শীর্ষ সন্ত্রাসী কচির কাছে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা যাচ্ছে!
---
নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর পুরান ঢাকার ত্রাস শীর্ষ সন্ত্রাসী ওমর ফারুক ওরফে কচি বিদেশে পালিয়ে থেকে পাইকারী দরে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার মাদক বিক্রি করছেন বলে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার বেতনভুক্ত লোক দিয়ে প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কতিপয় কর্মকর্তার মাধ্যমে এসব মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে। আর টেকনাফ থেকে বুড়িগঙ্গার নৌ-পথে এসব ইয়াবাসহ মাদক আনা। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দপ্তরে আইয়ূব আলী ভুঁইয়া নামে একব্যক্তি এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, পুরান ঢাকার শ্যামপুর থানাধীন নবীনচন্দ্র গোস্বামী রোডস্থ বুড়িগঙ্গার তীরের ইস্পাহানি ঘাট, শ্যামপুর ও গেন্ডারিয়া এলাকার আইজ গেটস্থ বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনীর পাশের বস্তি, ফরিদাবাদ বিপ্লবদের বাড়ি, শহিদনগর ডিআইট প্লট, গ্লাস ফ্যাক্টরি গলি, বাহাদুরপুর লেন, ফরিদাবাদ ও বৈশাখী হাউজিংসহ এলাকায় প্রকাশ্যে পাইকারী দরে ইয়াবা ব্যবসা চালানো হচ্ছে। আর সন্ত্রাসী কর্মকা-সহ নীরব চাঁদাবাজি, ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, প্যাথেডিনসহ মাদকের হাট বসানো হচ্ছে। আর এই ব্যবসার নেপথ্যের নায়ক পুলিশ খাতায় মোস্ট ওয়ানটেড শীর্ষ সন্ত্রাসী ওমর ফারুক ওরফে কচি ওরফে দাদা।
শ্যামপুর থানার নবীন চন্দ্র গোস্বামী রোডের ইস্পাহানি ঘাটে প্রতিদিন রাতে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ও নৌকাযোগে ইয়াবার চালান খালাস করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী কচি ওরফে দাদার অন্যতম সহযোগী সহিদ মাদক ওরফে বস্তি সহিদ, বিপ্লব, হাজী রুবের, রফিক, লম্বা সেলিম, বিল্লাল, মিলন, মাহবুব মাওলা হিমেল ওরফে হিমেল, হাসান গাজী, মঈনউদ্দিন, টেগরা টিপু। আর বাহাদুরপুর লেনের দুলাল, ইকবাল, মুন্না, হরিচরণ রায় রোডের জসিম, গেন্ডারিয়ার কালা শরীফ, কেবি রোডের শিপন, সুন্দর শরীফ ওরপে লেদু শরীফ এরা কচির ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করছে। আর এসব মাদক ব্যবসার লাখ লাখ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে শীর্ষ সন্ত্রাসী কচির কাছে পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এলাকার দুটি থানা পুলিশকে প্রতিমাসে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে। আর অন্য কোন সংস্থা যদি ওই এলাকার মাদক স্পটে অভিযানে আসে, তাহলে পুলিশ তাদের সরে যেতে বলে। এতে করে ওই মাদক ব্যবসায়ীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকছে। আর জসিম নামে এক মাদক ব্যবসায়ী থানা পুলিশকে ম্যানেজ করেন। তিনি গেন্ডারিয়া থানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। মাসোহারা দেন, ঈদের সময় বখশিশ উপঢৌকন, আসামি ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেন। প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত থানায় এই দফারফার কাজে ব্যস্ত থাকছেন। আবার উদ্ধারকৃত ইয়াবাসহ মাদক সিজার লিস্টের বাইরে রেখে তা আবার ক্রয় করে বিক্রি করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এসব মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রাজধানীর শ্যামপুর, গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুরসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য আইনে মামলা রয়েছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী কচি ওরফে দাদা ভাই পুরান ঢাকার আতঙ্ক। কচি, বিপ্লব, নয়ন ও চয়ন আপন চার ভাই। কচির বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে প্রায় ২০টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে অ্যাডভোকেট হাবিব মন্ডল হত্যা, সেন্টু হত্যা, মাইকেল খুন, বাবু হত্যা, আওয়ামী লীগনেতা মোজাম্মেল ও স্বপন হত্যা, সাবেক যুবলীগের নেতা সাধারণ সম্পাদক শেখ আসলাম হত্যা ও তার বাবা শেখ আব্দুস সালাম হত্যামামলার পর থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী কচি পুলিশের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। এসব হত্যাসহ অসংখ্য মামলা তার নামে থাকলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার বা আটক করতে পারেনি।
সূত্র জানায়, পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে দিবালোকে গুলি করে আইনজীবী হাবিব মন্ডলকে খুন করা হয় সন্ত্রাসী কচির নেতৃত্বে। ওই চাঞ্চল্যকর খুনসহ একাধিক হত্যামামলায় কচির বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, পুরান ঢাকার শ্যামপুর থানাধীন হরিচরণ রায় রোডস্থ আইজি গেট এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী কচির জন্ম হয়। ১৫ বছর বয়সের সময় থেকেই কচি ছিনতাই, চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন। সে ক্রসফায়ারে নিহত শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নান ও শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীরের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে হত্যা, চাঁদাবাজি, জমি দখল ও অস্ত্র ব্যবসায় খ্যাতি অর্জন করে। বর্তমানে ভারতে দার্জিলিংয়ে আত্মগোপনে রয়েছে। সেখানে ইয়াবা ব্যবসার টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। অপর সূত্র জানায়, সন্ত্রাসী কচি কখনও ভারতের দার্জিলিংয়ে, আবার কখনও নেপালে অবস্থান করেন। পুরান ঢাকার শ্যামপুর, পোস্তগোলা, বাহাদুরপুর লেন, ফরিদাবাদ, জুরাইন ও গেন্ডারিয়া এবং এর আশপাশের এলাকায় এই কচির নামে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। তার ক্যাডারদের ভয়ে ভুক্তভোগীরা থানায় পুলিশে অভিযোগ পর্যন্ত দিতে পারছেন না।
আর তার নামে চাঁদা আদায় করছেন, সন্ত্রাসী ইরফান, রফিক, লম্বা সেলিম, বস্তি সহিদ, বিল্লাল, মিলন, হাসান গাজী, হিমেল ও হাজী রুবেল। এছাড়া কচির নামে হাজী রুবেল ইজারাদার হয়ে বাহাদুর সমাজকল্যাণ সংঘের ব্যানারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে ঈদুল আযহা উপলক্ষে পোস্তগোলা শ্মশান ঘাটের গরুর হাটের ইজারা নেওয়া হয়। আর ওই হাটের লাভের টাকা কচির কাছে পাঠানো হয়ে থাকে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, হাজী রুবের মাঝে মধ্যেই ভারতের দার্জিলিংয়ে যান। সেখানে গিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী কচির সঙ্গে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকা-ের পরিকল্পনা করেন। তাকে গ্রেপ্তারপূর্বক তার পাসপোর্ট চেক করা এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে শীর্ষ সন্ত্রাসী কচির তথ্য পাওয়া যাবে।
এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো-দক্ষিণের সহকারী পরিচালক শামছুল আলম জানান, নৌ-পথে মাদকের সম্প্রতি কোনো মামলা ঢাকায় হয়নি। তবে ঢাকা জেলায় বুড়িগঙ্গা নদী থেকে বেশকিছু বিদেশি মদ উদ্ধার ও মামলা হয়েছে। তবে আমরা এ ধরনের কোনো তথ্য পেলে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার বা আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।