নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘ ৯ মাস অতিবাহিত হলেও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর মৃত্যু রহস্যের জট খোলেনি। আজ মঙ্গলবার ৯ মাস পূর্ণ হচ্ছে দেশব্যাপী আলোচিত এ ঘটনার। অজ্ঞাত কারণে মামলার রহস্যের জট খুলতে সিআইডি এখন অনেকটা চুপচাপ থাকলেও হতাশ ও ক্ষুব্ধ তনুর পরিবার।
তদন্ত কার্যক্রম কিংবা ঘাতক সনাক্তকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে মিডিয়ায় মুখ খুলতে নারাজ সিআইডি। ঘাতকদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে আগামী ৩০ ডিসেম্বর কুমিল্লা নগরীর পূবালী চত্বরে প্রতিবাদী সমাবেশ করবে গণজাগরণ মঞ্চ।
জানা যায়, চলতি বছরের গত ২০ মার্চ কলেজছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণের পর পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে কুমিল্লা সেনানিবাসের অভ্যন্তরের পাওয়ার হাউজ এলাকার একটি জঙ্গলে মরদেহ ফেলে দেয় ঘাতকরা। এ ঘটনার পর নানা নাটকীয়তা আর আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পর হয়ে যায় দীর্ঘ ৯মাস।
এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে দেশের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ মাঠে নামে। কিন্তু বর্তমানে তনু হত্যার বিচার নিয়ে শংকিত তনুর পরিবার।
সিআইডির একটি সূত্র জানায়, তনুর পোশাকে পাওয়া ডিএনএ প্রোফাইল মেলানোর জন্য গত ১৯ অক্টোবর থিয়েটারের ৫ সদস্যকে ফরেনসিক ল্যাবে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তাদের রক্ত নেওয়া হয়। এ পর্যন্ত অন্তত ১৫ জনের ডিএনএ প্রোফাইল মেলানো হয়েছে। এদিকে, দীর্ঘ ৯ মাসেও তনু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে না পারা, সামরিক-বেসামরিক ৭০ জনের অধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা, দুই দফা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করতে না পারা, এমনকি ডিএনএ পরীক্ষায় ৩ ধর্ষণকারীর শুক্রাণূ পেলেও এ পর্যন্ত ডিএনএ ম্যাচ করে ঘাতকদের সনাক্ত করতে না পারায় এ মামলার ভবিষ্যৎ কিংবা বিচার পাওয়া নিয়ে তনুর পরিবার, মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন মহলে সংশয় দেখা দিয়েছে।
গণজাগরণ মঞ্চ-কুমিল্লার সমন্বয়ক খায়রুল আলম রায়হান জানান, তনু হত্যা মামলার কোনো অগ্রগতি দেখছি না। ঘাতকদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে আগামী ৩০ ডিসেম্বর কুমিল্লা নগরীর পূবালী চত্বরে প্রতিবাদী সমাবেশ করা হবে।সিআইডির একাধিক সূত্র জানায়, মামলার তদন্তে বড় সহায়ক ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন কিন্তু আদালতের আদেশে সিআইডি ডিএনএ প্রতিবেদনটি দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী মেডিকেল বোর্ডকে সরবরাহ করলেও ৩ সদস্যের ওই মেডিকেল বোর্ড তনুর মৃত্যুর সঠিক কারণ স্পষ্ট করতে পারেনি। তাই শেষ পর্যন্ত তনুর মৃত্যুর রহস্যের জট নাও খুলতে পারে।সোমবার বিকালে তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ৯ মাস অতিবাহিত হয়ে গেল কিন্তু ঘাতক চিহ্নিত ও গ্রেফতার হলো না।
তিনি বলেন, মেয়ে হারিয়ে এখন স্বামীকেও হারাতে বসেছি, সে (তনুর বাবা ইয়ার হোসেন) এখন অসুস্থ্য, সারাক্ষণ শুধু মেয়ের জন্য কান্নাকাটি করে। সিআইডি বার বার বলে আসছে তনুর শুক্রাণু ডিএনএ পরীক্ষা করে ঘাতক সনাক্ত করবে, কিন্তু এখনো তা করা হলো না কেন, কার চাপে সিআইডি এ মামলার তদন্ত করছে না তা জানি না।মেয়ের ঘাতকদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করে তিনি ফের সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, তদন্ত চলছে, আমরা ঘাতকদের সনাক্ত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।