জাতিসংঘ ভাষণে সু চি’র তীব্র সমালোচনা করলেন মাহাথির
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সরকারি বাহিনীর চালানো হত্যাযজ্ঞের কঠোর সমালোচনা করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। তিনি বলেছেন, নোবেল বিজয়ী মিয়ানমারের উপদেষ্টা অং সান সু চিসহ মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত নিধনযজ্ঞ অস্বীকার করছে। ২৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেওয়া তার বক্তব্যে রোহিঙ্গা প্রশ্নে কথা বলেন মাহাথির। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বারবার বিষয়টিকে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবেও দাবি করার প্রেক্ষাপটে আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক বলেন, স্বাধীন রাষ্ট্র হলেই নিজ দেশের জনগণের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানো যায় না।
গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পালিয়ে আসা বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হলেও তা কার্যকরের বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন। কেবল গত বছর আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত কেবল ৩৮৮ জনকে ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া চালু রাখার কথা জানিয়েছে মিয়ানমার। এই অবস্থাতেই গ্রামগুলোতে বুলডোজার চালিয়ে আলামত নষ্ট, বিপুল সামরিকায়ন, উন্নয়ন প্রকল্প চলমান থাকা, প্রত্যাবাসন নিয়ে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর হুমকির ধারাবাহিকতায় রাখাইনে বৌদ্ধদের মডেল গ্রাম গড়ে উঠছে বলে খবর পাওয়া যায়। মাহাথির রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের প্রশ্নে তার ভাষণে বলেন, ‘আমি কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপের বিরোধী। কিন্তু পুরো দুনিয়া কী নীরব দর্শক হয়ে বসে বসে একটি হত্যাযজ্ঞ দেখবে এবং কিছুই করবে না?’ তিনি বলেন, ‘দেশগুলো স্বাধীন। কিন্তু তার মানে কি এই যে, স্বাধীন বলেই নিজ দেশের জনগণের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানোর অধিকার তাদের রয়েছে!’
মাহাথির বলেন, মিয়ানমার সরকারের কর্মকাণ্ডে দেশটিতে প্রাণহানি, বাড়িঘর ধ্বংস করে দেওয়া এবং নিজ দেশের মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু দেশটির নেত্রী অং সান সু চি এসব অস্বীকার করছেন।
রাখাইনের সহিংসতাকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এ ঘটনায় খুঁজে পেয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ আখ্যা দিয়েছে। জাতিসংঘ এরইমধ্যে নিধনযজ্ঞের আলামত সংগ্রহ শুরু করেছে। তবে এইসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার। মাহাথির বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের হত্যা করা হচ্ছে। তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১০ লাখ শরণার্থী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। গভীর সমুদ্রে ডুবে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। বেঁচে থাকা লোকজনের ঠাঁই হয়েছে খাবার, পানি কিংবা স্যানিটেশনের সুবিধাবিহীন অস্থায়ী শিবিরে। তারপরও নোবেলজীয় অং সান সু চি’সহ দেশটির কর্তৃপক্ষ সেখানকার পরিস্থিতি অস্বীকার করছে।’
১৫ বছর পর শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেন মাহাথির মোহাম্মদ। ভাষণে ১৫ বছর আগের তুলনায় বর্তমানে বিশ্বের পরিস্থিতি আরও খারাপ হিসেবে উল্লেখ করে বিশ্ব সংস্থাটিতে সংস্কারের আহ্বান জানান তিনি। কথা বলেন রোহিঙ্গা ইস্যু, ফিলিস্তিন পরিস্থিতি, বিশ্বায়ন, বাণিজ্য যুদ্ধ, মালয়েশিয়ার অগ্রগতিসহ নানা বিষয়ে। জাতিসংঘের মহৎ লক্ষ্যগুলো অর্জনে মালয়েশিয়ার পূর্ণ সমর্থন ও সহায়তারও অঙ্গীকার করেন তিনি।
নিজের বক্তব্যে ২০১৮ সালের আগস্টে মৃত্যুবরণ করা জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান মাহাথির। তিনি বলেন, কফি আনানের মেয়াদকালে বিশ্ব সংস্থাটির সঙ্গে মালয়েশিয়ার জোরালো সম্পর্ক ছিল। সূত্র: চ্যানেল নিউজ এশিয়া, বারনামা।