বাচ্চারা এত মানবিক আর বিবেকবান!
সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েই বুঝলাম, ভয়াবহ রোদের তাপ, এই গরমেই বাচ্চাগুলা রাস্তায় বসে আছে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে।
কাদের জন্য এ দাবি? আপনার আমার জন্য, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য। বাচ্চাদের লাঠিপেটা করা হচ্ছে, রক্তাক্ত করা হচ্ছে, আমার লজ্জা হয়, এই ব্যর্থতা আর কতদিন? তাই ওদের সাথে কিছু সময় কাটালাম। দুই ঘণ্টা দারুন সব ব্যাপার চোখে পড়লো।
আমার মনে ভয়াবহ একটা কষ্ট কাজ করতো মাত্র ক’দিন আগেও। ভাবতাম, এই ফেসবুক আর হাইব্রিড ভবিষ্যত প্রজন্ম নিয়ে বাঙালি কি করবে! কিন্তু, আজ সে ধারণা ভেঙে গেল, বাচ্চারা এত মানবিক আর বিবেকবান! আমার অনেক গর্ব হচ্ছে এখন।
দেখলাম এক বৃদ্ধ আংকেল রাস্তা পার হতে পারছেন না, ছেলেমেয়েগুলা উনাকে প্রায় কোলে তুলে রাস্তা পার করে দিল। এ্যাম্বুলেন্সগুলো যেতে দিল, যে সব গাড়িতে ছোট শিশু বা অতিরিক্ত বৃদ্ধব্যক্তি, সেসব গাড়িগুলো আটকানো হলো না, দারুন সব পরিণত কাজ কারবার!
একটা প্রাইভেট কারের সামনে লেখা ছিল পুলিশ, মহূর্তেই জনা বিশেক ছেলে ওইটার উপরে উঠে গেল, পথচারী সবাই হাসাহাসি শুরু করলো। পরে অনেক অনুরোধ করে পুলিশ ভাইরা নিস্তার পেলেন।
কথা বললাম ওদের সাথে, বুঝলাম ওরা কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছে না আর, কারো উপরেই আস্থা নেই এদের। আমাকে বলল, আন্টি ছবিগুলো ডিলিট করেন, আমি বললাম আমি তোমাদের পক্ষে আছি, লিখবো তোমাদের কথা। আপনি কি মিডিয়ার লোক? তাহলে সত্যি আমাদের হেল্প লাগবে না। জানতে চাইলাম, এত রাগ কেন? বলল আমাদের সহপাঠী মারা গেল ৭ জন, আপনারা লিখলেন ২ জন!
আমি সাথে সাথে কুর্মিটোলা হসপিটালে গেলাম, অনেকের সাথে কথা বলেও এই তথ্যের কোন সত্যতা পেলাম না। ওদের কাছে ফিরে এলাম, জানালাম যে এটা একটা গুজব। বিশ্বাস করলো কিনা জানি না, কিছু না বলেই আর একটা গাড়ি আটকাতে চলে গেল।
আমার অফিসের সময় হয়ে এল, আমিও পায়ে হেঁটে ফিরে এলাম, মনটা ভাল হয়ে গেল। আমাদের পরের প্রজন্ম দারুণ সব মেধাবী, নিষ্ঠাবান, পরিণত আর সাহসী নেতা পেতে যাচ্ছে। ওরা ভালো থাকুক, কারো ক্ষতি না করুক।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী