ইসলাম ডেস্ক: অভিন্ন মানব হওয়া সত্ত্বেও নারী-পুরুষের মাঝে সৃষ্টিগত কিছু বৈষম্য চোখে পড়ে। এতে রয়েছে মহাপ্রজ্ঞাময় স্রষ্টার সৃষ্টিকুশলতার অপূর্ব প্রকাশ। যা সম্যকভাবে তিনিই জানেন। শিল্পী তার শিল্পকর্মের রহস্য ভালো বলতে পারেন। অন্যরা হয়ত অনুমাননির্ভর কিছু বলেবে, কিন্তু চূড়ান্তভাবে নিগূঢ় তত্ত্ব বলতে পারবে না কিছুতেই।
আল্লাহ তাআলা বলেন— لله مُلْكُ السَّمَوتِ وَ الْاَرْضِ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ وَ يَهَبُ لِمَنْ يَّشَاءُ اِنَاثًا وَ يَهَبُ لِمَنْ يَّشَاءُ الذُّكُوْرَ اَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَ اِنَاثًا وَ يَجْعَلُ مَنْ يَّشَاءُ عَقِيْمًا اِنَّهُ عَلِيْمٌ قَدِيْرٌ (الشوري -٥۰ ‘এই আসমান এবং জমিন আল্লাহর আয়েত্বে। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। যাকে চান কন্যা দান করেন। যাকে চান দান করেন পুত্র। কাউকে আবার পুত্রকন্যা উভয় দান করেন। যাকে চান বন্ধ্যা রাখেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বপরিজ্ঞাত ও সর্বশক্তিমান।’
তাহলে কন্যাসন্তান জন্মে ভ্রু কুঞ্চিত করা, নাক সিটকানো, মুখ কালো করে রাখা কেনো? এটাতো নির্বুদ্ধিতার প্রমাণ! খোদাপ্রদত্ত রহমতকে তারা যহমত ভাবছে। এদের যদি জন্মই না হয় বা জীবন্ত প্রোথিত করা হয় তাহলে বিয়ের জন্য মেয়ে পাবে কোথায়? কোথায় পাবে সুন্দরী রূপসী স্ত্রী? সন্তানাদি হবে কোত্থেকে? সুদর্শন যুবক যোদ্ধা পাবে কোথায়? হযরত মারয়াম আ. যখন মান্নত করলেন এবং অপ্রত্যাশিত ছেলের স্থলে মেয়ে জন্ম নিল।
তো আফসোস করে তিনি বলে উঠলেন, قَالَتْ رَبِّ اِنِّيْ وَضَعْتُهَا اُنْثي (ال عمران-۳٦ ‘হে আল্লাহ! আমি তো কন্যাশিশু জন্ম দিলাম!’ এতো মেয়েশিশু; আমার উদ্দেশ্য তো পূর্ণ হলো না। যে মহান কাজের জন্য মান্নত করেছি সেখানে তো ছেলে চাই; মেয়ে সেখানে গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ তাআলা মারয়ামের মার আবেগভরা ফরিয়াদ শুনে বলেন, وَاللهُ اَعْلَمُ بِمَا وَضَعَتْ وَ لَيْسَ الذَّكَرُ كَالْاُنْثي (ال عمران-۳٦ ‘তিনি যা জন্ম দিলেন আল্লাহ সে ব্যাপারে ভালো জানেন। কোনো পুরুষও মেয়েটির বরাবর নয়।’
আল্লাহ তোমাদের চেয়ে ভালো জানেন। তিনি জানেন, এই মেয়ের সমান কোনো ছেলে হতে পারে না। যে কল্যাণ, বরকত ও আভিজাত্যের ধারা এই মেয়ের মাধ্যমে সূচিত হবে কোনো ছেলের মাধ্যমে হবে না। তুমি তো নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে ঘাবড়ে গেছেন। সামান্য মেয়ে দিয়ে আল্লাহপাক যে মহান কাজ নিতে চান তোমার চিন্তা সে পর্যন্ত পৌঁছবে না। ভবিষ্যতের গর্ভে কী লুকিয়ে আছে তাতো কেউ জানে না!
ইতিহাস প্রমাণ, মারয়াম আ.-এর জন্ম স্বয়ং তাঁর মায়ের জন্য বরং পৃথিবীবাসির মুক্তি ও কল্যাণের জন্য কতোটা কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে! বিশ্ব মানবতার জন্য সে ছিলো কতো বরকতময়! তাঁর গর্ভে হযরত ঈসা আ. জন্ম লাভ করেছেন। তিনি অন্ধকারাচ্ছন্ন পৃথিবীতে হকের পয়গাম শুনিয়েছেন। লাখো মানুষ তাতে নাজাত পেয়েছে। ভেবে অবাক হই, ঈসা আ.-এর জন্মদাত্রী মা-ই তাঁর অনুসারীদের নিকট শয়তান আগমনের পথ, অনিবার্য পাপ বলে চিহ্নিত হয়েছে। আরো অকথ্য কতো অপবাদ তারা আরোপ করে তাঁর ওপর।