্পন্ন তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে জানিয়ে আবহাওয়াবিদ মল্লিক বলেন, ‘এটার মুভমেন্ট সামান্য পশ্চিম দিকে। তাই সবকিছু মিলিয়ে আমরা এখনই বলছি না এটি বাংলাদেশে আসবে। এখন পর্যন্ত যে মডেল প্রেডিকশন, তাতে উত্তর-পশ্চিম দিকে উড়িষ্যার কাছাকাছি গোপালপুর দিয়ে উপকূলের কাছাকাছি আসবে। সেখান থেকে একটু মোড় নিয়ে বাংলাদেশেও আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। ঘূর্ণিঝড় এখনও অনেক দূরে, এর মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি বেশ দূরে। ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে চলার পথে বারবার গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে।’
আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘ঘূর্ণিঝড়টি মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৭০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯১৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৭০ কি.মি. দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৬০ কি.মি. দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি. যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।
অপরদিকে মঙ্গলবার ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিতলি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ এটি ভারতের উড়িষ্যা ও উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) অধীন জাতিসংঘের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের (বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা এবং ওমান) আবহাওয়াবিদদের সংস্থা এস্কেপ ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়ে থাকে। ‘তিতলি’ নামটি পাকিস্তানের দেয়া। তিতলি অর্থ- সুন্দর পাখার প্রজাপতি।