যৌন হয়রানির কথা বলে কারাগারে ঠাঁই হলো অভিনেত্রী!
যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার কথা সাহস করে ফেসবুকে জানানোয় সাজা পেয়েছেন ৩৩ বছর বয়সী মিসরীয় তরুণী আমাল ফাথি। শাস্তি অপরাধীর হয়নি হয়েছে যৌন হয়রানির শিকার ওই তরুণীর।
গত মে মাসে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন ফাথি। জানিয়েছিলেন তিনি যৌন হয়রানির শিকার এবং অপরাধীর এ অবধি কোনো শাস্তি হয়নি। সাথে সাথে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গত কয়েকমাস বিচার চলার পর শনিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) মিসরের আদালত তাকে ভুয়া খবর ছড়ানোর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করেছে। দু’বছরের জেল ও ১০ হাজার মিসরীয় পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে তাকে।
আমালের বন্ধুদের দাবি, ও (আমাল) মানবাধিকার কর্মী। কোনও জঙ্গি সংগঠনের সদস্য নয়।
আমাল পেশায় একজন অভিনেত্রীও। মে মাসের ভিডিও পোস্টে আমাল জানিয়েছিলেন, কীভাবে একটি ব্যাংকের নিরাপত্তা রক্ষী তাকে যৌন হেনস্তা করেছেন এবং প্রশাসন যে মেয়েদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ, ভিডিওটিতে সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
ফেসবুকে এই পোস্টের দুই দিনের মাথায় তার বাড়িতে হানা দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। আমাল, তার স্বামী ও ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে স্বামী-পুত্রকে ছেড়ে দেওয়া হলেও আমাল বন্দিই রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ‘ভুয়া খবর ছড়ানো’ ও ‘আপত্তিকর জিনিস সঙ্গে রাখা’র অভিযোগে মামলা শুরু হয়।
শনিবার দুটি মামলাতেই দোষী সাব্যস্ত হন আমাল। দুই মামলাতে এক বছর করে মোট দুই বছর সাজা হয়েছে। সঙ্গে জরিমানাও। সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সদস্য হওয়ার যে অভিযোগ রয়েছে, সেই মামলা এখনও চলছে।
আমালের আইনজীবী দোয়া মুস্তাফা জানান, আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানাবেন তারা। তবে তিনি এও জানান, ২০ হাজার পাউন্ড দিলে আপাতত কারাদণ্ড স্থগিত রাখা হবে বলে জানিয়েছে কোর্ট। যদিও তাতে লাভ কিছু হবে কি না, জানা নেই। কারণ ইতোমধ্যেই অন্য একটি মামলায় নাম জড়িয়েছে আমালের। অভিযোগ, তিনি একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সদস্য।
রায়ের খবর ছড়াতে সময় লাগেনি। লন্ডনের একটি মানবাধিকার সংগঠন বলছে, এটি লজ্জাজনক ঘটনা। যৌন নিগ্রহের প্রতিবাদ জানানোর সাহস দেখিয়েছিলেন উনি। অবিচারের জঘন্যতম উদাহরণ এটি। যে আক্রান্ত, সেদই কি না জেলে। আর অপরাধী মুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
জাতিসংঘের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, মিসরের ৬০ শতাংশ নারী জীবনে কখনও না কখনও, কোনও না কোনও ভাবে যৌন নিগ্রহের শিকার। ২০১৭ সালেই একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা কায়রোকে মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক শহরের তকমা দিয়েছে। আমালের স্বামী মুহাম্মদ লোতফি বলেন, সেটাকেই তো স্বীকৃতি দিল আদালত। যে কেউ হেনস্থা করতে পারে। অপরাধীর শাস্তি হবে না। আর নিগৃহীতার জন্য মুখ বন্ধ রাখো। না হলে জেল।