রায় নিয়ে সংসদ ও ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যাস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায় আপিল বিভাগ বহাল রেখেছেন। এ রায়ের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
রায় ঘোষণার দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ বিষয়ে কোনো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করার আহ্বানে আনুগত্য দেখিয়ে দলের নেতারা কোনো মন্তব্য করেননি। তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এবং ৯ জুলাই জাতীয় সংসদে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও দলীয় নেতার সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, রায়ের দিনই মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিষয়টি প্রথমে শুধু প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এরপর আইনমন্ত্রী বিষয়টি সভায় উপস্থিত সবাইকে অবহিত করেন। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন মন্ত্রী তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
একজন মন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গেই বলেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যাস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাহাত্তরের সংবিধানের অংশ। এটা সংবিধান পরিপন্থী হয় কীভাবে?
মন্ত্রীরা আলোচনাকালে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার পক্ষে মতামত দেয়ায় তাদের তীব্র সমালোচনা করেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে এক মন্ত্রী বলেন, বাহাত্তরের সংবিধান তো ওনারাই করেছিলেন। তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। রায় পাওয়ার পর এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করব।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, সংসদ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। সুতরাং সংসদে যে সিদ্ধান্ত এটাই চূড়ান্ত। এটা সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বাতিল হতে পারে না।
ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে রায় হওয়ার পর থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে রায়ের পর বিএনপি ‘জনগণের বিজয় হয়েছে’ বলে যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আরও বেশি ক্ষুব্ধ।
দলীয় কার্যালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ওই রায় নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে দলের হাইকমান্ড নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করছেন যে, এ বিষয়ে দলের ভেতরে এবং জাতীয় সংসদে বিস্তারিত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পর এ বিষয়ে দলের ওয়ার্কিং কমিটি এবং জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে আলোচনা করা হবে।
আগামী ৮ জুলাই শনিবার বিকেল ৫টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সকল সদস্যকে সভায় যথাসময়ে উপস্থিত থাকতে দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুরোধ জানিয়েছেন।