শনিবার, ৪ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ইং ২২শে মাঘ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ

সরাইল দেওড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ! চলছে ফ্রি স্টাইলে

AmaderBrahmanbaria.COM
জানুয়ারি ৩১, ২০১৭

ব্রা‏হ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের দেওড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় চলছে ফ্রি ষ্টাইলে। নিয়ম কানুনের কোন তোয়াক্কা নেই এখানে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির খেয়াল খুশিই যেন সব। বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শিরিন আক্তারের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারে অভিনব ঘটনার জন্ম দিয়েছে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। ২০১৭ সালে তার বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে যোগদানের তারিখ দেখিয়েছে ২০১৬ সালে।
পরিচালনা কমিটির নির্দেশ অমান্য, ঔদ্ধত্যপূর্ন আচরন ও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বহির্ভূত সরকার বিরোধী আলোচনা সহ নানা অভিযোগে সাময়িক বরখাস্তকৃত ওই শিক্ষিকার বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় পরিচালনা কমিটি তাদের ইচ্ছে মতো। এ নিয়ে আদালতে চলমান মামলার সুরাহা হওয়ার আগে পরিচালনা কমিটি এই পদক্ষেপ নেয়।
সরাইল শিক্ষা অফিস ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সাল থেকে শিক্ষিকা শিরিন আক্তার বিদ্যালয় কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের সাথে অশালীন আচরন, বিধি সম্মত নির্দেশ অমান্য, দায়িত্বে অবহেলা, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই কর্মস্থলে ও জাতীয় দিবসে অনুপস্থিত থাকা ওই শিক্ষিকার নিত্য কর্ম হয়ে উঠে। যার কারনে ২০১০ সালের ২৩ জুন প্রধান শিক্ষক শিরিনকে কারন দর্শানো নোটিশ দেন। ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারী মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের বিদায় উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠান চলাকালে বিরতির সময় কাউকে কিছু না বলেই বিদ্যালয় ত্যাগ করেন তিনি। এরপর ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিরিনকে সতর্কীকরণ পত্র দেওয়া হয়। ওই পত্রের কোন জবাব দেননি তিনি। বাধ্য হয়ে কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিরিন আক্তারকে এ ঘটনায় ফের শোকজ করা হয়। সেই সাথে জবাব না পেলে বিভাগীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরপর ৩টি কারন দর্শানো নোটিশ দেওয়ার পর  একটিরও উত্তর দেননি তিনি। কমিটির সিদ্ধান্তকে অমান্য করায় তৎকালীন কমিটির সভার শিরিন আক্তারকে সাময়িক বরখাস্থ করা হয়। চুড়ান্ত বরখাস্তে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে না ৭কর্ম দিবসের শিরিন আক্তারের কাছে জবাব চাওয়া হয়। আত্মপক্ষ সমর্থন বা জবাব না দিয়ে শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া দেওয়ানী আদালতে মামলা করেন ।  আসামী করা হয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, কমিটির সভাপতি, অভিভাবক প্রতিনিধি, শিক্ষক প্রতিনিধি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কুমিল্লার চেয়ারম্যান ও সচিবকে।
গত ৫ মাসেরও অধিক সময় ধরে  চলছে এই মামলা। শিরিন আক্তারের কোন আবেদন ছাড়াই বিদ্যালয়ের বর্তমান পরিচালনা কমিটি চলতি বছরের গত ৮ জানুয়ারি বিষয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০১৬ সালে ১৬ জুলাই তারিখের ইস্যু করা আদেশে শিরিন আক্তারের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে একই বছরের ডিসেম্বর মাসে ২৯ তারিখে কাজে যোগদানের আদেশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সদস্য সচিবের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কমিটির অন্য সদস্যরা শিরিন আক্তারকে সাময়িক বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহারের জন্য প্রধান শিক্ষকের কাছে একটি আবেদন দেয়ার অনুরোধ করেন। শিরিন আক্তার তার বরখাস্তে মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন ও বেআইনি ইত্যাদি অশালীন ভাষা ব্যবহার করে একটি আবেদন দেন। কমিটি সেই আবেদনই গ্রহন করেন। এরপর প্রধান শিক্ষকের ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারীর স্বাক্ষরিত পত্রে বরখাস্তকৃত শিক্ষক শিরিনকে যোগদানের আদেশ দেন। ১৪ জানুয়ারী শিরিন যোগদান পত্র গ্রহন না করলেও ১৭ জানুয়ারী পত্রটি গ্রহন করেন। ১৭ জানুয়ারী পত্র গ্রহন করে ১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর যোগদান করলেন কিভাবে? এ বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে। কিন্তু মামলার বিষয়ে কোন কিছু উল্লেখ নেই ওই পত্রে। বরখাস্তকৃত শিক্ষকের আগে যোগদান পরে প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর ও পত্র প্রেরন আইনি জটিলতার সৃষ্টি করেছে। ওই পত্রের কপি হাতে পেয়ে হতবাক হয়ে যান মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।  তিনি মামলা ও আগে যোগদান পরে পত্র স্বাক্ষরের বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চেয়ে একটি পত্রও দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আরমান মিয়া বলেন, ডিসেম্বর মাসের সভায় আমরা শিক্ষিকা শিরিন আক্তারের বরখাস্তের বিষয়টি তুলে নেই। জানুয়ারির সভায় তুলে নেয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। তিনি হজ্ব করতে যাবেন বিধায় ২৯ ডিসেম্বর যোগদান দেখানো হয়েছে।
বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মোহিত কুমার দেব জানান, হজ্ব থেকে আসার পর ওই শিক্ষিকার হাতে যোগদান পত্র তুলে দেয়া হয়। তবে যোগদানপত্র পাওয়ার আগে কিভাবে তিনি ছুটি নিলেন- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন কমিটি সভা করে যেটা ভালো মনে করেছেন সেটাই করেছেন।
এ বিষয়ে সরাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সহিদ খালিদ জামিল খান বলেন, মামলা উত্তোলন বা নিস্পত্তি না করে সাময়িক বরখাস্ত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বিধি সম্মত হয়নি। আগে যোগদান পরে প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষরিত পত্র এটাও বেআইনি। পরবর্তী সিদ্ধান্তের জন্য আমি সকল কাগজপত্র উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়ে দিয়েছি।