সোমবার, ৪ঠা জুন, ২০১৮ ইং ২১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

এককভাবে কোন দেশে আর বিশ্বকাপ হবে না, কেন?

স্পোর্টস ডেস্ক : রাশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এবারের বিশ্বকাপটিই সম্ভবত হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের সর্বশেষ কোন আসর যা একক কোন দেশে আয়োজন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে বিশ্বকাপের সকল আসরে যৌথভাবে একাধিক দেশকে আয়োজক করার চিন্তা করছে ফুটবলের বিশ্বসংস্থা ফিফা।

পাঠক হয়তো ভাবছেন ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হিসেবে তো কাতারের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, দেশটিতে পুরোদমে প্রস্তুতিও চলছে বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে। তবে জেনে রাখুন, ফিফা জানিয়েছে কাতার বিশ্বকাপেও প্রতিবেশী আরো দুএকটি দেশকে সহআয়োজক করার চিন্তা করছে তারা। বিশেষ করে যদি, কাতার বিশ্বকাপে দল সংখ্যা ৩২ থেকে বাড়িয়ে ৪৮ করা হয়, তাহলে তা অন্য কোন দেশে সম্প্রসারণের সম্ভবনা শতভাগ। ২০২৬ বিশ্বকাপেও যৌথ আয়োজক হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা-মেক্সিকো।

ফিফার এই পরিকল্পনার পেছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণ। তবে প্রধান কারণ সম্ভত অর্থনৈতিক। রাশিয়া বিশ্বকাপের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১২০০ কোটি মার্কিন ডলার। একক দেশের জন্য এত বড় তহবিল যোগান দেয়া অনেক সময় কঠিন। তহবিল ভাগাভাগি ছাড়াও রাজনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় করারও একটি আগ্রহ কাজ করে আয়োজক দেশগুলোর মধ্যে। তার চেয়েও বড় সমস্যা বিশ্বকাপ আয়োজনের যে বিশাল কর্মযজ্ঞ সেটি বাস্তবায়ন করা।

বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য প্রচুর অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হয় আয়োজক দেশকে। অন্তত দশটি স্টেডিয়াম দরকার হয় বিশ্বকাপ মানের উপযোগী। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত দর্শকদের সুবিধার জন্য দরকার নতুন সড়ক, রেলপথ, বিমান বন্দর নির্মাণ স্টেডিয়াম ছাড়াও খেলোয়াড়দের জন্য অন্যান্য সহযোগী অবকাঠামো দরকার। নিরাপত্তার বিষয়টিও অনেক বড় একটি বিষয়।

ইংল্যান্ডের স্যালফোর্ড বিজনেস স্কুলের স্পোর্টস এন্টারপ্রাইজ বিভাগের প্রফেসর সিমন শ্যাডউইক বলেন, যৌথ আয়োজনের ফলে দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির একটি সুযোগ তৈরি হয়। ব্যয় নির্বাহের দিক থেকে দেশগুলো উপকৃত হয়। বিশ্বকাপ, অলিম্পিক গেমসের মতো বড় আসরগুলো আয়োজনে প্রচুর অর্থ দরকার হয়।

ইতোমধ্যেই ২০২৬ বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক হতে আগ্রহী তিনটি দেশ(যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো) ফিফাকে জানিয়েছে তারা ওই আসর থেকে এগারো শ’ কোটি মার্কিন ডলার মুনাফা আয় করে দিতে পারবে। ফিফাই বা কেন এমন লাভ হাতছাড়া করতে চাইবে!

ফুটবল বিশ্বকাপ যৌথ আয়োজনের ঘটনা এখন পর্যন্ত একবারই হয়েছে। ২০০২ সালে এশিয়ার দুই দেশ দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান আয়োজন করেছিলো ওই আসরের।

আরো পড়ুন : বিশ্বকাপে বুড়ো খেলোয়াড়রা

রাশিয়া বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বিশ্বকাপের ইতিহাসে এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা-তথ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো এখন প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। তারই ধারাবাহিকতায় গোলডটকম বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড়ের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। নিজ নিজ দেশের হয়ে বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত অংশ নেয়া সবচেয়ে বেশি বয়সী কয়েকজন খেলোয়াড়ের তথ্য এখানে উপস্থাপন করা হলো :

১. মারিও ইয়েপেস (কলম্বিয়া, ৩৮ বছর ৫ মাস ২১ দিন) :
প্যারিস সেইন্ট-জার্মেইর সাবেক সেন্টার ব্যাক মারিও ইয়েপেস কলম্বিয়ার হয়ে ১০২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯৯ সালে সিনিয়র দলে তার অভিষেক হয়ে ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপের মাধ্যমে শেষ হয়। ওই আসরে কলম্বিয়া কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের মুখোমুখি হয়। ম্যাচটিতে অধিনায়কত্ব করা ইয়েপেসের তখন বয়স ছিল ৩৮ বছর।

