স্বামী-স্ত্রী তালাক চান না! আপত্তি মোড়লদের
নিউজ ডেস্ক: ২৩ বছর কেটে গেছে। জেলা এক হলেও আবাসস্থল আলাদা। মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার প্রায় উল্টো দিকে রঘুনাথগঞ্জ। কিন্তু এলাকার ভৌগোলিক দূরত্ব মুছে দিয়েছে গ্রামের মাতবরেরা।
তিন তালাক ও নিকাহ হালালার মতো প্রথা তিলমাত্র পরিবর্তন আনতে পারেনি দুই এলাকার দুই দম্পতির জীবনে। এমনকি তিন তালাক দেওয়ার প্রথা দেশের সর্বোচ্চ আদালত বেআইনি ঘোষণা করেও সালিশি সভার মোড়লদের বিচলিত করতে পারেনি।
গ্রামের প্রান্তিক এক চাষি চান, সাত পুরুষের ভিটে বিক্রি করে দিয়ে অন্য একটি শান্ত এলাকায় বসবাস করতে। কিন্তু ২৭ বছরের দাম্পত্য জীবন কাটানো ভিটের মায়া ছাড়তে নারাজ তার স্ত্রী। তা নিয়ে দাম্পত্য কলহ।
রাগের মাথায় ১৯৯৫ সালে অক্টোবর মাসের কোনো একদিন বাড়ির কর্তা বলে ওঠেন, তালাক! তালাক, তালাক!
আরও : ঈদের প্রস্তুতি
গ্রামে সে কথা রটে যেতে সময় লাগেনি। মশাল জ্বালিয়ে, শীতলপাটি পেতে ওই দম্পতির বাড়ির উঠোনেই বসে সালিশি সভা। দু’জনেই মাতবরদের জানিয়ে দেন, রাগের মাথায় কথাটা বলে ফেলেছেন।
তারা দু’ জনের কেউই সত্যিই তালাক চান না। কিন্তু কে শোনে কার কথা! মোড়লরা সাফ জানিয়ে দেন, ওই নারীর সঙ্গে অন্য কোনো পুরুষের বিয়ে দিতে হবে। কয়েক মাস নতুন দাম্পত্য জীবন কাটানোর পর দ্বিতীয় স্বামীর কাছ থেকে ওই নারীকে তালাক নিতে হবে।
তবেই তিনি আবারো নিকাহ করতে পারবেন আগের স্বামীকে। সে আইন মানতে রাজি হননি ওই দম্পতি। মোড়লরা তখন আইন করেন, ওই পরিবারকে একঘরে করার। মুদির দোকান, কলের পানি, গোচারণ ভূমিতে গবাদি পশুর প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়। ধোপা-নাপিত- সহ সব কিছু বন্ধ করা হয়।
কথাটি কানে গেল সিপিআই- এর বিড়ি শ্রমিক সংগঠনের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক উম্মলওয়ারা বেগম ওরফে ফুলদির কানে। ফুলদি (বর্তমানে প্রয়াত) আবার নারী মৌলবিও বটে। তিনি তালাকপ্রাপ্ত শতাধিক নারীদের নিয়ে মিছিল করে হরিহরপাড়ার বিডিও-র কাছে পৌঁছান। অবশেষে প্রশাসনিক প্রচেষ্টায় মাঝবয়সী ওই দম্পতির একঘরে প্রথা শিথিল করতে বাধ্য হয় মোড়লরা। তবে সেই সময়টা যে কত কঠিন ছিল, কী নির্মম লাঞ্ছনা সইতে হয়েছে তা আজও স্পষ্ট মনে আছে গ্রামের লোকেদের। তাদের কথায়, সে এক সময় গেছে! ওই দু’জনে চাইছেন একসঙ্গে থাকতে। কিন্তু গ্রামের মাতব্বরেরা একাট্টা।
এত বছর পরেও কি সেই নিয়মটা বদলেছে? রঘুনাথগঞ্জের এক নারী বলছেন, মোড়লরাদের জন্যে আমার জীবনটাই এলোমেলো হতে চলেছে, বদলাবে কি!