শাশুড়ি নির্যাতনের ভাইরাল ভিডিও, অভিযুক্তকে খুঁজে পেয়েছে পুলিশ!
নিউজ ডেস্ক: ছেলের বউয়ের হাতে নির্মমভাবে নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন এক বৃদ্ধা। সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ইতোমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গেছে।
তাতে দেখা যায়, সাদা শাড়ি পরে থাকা এক বৃদ্ধাকে বেধড়ক মারধর করছেন আরেক নারী। কখনো চুলের মুঠি ধরে ঝাঁকাচ্ছেন, আবার কখনো দেয়ালের সঙ্গে ঠেসে ধরে তার গলা টিপে ধরছেন। কখনো আবার গালে সপাটে চড়, কান মলে দেওয়া, গাল-নাক টিপে ধরা… বেশ কয়েক মিনিটের ভিডিওটি দেখে শিউরে উঠেছেন অনেকে।
কিন্তু, কোথায়, কবে এই ঘটনা ঘটেছে তা বোঝা যাচ্ছিল না। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, বৃদ্ধাকে হাউমাউ করে কাঁদতে এবং শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে। কিন্তু, সবুজ নাইটি পরা ওই নারীকে থামতে দেখা যায়নি।
এই ঘটনা নিয়ে কেউ কোথাও কোনো অভিযোগ করেনি। থানা-পুলিশেও দায়ের হয়নি কোনো অভিযোগ। কিন্তু, পাশের বাড়ি থেকে কেউ এক জন সেই মারধরের ছবি মোবাইলে রেকর্ড করেছিলেন।
শুধু তাই নয়, সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোডও করেন। মুহূর্তের মধ্যেই ফেসবুকে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের কাছে ওই পোস্টটি পৌঁছে যায়। প্রায় আট হাজার লাইক এবং ২৫ হাজার শেয়ার হয়। বিষয়টা নজরে আসে পুলিশের। এর পরেই তারা তদন্তে নেমে ওই বৃদ্ধার পুত্রবধূকে আটক করেছেন। আটক নারীর নাম স্বপ্না পাল।
আরও : ঈদের প্রস্তুতি
পুলিশ বলছে, শুভ্র চক্রবর্তী নামে বাঁশদ্রোণী থানার এক সার্জেন্ট ফেসবুক ঘাটতে ঘাটতে ওই ভিডিও পোস্টটি দেখেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানান।
রন্তু সেনগুপ্ত নামে এক যুবকের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শুভ্র ওই ভিডিওটি দেখেন। পুলিশের পক্ষ থেকে সঙ্গে সঙ্গে ওই যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জানতে চাওয়া হয়, কোথায়, কবে ওই ঘটনা ঘটেছে। তার নাম-ঠিকানা গোপন রাখা হবেও বলে পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু, রন্তু সেনগুপ্ত আর পুলিশের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি।
এর পর বাঁশদ্রোণী থানার পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফেসবুক থেকে রন্তুর ছবি জোগাড় করে তার সন্ধান শুরু করে পুলিশ। ফের যোগাযোগ করা হয় তার সঙ্গে। শেষাবধি ওই যুবক জানান, ভিডিওটি তিনি পেয়েছেন ক্যানিং-এর ভোলার বাজার এলাকার চিকিৎসক তরুণ চক্রবর্তীর কাছ থেকে। রন্তুর কাছ থেকে ওই চিকিৎসকের ফোন নম্বর জোগাড় করে পুলিশ তার সঙ্গে যোগাযোগ করে।
ওই চিকিৎসক জানান, তিনি ওই ভিডিওটি সুমন নামে এক মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভের কাছ থেকে পেয়েছেন। তাকে ওই মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ জানিয়েছিলেন, ভারতের গড়িয়ার পঞ্চাননতলা এলাকায় ওই ঘটনা ঘটেছে। এর পর সুমনের সঙ্গে পুলিশ যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু, তিনি মোবাইলে সবটা শোনার পর সুইচ অফ করে দেন।
কিন্তু, হাল ছেড়ে দেয়নি বাঁশদ্রোণী থানার পুলিশ। তারা ওই ভিডিও থেকে বৃদ্ধার ছবি বের করে পঞ্চাননতলা এলাকায় অভিযান শুরু করে। আর এতেই সাফল্য আসে। জানা যায়, ওই বৃদ্ধার নাম যশোদা পাল। ছেলের বউকে না জানিয়ে ফুল তোলার ‘অপরাধে’ তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়।
ওই বৃদ্ধার বড়ছেলে রঞ্জিত পালের স্ত্রী স্বপ্না দেবী। তারা সবাই যশোদা দেবীর বাড়িতেই থাকেন। পুলিশ জানিয়েছে, যশোদা দেবী মাঝে মধ্যেই স্মৃতিভ্রংশে আক্রান্ত হন। দিনবন্ধু অ্যান্ড্রুস কলেজের এক ছাত্র ওই ভিডিওটি করেছে বলে পুলিশ তদন্তে জানতে পারে। ওই ছাত্রের কাছ থেকেই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়।