২. ভিটোর ডামাস (পর্তুগাল, ৩৮ বছর ৮ মাস ৩ দিন) :
১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে পর্তুগাল তিনটি ম্যাচ খেলেছিল। এক ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে পরাজিত করলেও বাকি দুটি ম্যাচে পরাজিত হয়ে গ্রুপের একেবারে তলানির দল হিসেবে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয়। ডামাস ইনজুরি আক্রান্ত ম্যানুয়েল বেনটোর স্থানে দুটি পরাজিত ম্যাচেই খেলেছেন। মেক্সিকো থেকে ফিরেই তিনি অবসরের ঘোষণা দেন।

৩. ডেভিড সিম্যান (ইংল্যান্ড, ৩৮ বছর, ৯ মাস ২ দিন) :
২০০২ সালের ইংল্যান্ড দলটিকে সমর্থকরা স্বর্ণযুগের দল হিসেবে অভিহিত করলেও নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি ইংলিশরা। কোরিয়া/জাপান বিশ্বকাপে কোয়র্টার ফাইনালে গিয়ে তাদের থেমে যেতে হয়। ওই আসরে ৩৮ বছর বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে সিম্যান থ্রি লায়ন্সদের দলে সবচেয়ে সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন।

আরও : জোড়া ব্রেনের রাবেয়া-রোকেয়া: দ্বিতীয় অপারেশনে ৩০-৫০ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি লাগবে

৪. ইয়ান হেইন্টজে (ডেনমার্ক, ৩৮ বছর ৯ মাস ২০ দিন) :
পিএসভি’র সাবেক ফুল-ব্যাক হেইন্টজে ডেনমার্কের হয়ে রেকর্ড ৮৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। ২০০২ সালের কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপের পরে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়। ওই বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে সেনেগালের সাথে ১-১ গোলের ড্র ম্যাচটিতে ৩৮ বছর বয়সে অধিনায়কত্ব করেছিলেন হেইন্টজে। তবে ইংল্যান্ডের কাছে পরাজিত হয়ে শেষ ১৬ থেকে বিদায় নেয়া ড্যানিশ দলে জায়গা করতে পারেননি।

৫. স্ট্যানলি ম্যাথুস (ইংল্যান্ড, ৩৯ বছর ৪ মাস ২৫ দিন) :
১৯৫৭ সালে থ্রি লায়ন্সদের হয়ে ক্যারিয়ারের ইতি টানেন স্ট্যানলি ম্যাথুস। ১৯৫৪ সালে সুইজারল্যান্ড বিশ্বকাপই ছিল তার শেষ বিশ্বকাপ। উরুগুয়ের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ৪-২ গোলের জয়ের ম্যাচটিতে ৩৯ বছর বয়সে অংশ নিয়েছিলেন স্ট্যানলি।

৬. জোসেফ এন্টোনি বেল (ক্যামেরুন, ২৯ বছর, ৮ মাস ১৬ দিন) :
মার্সেই ও সেইন্ট-এটিয়েনের সাবেক গোলরক্ষক জোজো বেল ক্যামেরুনের হয়ে ৫২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও ক্যারিয়ারে ১৯৮২, ১৯৯০ ও ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতা তার রয়েছে। ৯৪’র বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে ৩-০ গোলের পরাজয়ের ম্যাচটিই ছিল তার শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচ, ওই ম্যাচে তার বয়স ছিল ৩৯ বছর।

৭. এ্যাঞ্জেল লাব্রুনা (আর্জেন্টিনা, ৩৯ বছর ৮ মাস ১৮দিন) :
রিভার প্লেটের আইকন এ্যাঞ্জেল লাব্রুনা ১৯৫৮ সালে চেক রিপাবলিকের কাছে ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত হবার ম্যাচটিতে আজেন্টাইন দলের আক্রমনভাগের নেতৃত্বে ছিলেন। ওই আসরে ৩৯ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড কোনো গোল করতে পারেননি। আর্জেন্টিনার হয়ে ৩৭ ম্যাচে তিনি সর্বমোট ১৭টি গোল করেছিলেন।

৮. ডেভিড জেমস (ইংল্যান্ড, ৩৯ বছর ১০ মাস ২৬ দিন) :
২০১০ সালে জাতীয় দল থেকে অবসরের ঠিক আগে ডেভিড জেমসের সাথে ইংল্যান্ড দলের সম্পর্কটা অনেকটাই আবেগপূর্ণ ছিল। ওই বছরই দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের মাধ্যমে ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলেছেন জেমস। প্রায় ৪০ বছর বয়সে জার্মানীর কাছে ৪-১ গোলের পরাজিত ম্যাচটি ছিল তার ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ।

