সোমবার, ১০ই জুলাই, ২০১৭ ইং ২৬শে আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

সিলেটে কমছে পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ

AmaderBrahmanbaria.COM
জুলাই ৭, ২০১৭

---

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেটের আটটি উপজেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে, কিন্তু সাথে সাথে বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ। তবে মানুষের দুর্ভোগ কমাতে এবং বন্যাকবলিত মানুষের কাছে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা ও স্থানীয় প্রশাসন। ইতোমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী ও মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফয়জুর রহমান।

স্থানীয়রা বলেছেন, অনেক এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় পৌঁছাতে পারছে না মেডিক্যাল টিম। এছাড়াও বিভিন্ন পর্যায় থেকে ত্রাণ হিসেবে খাবার পৌঁছে দেয়া হলেও বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন না বন্যাদূর্গতরা।

বন্যায় নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, চর্মরোগ ও ভাইরাসজনিত জ্বরের জীবাণু বেশি সক্রিয় থাকে। ফলে সহজেই এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে এতে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. হিমাংশু লাল রায় জানান, বন্যা আক্রান্ত এলাকায় ঠান্ডাজনিত কারণে শিশু ও বৃদ্ধদের শ্বাসকষ্ট ও সর্দি-কাশি দেখা দিয়েছে। তবে আশঙ্কা রয়েছে যে কোনো সময় ডায়রিয়ার মতো নানা ধরনের রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রেই সকাল-বিকাল স্বাস্থ্যকর্মীরা খোঁজখবর নিচ্ছেন।

এদিকে, শুক্রবার বন্যাকবলিত এলাকা পরির্দশন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ সময় তারা বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। এ সময় ‘‘দেশে আল্লাহর গজব পড়েছে, তাই বন্যা আর পাহাড় ধস হচ্ছে’’ মন্তব্য করেছেন এরশাদ। তবে শুক্রবার বিকেলে সিলেটের ফেঞ্জুগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুরে ত্রাণসামগ্রী বিতরণকালে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে প্রচুর খাদ্য মজুদ রয়েছে। খাদ্যের কোনো অভাব নেই। বিদেশ থেকেও চাল আমদানি করা হচ্ছে।

ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম হচ্ছে – বিএনপি’র এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তারা সব সময় আনরিয়েলেস্টিক কথা বলে। আই ডোন্ট কেয়ার।

ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার। বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী ও কেয়া চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।

এদিকে, বন্যায় কোনো কোনো এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণেও অভিযোগ উঠেছে। তবে সরকারী কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ত্রাণসামগ্রী সবার কাছে পৌঁছে দিতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এরপরও কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার।

প্রসঙ্গত, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সিলেটের আট উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষ ক্ষতিপ্রস্ত হয়েছেন। ওইসব উপজেলায় ৪৬৬ গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। এসব এলাকার ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৪ হাজার ৪৯১টি ঘরবাড়ি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪ হাজার ৩৩০ হেক্টর আউশ ধান ও আমনের বীজতলাসহ ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। বন্যার কারণে বন্ধ রয়েছে দুইশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ পর্যন্ত ৭৫ মেট্রিক টন ত্রাণ ও ৪ লাখ ৫৫ হাজার নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া শুকনো খাবারও বিতরণ করা হচ্ছে।