যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনে ‘কারচুপি’র প্রতিবেদন প্রকাশ
---
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জিততে সাহায্য করার জন্য প্রচারণা ক্যাম্পেইনকে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ ২৫ পৃষ্ঠার একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা।
২৫ পৃষ্ঠার গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পকে জেতানোর জন্য ‘পরিষ্কার পক্ষপাত’ করেছে ক্রেমলিন। ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন পরাজিত করতে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিজয়ী হতে সাহায্য করাই ছিলো তার নির্দেশের মূল লক্ষ্য।
গত ৮ নভেম্বরের ভোটে অপ্রত্যাশিতভাবে ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হায়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ইলেকটোরাল ভোট পান ট্রাম্প। ২৭২ ভোট প্রয়োজন হলেও ট্রাম্প জিতেন তিন শতাধিক। তবে পপুলার ভোট হিলারি বেশি পেয়েছেন ২০ লাখেরও বেশি।
নির্বাচনের শুরু থেকে ট্রাম্পের পিছিয়ে থাকার কথা বলা হচ্ছিল। কিন্তু তার অভাবনীয় জয়ের পর দেশের বিভিন্ন শহরে নজিরবিহীন বিক্ষোভও হয়। আর এর মধ্যেই শোনা যায় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে হ্যাকিংএর অভিযোগ।
খোদ হোয়াইটহাউজ প্রতিক্রিয়া জানায় এই অভিযোগের বিষয়ে, তদন্তের নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
এর আগে মার্কিন কেন্দ্রীয় সংস্থা সিআইএর প্রতিবেদনেও একই অভিযোগ উঠে আসে। এই অভিযেগে ৩৫ রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কারও করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্বগ্রহণের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী ২০ জানুয়ারি তিনি শপথ নেবেন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে।
শপথের দুই সপ্তাহ আগে নির্বাচনে কারচুপির গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশের ঘটনায় ট্রাম্পের ভবিষ্যত কী হবে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি। ট্রাম্প এরই মধ্যে তার মন্ত্রিসভা চূড়ান্ত করেছেন, তিনি কী কী কাজ করবেন-সেটিও জানাচ্ছেন।
রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ শত্রুতা থাকলেও ট্রাম্প ও পুতিন এরই মধ্যে পরস্পরের প্রশংসা করেছেন। একেও নজিরবিহীন বলা হচ্ছে।
কংগ্রেস সিনেট কমিটিতে শুনানি
মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়ে বৃহস্পতিবার রিপাবলিকান দলের জ্যেষ্ঠ সিনেটর জন ম্যাককেইনের সভাপতিত্বে কংগ্রেসে সিনেট কমিটির শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান জেমস ক্ল্যাপার, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার পরিচালক মাইক রজার্স ও প্রতিরক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।
ওই দিনই গত নভেম্বরের নির্বাচনে বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ নিয়ে তৈরি একটি প্রতিবেদন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে পাঠানো হয়। শুক্রবার নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। আর পুরো রিপোর্টের আন-ক্লাসিফায়েড ভার্সন আজ প্রকাশ করা হয়েছে।
বৈঠকে ক্ল্যাপার নির্বাচনে রুশ হ্যাকিংয়ের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশেই ডেমোক্রেট দলের সদস্যদের ইমেইল হ্যাক করা হয়- যা নির্বাচনের ফল নির্ধারণে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এই বিদেশি হস্তক্ষেপ বিষয়ক তাদের কাছে থাকা তথ্য নিয়ে এরই মধ্যে সিনেটের আর্মড সার্ভিস কমিটির কাছে তাদের সাক্ষ্য দিয়েছেন।
ক্ল্যাপার বলেন, ‘সাইবার হামলার দিক থেকে রাশিয়া দিন দিন যেভাবে আগ্রাসী হয়ে উঠছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। গত নভেম্বরে রুশ হ্যাকিংয়ের ঘটনায় মার্কিন নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব পড়ার বিষয়টিও আমরা অস্বীকার করতে পারব না। প্রেসিডেন্ট পুতিন কেন এই সাইবার হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, আগামী সপ্তাহে তার ব্যাখ্যা দেয়া হবে।’
এরইমধ্যে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ট্রাম্প, এক টুইট বার্তায় বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও গণমাধ্যম তাকে ভুল প্রমাণ করতে চাইলেও; সত্যিকার অর্থে এ সব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।
মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, রাশিয়া হ্যাকিং-এর মাধ্যমে ডেমোক্রেট দলের তথ্য হাতিয়ে নিয়ে তা উইকিলিকসের কাছে হস্তান্তর করে। আর উইকিলিকস নির্বাচনের আগমুহূর্তে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করে ডেমোক্রেট প্রার্থীকে অপদস্থ করায় নির্বাচনে এর প্রভাব পড়ে। তবে নজরদারি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের পাশাপাশি রাশিয়াও এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।