৯. জিম লেইটন (স্কটল্যান্ড, ৩৯ বছর ১০ মাস ৩০ দিন) :
১৯৯৮ সালে স্কটল্যান্ডের হয়ে শেষ বিশ^কাপ খেলেছেন লেইটন। আসরটিতে স্কটল্যান্ড কোন সাফল্যই দেখাতে পারেনি। গ্রুপ পর্বে ব্রাজিল ও মরক্কোর কাছে পরাজিত হলেও নরওয়ের সাথে কোনরকমে ড্র করে। আর এর মাধ্যমে জিম লেইটন ও তার স্কটিশ সতীর্থরা খালি হাতে দেশে ফিরে। তিনটি ম্যাচেই খেলা লেইটনের তখন বয়স ছিল ৪০ বছর।

১০. আলি বোমনিজেল (তিউনিশিয়া, ৪০ বছর ২ মাস ১০ দিন) :
২০০৬ সালে ইউক্রেনের কাছে ১-০ গোলের পরাজয়ের ম্যাচটিতে ৪০ বছর বয়সী আলি বোমনিজেল ছিলেন তিউনিসিয়ার নাম্বার ওয়ান খেলোয়াড়। গ্রুপ পর্বে তিউনিসিয়া তৃতীয় স্থান লাভ করে। এর এক বছর পরেই বোমনিজেল আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন।

১১. ডিনো জফ (ইটালি, ৪০ বছর ৪ মাস ১৩ দিন) :
১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে কিংবদন্তী গোলরক্ষক ডিনো জফ নিজেকে দারুনভাবে প্রমান করেছিলেন। মাদ্রিদের ৯০ হাজার দর্শকের সামনে পশ্চিম জার্মানীকে ৩-১ গোলে হারিয়ে ইটালির শিরোপা দখল করার মূল কারিগর ছিলেন জফ। এর আগে টুর্নামেন্টে ইটালি চতুর্থ স্থান লাভ করেছিল, ওই আসরেও খেলেছিলেন জফ।

১২. পিটার শিলটন (ইংল্যান্ড, ৪০ বছর ৯ মাস ১৯ দিন) :
ইংল্যান্ডের অন্যতম সফল এই গোলরক্ষক ৪০ বছর বয়সে সর্বশেষ বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলেছেন। পশ্চিম জার্মানীর কাছে সেমিফাইনালে পরাজিত হবার পরে তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচটিতেও ২-১ গোলে পরাজিত হয়েছিল ইংল্যান্ড। ঐ ম্যাচটিই ছিল শিলটনের বিশ^কাপ ক্যারিয়ারের সর্বশেষ ম্যাচ।

১৩. প্যাট জেনিংস (নর্দান আয়ারল্যান্ড, ৪১ বছর) :
১৯৮৬ সালে নর্দান আয়ারল্যান্ডের হয়ে সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছিলেন প্যাট জেনিংস। কিন্তু তারপরেও এখন পর্যন্ত দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড ধরে রেখেছেন। ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপের সর্বশেষ ম্যাচে ওয়ার্টফোর্ড, টটেনহ্যাম ও আর্সেনালের সাবেক এই গোলরক্ষক ব্রাজিলের বিপক্ষে ৪১ বছর বয়সে খেলতে নেমেছিলেন।

১৪. রজার মিলা (ক্যামেরুন, ৪২ বছর ১ মাস ৮ দিন) :
ক্যামেরুনের সাবেক এই জাতীয় দলের খেলোয়াড় রজার মিলা তিনটি বিশ্বকাপে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৮২, ১৯৯০ ও ১৯৯৪ সালে তিনি বিশ্বকাপের আসরে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন। রাশিয়ার বিপক্ষে ৬-১ গোলের পরাজয়ের ম্যাচটিতে ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে মিলা গোল করার কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন।

১৫. ফারিড মোনড্রাগন (কলম্বিয়া, ৪৩ বছর, ৩ দিন) :
৪৩ বছর বয়সে অংশ নিয়ে সাবেক ইন্ডিপেন্ডেন্টে, গ্যালাতাসারে ও কোলনের গোলরক্ষক ফারিড মোনড্রাগন এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে প্রতিনিধিত্ব করা সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড ধরে রেখেছেন। ২০১৪ সালে জাপানের বিপক্ষে ৪-১ গোলের জয়ের ম্যাচটিতে মোনড্রাগন এই রেকর্ড গড়েন।

Print Friendly, PDF & Email