হিলিতে বিজিবির নজরদারির পরও ভারতে ইলিশ পাচার
নিউজ ডেস্ক : সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও কঠোর নজরদারির কারণে দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে অবৈধপথে ভারতে ইলিশ পাচার কমেছে। তবে পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এখনও হিলির পাশের এলাকা মংলা ও হাড়িপুকুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার হচ্ছে ইলিশ। এছাড়া ভারত থেকে পণ্য নিয়ে আসা ভারতীয় ট্রাকের চালক ও সহকারীরা পণ্য খালাস করে ভারতে ফিরে যাওয়ার সময় অগোচরে ইলিশ নিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে অবৈধপথে ভারতে ইলিশ পাচার হওয়ার ফলে সরকার যেমন বৈদেশিক আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি বাড়তি দামে স্থানীয়দের ইলিশ কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।
হিলি বাজারে ইলিশ কিনতে আসা ভারতীয় ট্রাকের চালক ও সহকারীরা জানান, বাংলাদেশের মতো ভারতেও ইলিশ উৎপাদন হয়। কিন্তু সেই মাছের স্বাদ বাংলাদেশের ইলিশের মতো নয়। এছাড়া বাংলাদেশের ইলিশ লোনাপানির হওয়ার কারণে এর স্বাদ অনেক বেশি। এছাড়া বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশের বেশ সুনাম রয়েছে যা এক নামে ভারতের সকলেই জানে। ভারতের একজন চালক বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে আমদানি করা মালামাল নিয়ে আসি। সেগুলো খালাস করে যাওয়ার সময় আমাদের মহাজনদের চাহিদা মোতাবেক এবং আমাদের বাড়িতে খাওয়ার জন্য হিলি বাজার থেকে ইলিশ মাছ কিনে নিয়ে যাই।’
হিলি বাজারে ইলিশ কিনতে আসা স্থানীয় ক্রেতা লিটন হোসেন বলেন, ‘এখন তো ইলিশের যে দাম তাতে এ মাছ কেনা সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। আর এর প্রধান কারণ হচ্ছে অবৈধপথে ভারতে ইলিশ পাচার। ভারতে দাম ও চাহিদা বেশি থাকায় দেশ থেকে ইলিশ মাছ চোরাই পথে ভারতে পাচার হচ্ছে। এ কারণে বাজারে চাহিদার তুলনায় মাছের সরবরাহ খানিকটা কম হওয়ার কারণে বিক্রেতারাও সুযোগ বুঝে মাছের দাম বেশি নিচ্ছেন। এছাড়া ভালো ও বড় সাইজের মাছগুলো পাওয়া যায় না। এসব মাছ সব চলে যায় ভারতে। অবৈধপথে ভারতে ইলিশ পাচার হওয়ার ফলে সরকার যেমন বৈদেশিক মুদ্রা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি আমাদের বাড়তি দামে ইলিশ মাছ কিনতে হচ্ছে।’
হিলি বাজারের ইলিশ মাছ বিক্রেতা চান মিয়া বলেন, বর্তমানে পাঁচশ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ৬শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বড় সাইজের মাছ আকারভেদে ৯শ টাকা থেকে ১৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এখানে স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি ভারতীয় ট্রাকের চালক ও সহকারীরা ইলিশ মাছ কিনেন। তবে তাদের সংখ্যাও কম।’ তাদের মহাজনরা যখন মাছ কিনতে বলে তখন তারা বাজার থেকে ইলিশ মাছ কিনে। বেশির ভাগই স্থানীয় ক্রেতারা এখান থেকে মাছ কিনে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মাছ ব্যবসায়ী জানান, ভারতে বাংলাদেশি ইলিশ মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দামও বেশ ভালো পাওয়া যায়। এ কারণে সীমান্ত দিয়ে অবৈধপথে ভারতে ইলিশ মাছ পাচার হয়। এজন্য সীমান্তে একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এই চক্রটি দেশের বড় বড় মোকাম থেকে সরাসরি বড় সাইজের ইলিশ মাছ কিনে নিয়ে আসে আর সুযোগ বুঝে সেগুলো ভারতে পাচার করে। তবে হিলি বাজার থেকে তারা বরফ কিনে নিয়ে যায়। এতে অনুমান করা যায়, তারা মাছ পাচার করছে। তবে হিলি দিয়ে এসব মাছ ভারতে পাচার হয় না। হিলির পাশের মংলা, হাড়িপুকুর এবং পাঁচবিবির চেচড়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে এসব মাছ ভারতে পাচার হয়। মাঝে মাঝে দু-এক চালান ধরা পড়লেও অগোচরে অধিকাংশ মাছই চলে যায় ভারতে।
বিজিবির হিলি আইসিপি ক্যাম্প কমান্ডার সুবেদার এটিএম মোস্তফা জানান, হিলি সীমান্তের আটাপাড়ার পাশের এলাকা থেকে ফকিরপাড়া পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় সিসি ক্যামেরা ও সার্চ লাইট স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও এলাকায় সিসি ক্যামেরা ও সার্চ লাইট স্থাপন করা হবে। এছাড়া সীমান্তে বিজিবি সদস্যদের তৎপরতার কারণে এই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে চোরাচালানসহ সব ধরনের অপরাধ প্রবণতা বন্ধ হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত এই পথ দিয়ে ভারতে ইলিশ পাচারের মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি। বাংলা ট্রিবিউন