বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক কাল
মূলত তিন এজেন্ডা নিয়ে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিয়াও শোয়ের সঙ্গে শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বৈঠকে বসছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এ তিন এজেন্ডা হলো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, মাদক চোরাচালান রোধ ও সীমান্ত সমস্যা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিকাল ৩টায় দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় এ বৈঠক শুরু হবে।
এর আগে গত অক্টোবরে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিয়াও শোয়ে ও আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের মধ্যে বৈঠক হয়েছিল।
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, মাদক (ইয়াবা) চোরাচালান ও বিস্তার রোধ এবং সীমান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হবে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের তালিকা হস্তান্তর ও ফিরিয়ে নিয়ে রোহিঙ্গা নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টির ওপর জোর দেওয়া হবে আলোচনায়। প্রত্যাবাসনের আলোচনা শুরু হলেও এখনও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে।
ইয়াবা বিস্তার রোধে দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় যৌথ অপারেশন পরিচালনার বিষয়টিও বৈঠকে আলোচনায় গুরুত্ব পাবে। এছাড়া তিন মাস কিংবা ছয় মাস অন্তর দুই দেশের পুলিশ ও বিজিবির প্রধানদের আলোচনার জন্য সিকিউরিটি রিজিয়ন, যে কোনও সমস্যা সমাধানের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বর্ডার লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন এবং নাফ নদীর সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয় নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে রোহিঙ্গা এবং তাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসা এখনও বন্ধ হয়নি। আমরা বৈঠকে বিষয়টি জোরালোভাবে তুলবো এবং রাখাইনে পরিবেশ প্রত্যাবাসন উপযোগি করার জন্য আহবান জানাবো।’
তিনি বলেন, দুই দেশের সীমান্তে জিরো লাইনে ছয় হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে এবং তাদের নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তনের জন্য মিয়ানমারকে বলা হবে।
এখানে উল্লেখ্য, তুলনামূলক অবস্থাসম্পন্ন ছয় হাজার রোহিঙ্গা বেশ কিছুদিন থেকে জিরো লাইনে আশ্রয় নিয়েছে এই আশায় যে পরিস্থিতি ভালো হলে তারা আবার ফেরত যাবে।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) কোস্ট গার্ড বাহিনীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল রোহিঙ্গদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসার বিষয়ে বলেন, ‘আগে হাজারে হাজারে আসতো। এখন মাঝে-মধ্যে এক-দুইশ’ করে আসছে। একসময় সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গ প্রত্যাবাসনের ইস্যুতে কথা বলতে আমি মিয়ানমার গিয়েছিলাম। সেখানে চুক্তি ছাড়াও ১০টি পয়েন্টের ওপর কথা হয়েছিল। সে আলোচনা এখনও চলছে।’
অন্যদিকে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে আগে দেওয়া তালিকা অনুযায়ী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যরা যদি বাংলাদেশে থেকে থাকে, তাদের আটক করে হস্তান্তরের বিষয়টি বৈঠকে উত্থাপন করা হতে পারে।
মাদক চোরাচালান
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশে যে ইয়াবা চালান আসে তার প্রায় সবটা আসে মিয়ানমার থেকে এবং এটি বন্ধ করার জন্য আগের বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে, এবারও হবে। ইয়াবা চোরাচালান বিষয়ে আমরা তাদের বিভিন্ন তথ্য দিয়েছি এবং আমরা তাদের কাছে জানতে চাইবো তারা এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছে।’
সীমান্ত পরিস্থিতি
গত বছরের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার সামরিক বাহিনী কামান, মেশিনগানসহ ভারী অস্ত্র নিয়ে সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থান নিলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদ জানানো হয়। পরে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালেয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন সীমান্ত অঞ্চল শান্ত এবং আমরা চাই পরবর্তীতে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী সীমান্তের কাছে আর অবস্থান নেবে না।’ এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হবে এবং বাংলাদেশের অবস্থান তাদের জানানো হবে বলে জানান তিনি।
নিরাপত্তা চুক্তির বাস্তবায়ন
গত অক্টোবরে দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক ও বর্ডার লিয়োজোঁ অফিস সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘নিরাপত্তা সহযোগিতা সমঝোতা স্মারকে বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠকের বিধান আছে এবং আমাদের পক্ষ থেকে এর অধীনে একটি বৈঠকের প্রস্তাব দেওয়া হবে।’
শুক্রবার বৈঠক শেষে বিকাল ৫টায় আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আলোচনার অগ্রগতি গণমাধ্যমকে জানানো হবে। এরপর সোয়া ৭টায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দফতর পিলখানায় দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে জয়েন্ট স্টেটমেন্ট সই হবে। সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ডিনারের আয়োজন করা হবে।