‘হুইল চেয়ারে আমিই প্রথম মহাকাশে যেতে চাই’
অনলাইন ডেস্ক : স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি নামক জটিল স্নায়বিক রোগে ভূগছে এমন এক তরুণ সম্পর্কে জন্মের সময় বলা হয়েছিল, সে পাঁচ বছরের বেশি বাঁচবে না, সম্প্রতি তিনি ডিজঅ্যাবিলিটি নিয়ে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে প্রথম কোনো আফ্রিকান গ্রাজুয়েট হিসেবে নিজের নাম লিখিয়েছেন।
ওই তরুণের লক্ষ্য এখন শুধু পৃথিবী নয় মহাকাশ জয় করার। তিনি বলেন, ‘প্রায় দুই বছর আগে আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করলাম, এমন কি করতে পারি যার মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং প্রতিবন্ধিত্বের বিষয়টিকে সমাজ যে দৃষ্টিতে দেখে কিংবা যেভাবে তাকে বদলে দিতে পারি? তখনই আমার মনে হল আমি মহাকাশে যেতে পারি।’ তার পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য অধ্যাপক স্টিফেন হকিংকে শ্রদ্ধা জানানো। যিনি নিজেও মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
এডওয়ার্ডের জন্ম হয়েছিল স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রফি নামক স্নায়বিক সমস্যা নিয়ে। তিনি বড় জোর পাঁচ বছর বেঁচে থাকবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। এখন তার বয়স ২৭। এডওয়ার্ড বলেন, ‘এই বছরের শেষে আমার বয়স হবে ২৮ বছর। সুতরাং দুই দশকের বেশি সময় ধরে আমি অতিরিক্ত সময় বেঁচে আছি।’
এডওয়ার্ডের অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। পেশিগুলো দিন দিন দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমার প্রতিদিনকার উপলব্ধি হচ্ছে এই যে, সবকিছুতেই আমার সাহায্য দরকার, খাওয়া দাওয়া, সকালে উঠে কাপড় পরা, প্রকৃতপক্ষে সপ্তাহের সাতদিন চব্বিশ ঘণ্টা প্রতি মুহূর্তই আমাকে লোকজনের সাহায্য নিয়ে চলতে হয়।’
আরও : ঈদের প্রস্তুতি
কিন্তু শুধু এডওয়ার্ডের একার সংগ্রামে বিষয়টি হয়তো সম্ভব হতো না। তার মায়ের নিরলস চেষ্টা তাকে এই সুযোগ করে দিয়েছে যা হয়তো অন্য অনেক প্রতিবন্ধী মানুষের নাগালের বাইরে। তাদের জন্য কিছু একটা করতে চেষ্টা করছেন তিনি।
এডওয়ার্ড বলেন, ‘আমার মা একজন রকস্টার। সব ধরনের সুযোগ সুবিধা যেন আমি পাই সেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। প্রচলিত শিক্ষায় আমি যেন শিক্ষিত হতে পারি সেজন্য তিনি সব চেষ্টাই করেছেন আমাকে মেইনস্ট্রিমের স্কুলে ভর্তির জন্য।’
যে ধরনের ডিজঅ্যাবিলিটির ফলে ধীরে ধীরে এডওয়ার্ডের কোন কোন অঙ্গ বা কোষের কর্মক্ষমতা নষ্ট হতে থাকে। কিন্তু তিনি প্রথম কোনো আফ্রিকান যিনি ডিজেনারেটিভ ডিজ্যাবিলিটি নিয়ে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে গ্রাজুয়েট করেছেন।
এডওয়ার্ড বলেন, ‘এমন এক মহাদেশে বাস করছি যেখানে ডিজঅ্যাবিলিটি রয়েছে এমন অধিকাংশ শিশুই স্কুলের ক্লাসরুম কেমন তা কখনো জানে না। আমি আমার গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানের কথা স্মরণ করতে পারি। সেসব শিশুদের কথা ভেবেই আমি সেটি করেছি। বিশ্বের সকল প্রতিবন্ধী মানুষই আমার অনুপ্রেরণার উৎস। যারা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে নতুন একটি দিনের সঙ্গে লড়াই শুরু করে। আমি তাদের জন্য এমন একটি বিশ্ব চাই যা থাকবে সবার জন্য উন্মুক্ত।’
এডওয়ার্ড এখন এমন এক বিশ্ব তৈরি করতে চান যেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও সকল সুযোগ সুবিধার অধিকারী হবে। তাদের স্বপ্নগুলো হয়ে উঠবে বাস্তব।