আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের আটককৃত ডুবোড্রোনটি ফেরত দিয়েছে চীন বলে জানিয়েছে পেন্টাগন। মাত্র একদিন আগেই পেন্টাগন জানায়, ‘নিরাপত্তা এবং সমঝোতার’ ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের আটক করা ড্রোনটি চীন ফেরত দেবে।
গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলাচলকারী এই ড্রোনটি আটক করে চীন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, পানির নিচে চলাচলে সক্ষম এই যানটি আটকের ঘটনায় চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা তৈরি হয়। দক্ষিণ চীন সাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে চীন চালকবিহীন এই মার্কিন জলযানটি আটক করে। ফিলিপিনের সমুদ্র উপকূল থেকে চীনের একটি নৌকা এই ড্রোনটিকে আটক করে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ড্রোন আটকের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “আন্তর্জাতিক জলসীমায় ড্রোন আটকের মাধ্যমে চীন নজিরবিহীন কাজ করেছে।” যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, চীন বেআইনিভাবে তাদের ড্রোন আটক করেছে।
অপরদিকে চীনের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
এই ড্রোন কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে শনিবার তা নিয়ে দুইদেশের সামরিক কর্মকর্তারা আলোচনায় বসেন।এরপরেই চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে এই ঘটনায় মার্কিন প্রতিক্রিয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
চীন ড্রোন আটকের পরে পেন্টাগনের মুখপাত্র ক্যাপ্টেন জেফ ডেভিস বলেন, “এটি সাগরে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সহায়তা করছিল।এটি আমাদের। এটাতে পরিষ্কার করে লেখা ছিল এটি আমাদের। আমরা এটি ফেরত চাই। আমরা চাই এরকম ঘটনা যেন আর না ঘটে। এবিষয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চীনকে জানানো হয়েছে। এটি ফেরত দেয়ার জন্যেও দাবি জানানো হয়েছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানায়, গবেষণা জাহাজ ইউএসএসএস বোডিচের কাজের অংশ হিসাবে ওই ড্রোনটিকে মোতায়েন করা হয়েছিল। সমুদ্রের পানির লবণাক্ততা পরীক্ষার মতো গবেষণার কাজে এটি ব্যবহার করা হয়।বেসামরিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই যানটিকে সমুদ্র গবেষণাকাজে ব্যবহার করছিল।
দক্ষিণ চীন সাগরে ফিলিপিনের কাছে সুবিক বে থেকে ৫৭ মাইল দূরে ড্রোনটিকে জব্দ করা হয়েছে। এই এলাকাটিকে চীন তাদের নিজেদের সমুদ্র সীমা বলে দাবি করে। এতে আপত্তি রয়েছে প্রতিবেশী ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের। ওই সাগরে চীন কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করছে, যা নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের উত্তেজনা চলছে। ওই দ্বীপে সামরিক অস্ত্র মোতায়েন করা হচ্ছে বলে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে।
এদিকে নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের টেলিফোন আলাপের পর থেকেই চীনের সঙ্গে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।দীর্ঘদিনের মার্কিন রীতিনীতি ভেঙে ট্রাম্প চীনের বিচ্ছিন্নতাকামী প্রদেশ তাইওয়ানের নেতার সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেন।
এই ঘটনার পর ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেন, চীন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা জাহাজটি চুরি করেছে। এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
পর্যবেক্ষকরা জানান, সাম্প্রতিক কালের ইতিহাসে দুটো দেশের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় সামরিক ঘটনা। এর আগে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর একটি বিমানের সঙ্গে চীনের একটি জঙ্গি-বিমানের সংঘর্ষ হয়েছিল। এই ঘটনার পর দক্ষিণ চীন সাগরে দুই দেশেরই সামরিক উপস্থিতি বাড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই।