বাংলাদেশের তৈরী গাড়ির দাম মাত্র পাঁচ লাখ টাকা
---
সাধারণ মানুষের জীবনযাপন উন্নত করার লক্ষ্যে বিদেশি কোম্পানির প্রযুক্তিগত সহায়তায় দেশেই গাড়ি কারখানা প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে এই কাজ করতে যাচ্ছে সরকার। আর এই ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার কথা বিবেচনায় রেখেছে সরকার।
দেশি কারখানায় বানানো গাড়ির দাম পাঁচ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে এসব তথ্য জানা যায়।প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাঠানো চিঠিতে দেশে গাড়ি কারখানা স্থাপনের বিষয়ে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান ও তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
শিল্প মন্ত্রণালয়কে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে থাকার নির্দেশনাও ওই পত্রে দেওয়া হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ইস্পাত অ্যান্ড স্টিল কম্পানি লিমিটেডের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান গ্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পাশাপাশি সম্পূর্ণ নতুনভাবে এ গাড়ি কম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হবে। সরকারি তত্ত্বাবধানে মূলত বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিদেশি উদ্যোক্তাদের যৌথ বিনিয়োগে এ ধরনের কারখানা গড়ে তোলা হবে।
গাড়ি উত্পাদনে বিদেশি বিনিয়োগকারী নির্বাচনে এরই মধ্যে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্বে একাধিক বাণিজ্য প্রতিনিধিদল চীন, ইরান, জাপান, ভারত, মালয়েশিয়া সফরে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় জিলি, ইরানের সাইপা, মালয়েশিয়ার প্রোটন সাগা, ভারতের টাটা, জাপানের হোন্ডা কম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশের গাড়ি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী ব্যবসায়ীদের আলোচনা হয়।
এফবিসিসিআই সভাপতি এবং দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে গাড়ি বাজারজাত করার ব্যাপারে ভেবেছেন এবং আমাদেরও ওই মতে নির্দেশনা দিয়েছেন।
দেশের মধ্যে কারখানা নির্মাণ করে গাড়ি বানাতে তিনি সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন। এর পরই বিশ্বের নামকরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এ পর্যন্ত পাঁচটি দেশের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আশা করছি আগামী মাসে চীনের জিলি কম্পানির সঙ্গে আমাদের দেশেই গাড়ি বানানোর বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে।’
আবদুল মাতলুব আহমাদ আরো বলেন, বাংলাদেশের অনেক বড় মাপের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান দেশে গাড়ি বানানোর ব্যবসায়ে আসতে আগ্রহী। এফবিসিসিআইয়ের মাধ্যমে বিদেশি গাড়ি উত্পাদনকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে প্রধানমন্ত্রী গাড়ির দাম পাঁচ লাখ টাকার বেশি নির্ধারণ না করতে পরামর্শ দিয়েছেন। দামের বিষয়টি মাথায় রেখেই আলোচনা চলছে।
গত ৯ মে নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ ইরানের তেহরান সফরে যান। সে সময় ইরানের অন্যতম গাড়ি উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান সাইপা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাংলাদেশে গাড়ি বানানোর বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন। বৈঠকে মাতলুব আহমাদ সাইপা কর্তৃপক্ষকে প্রযুক্তি সহায়তা, কারিগরি বিশেষজ্ঞ সরবরাহের আহ্বান জানান। সাইপা কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে আসতে ইতিবাচক মত দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আলোচলার পর সে দেশের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসবে বলেও জানায়।
এ বিষয়ে নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান মাতলুব আহমাদ বলেন, এক সময় চীনের বিনিয়োগকারীরা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে চীনে কারখানা নির্মাণ করে পণ্য উত্পাদন করেছে। প্রযুক্তি সহায়তা নিয়ে উত্পাদন করতে করতে এখন চীন স্বনির্ভর, স্বয়ংসম্পূর্ণ। তারা এখন সারা বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াছে। তাদের প্রযুক্তি এখন শ্রেষ্ঠ। আমাদের অর্থের প্রয়োজন নেই। সরকার নীতি সহায়তা দিচ্ছে। কারখানা নির্মাণে যথেষ্ট পরিমাণে জায়গা প্রস্তুত হচ্ছে। সস্তা শ্রমিক আছে। এখন প্রযুক্তি সহায়তা পেলেই বাংলাদেশ শিল্প-কারখানা নির্মাণে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে।
শিল্পসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, দেশে গাড়ি নির্মাণে শিল্প মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এ গুরুত্বপূর্ণ খাতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানানো হয়েছে। তাঁরা আগ্রহী। এ খাতে বেসরকারি উদ্যোক্তা এলে তাঁদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। শিল্প মন্ত্রণালয় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে আছে।
সরকারের গত মেয়াদেও দেশে গাড়ি বানানোর চিন্তা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিল্প মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে তত্কালীন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়াকে সাধারণ মানুষের ব্যবহার উপযোগী গাড়ি বানানোর কথা বলেন।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সে উদ্যোগ খুব বেশি দূর এগোয়নি। বাংলাদেশ ইস্পাত অ্যান্ড স্টিল করপোরেশনের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে স্বল্প পরিসরে পাজেরো জিপ বানানো হলেও তা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। একই সঙ্গে সেডান কার বানানোর উদ্যোগও মাঝপথে থেমে যায়। এবার প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের ওপর ভার দিলেন স্বল্প দামের গাড়ি বানানোর।