গরমে খেতে হবে পরিমিত খেজুর
গরমের দিনে দু-তিনটির বেশি খেজুর না খাওয়ার কথা বলছেন পুষ্টিবিদেরা। তাঁরা বলছেন, গরমে হাঁসফাঁস অবস্থায় শরীর ঠিক রাখতে একটু দেখেশুনে খাওয়াই ভালো। যেসব খাবার শরীর ঠান্ডা ও আর্দ্র রাখে, সেসব খাবারই খাওয়া দরকার। কিন্তু কিছু খাবার আছে, যা শরীর গরম করে। সেসব খাবার পরিমিত খাওয়া উচিত।
এর মধ্যে খেজুর অন্যতম। তবে খেজুর খাওয়ার আগে তা বুঝেশুনে খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান শামছুন্নাহার নাহিদ বলেছেন, যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের খেজুর বুঝেশুনে, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে খেতে হবে। আর স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রেও পরিমিত খেজুর খেতে হবে।
একই মত ভারতীয় অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের। তাঁদের মতে, খেজুর শীতকালে খাওয়া ভালো। গরমকালে খেজুর বেশি না খাওয়ার পরামর্শ দেন তাঁরা। গরমকালে খেজুর খাওয়ার ও খেজুরের গুণাগুণ নিয়ে এনডিটিভি অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদ শামছুন্নাহার নাহিদ বলেন, খেজুরের মধ্যে আছে ক্যালসিয়াম, সালফার, আয়রন, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন বি-৬, ফলিক অ্যাসিড, আমিষ, শর্করা। তাই খেজুর শুধু সুস্বাদুই নয়, পুষ্টিকরও বটে৷ তবে যাঁদের রক্তে চিনির পরিমাণ বেশি, শুধু তাঁদের বেলায় খেজুর খাওয়ায় খানিকটা বিধিনিষেধ আছে।
জেনে নিন খেজুরের গুণাগুণ
আরও : ঈদের প্রস্তুতি
১. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার পাশাপাশি অন্ত্রের অন্যান্য সমস্যা দূর করে
২. খেজুরে থাকা প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের কারণে হাড় মজবুত হয়
৩. রক্তাল্পতা দূর করার দারুণ এক উৎস খেজুর
৪. যেকোনো ধরনের অ্যালার্জি বা চুলকানি দূর করতে করতে সহায়তা করে
৫. খেজুর শক্তিবর্ধক
৬. হৃদ্যন্ত্র সুস্থ রাখতে কার্যকর
৭. ডায়রিয়া-জাতীয় সমস্যা দূর করতে পারে খেজুর।
শামছুন্নাহার নাহিদ আরও বলেন, খেজুর হিমোগ্লোবিন বাড়ায় এবং এতে আয়রন বেশি। এ ছাড়া এতে ‘এনার্জি’ প্রচুর। তাই স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রে গরমের দিনে দুটি বা তিনটি খেজুরই যথেষ্ট।
ভারতের ফরটিস হাসপাতালের পুষ্টিবিদ সিমরান সাইনি এনডিটিভি অনলাইনকে বলেছেন, খেজুর যেহেতু শরীরে তাপ উৎপন্ন করে, তাই দিনে দুই বা তিনটির বেশি খাওয়া ঠিক নয়। এ কারণে গরমের চেয়ে শীতের সময় খেজুর খাওয়া ভালো। কারও শরীরে যদি বেশি মাত্রায় লৌহ বা আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়, তবে তিনি দিনে দুই বা তিনটির বেশি খেজুর খেতে পারেন।
ভারতের আরেক পুষ্টিবিদ শিল্পা অরোরা তাঁর সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, ‘গরমেও পরিমিত মাত্রায় খেজুর খেলে সমস্যা হয় না। তবে দুই বা তিনটির বেশি খাওয়া ঠিক হবে না। খেজুর খাওয়ার সঙ্গে অন্যান্য খাবারের ভারসাম্য ঠিক রাখতে হবে।’
পুষ্টিবিদদের পরামর্শ হচ্ছে, মৌসুমি শরবতের সঙ্গে বা যে আবহাওয়ায় খেজুর ভালো হজম হয়, সেই আবহাওয়াতে তা খেতে হবে। খেজুর কয়েক ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে খেতে পারেন। দুধের সঙ্গেও খেজুর খাওয়া যায়।
পুষ্টিবিদ শামছুন্নাহার নাহিদ আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসের প্রেক্ষাপট যেহেতু ভিন্ন, তাই খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রেও ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে খেজুর খাওয়ার ক্ষেত্রে গরমের দিনে দুই বা তিনটি খেজুর খাওয়ার পরামর্শ ঠিকই আছে।