নাসিরনগরে জায়গা দখলে বাড়িতে আগুন
আমিরজাদা চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে : ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার ছবি পোস্টের জের ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন্দির ও ঘর-বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের পর এবার একটি ভূমিসদ্যু চক্র সংখ্যালঘু এক পরিবারের জায়গা-সম্পত্তি জোরপূর্বক দখলে নেয়ার পায়তারা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভূমিদস্যুরা নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের ভুক্তভোগী ওই পরিবারটিকে তাদের জায়গা থেকে উচ্ছেদ করতে গত শনিবার (২১ জানুয়ারি) দিবাগত মধ্যরাতে তাদের একটি বসত ঘরে অগ্নিসংযোগ করে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে হরিপুর ইউনিয়নের হড়িণবেড় গ্রামের রণজিৎ দাসের সাথে একই ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের নাছির উদ্দিনের ছেলে উসমান খানের জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে মামলাও চলমান রয়েছে। উসমান খানের দাবি তিনি রনজিৎয়ের দাদা রাজাচরণ দাসের জীবদ্দশায় তার কাছ থেকে তিন শতক জায়গা ক্রয় করেছেন। তবে রণজিৎ বলছেন, তার দাদা উসমানের কাছে কোনো জায়গা বিক্রি করেননি। তাদের বাড়ির জায়গা দখলে নেয়ার জন্য উসমান দীর্ঘদিন ধরে তাদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। সর্বশেষ উসমানের করা একটি চাঁদাবাজির মামলায় গত সোমবার (১৬ জানুয়ারি) রণজিৎকে পুলিশ গ্রেফতার করে। বর্তমানে রণজিৎ জেলা কারাগারে রয়েছেন। এ ঘটনার পর গত ২১ জানুয়ারি দিবাগত মধ্যরাতে উসমান তার সহযোগীদের নিয়ে রণজিৎয়ের বসত ঘরে অগ্নিসংযোগ করে বলে অভিযোগ করেন রণজিৎয়ের স্ত্রী সাথী রাণী দাসা। এর আগে ২১ জানুয়ারি সকালে রনজিৎয়ের বাড়ি থেকে লাখ টাকা মূল্যের চারটি গাছও নিয়ে যান ওসমান।
সাথী রাণী দাস জানান, উসমান বেশ কয়েক বছর ধরে তাদের জায়গা-সম্পত্তি জোরপূর্বক দখলের জন্য পায়তারা করছেন। ১৬ জানুয়ারি পুলিশ রণজিতকে ধরে নিয়ে যাওযার পর থেকেই তাদেরকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের জন্য বেপরোয়া হয়ে ওঠেন উসমান ও তার বাবা নাছির উদ্দিন। গত ২১ জানুয়ারি দিবাগত মধ্যরাতে উসমান তার সহযোগী জালাল খান ও মছিদ উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজনকে নিয়ে তাদের বসত বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। তিনি আরও জানান, উসমান ও তার বাবা নাছির উদ্দিন তাদেরকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে ভারতে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। বর্তমানে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে উসমান খানের কোনো বক্তব্য পাওয়া না গেলেও তার বাবা নাছির উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা কাউকে ভারতে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দেইনি বরং রণজিৎই আমাদের জায়গা-সম্পত্তি জোর করে দখলে নিয়ে রেখেছেন। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলমান রয়েছে।
এ ব্যাপারে নাসিরনগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু জাফর বলেন, দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জায়গা সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে সামাজিকভাবে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা চলছে।