বিশেষ প্রতিনিধি : আখাউড়ায় ২০ জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার্থী বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। বিয়ের কারণে অকালেই থেমে গেছে ওদের শিক্ষা জীবন। এছাড়াও পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি আরও ২৫ ছাত্রী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬ সনের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় আখাউড়ায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২ হাজার ৭৪০ জন এবং মাদরাসার ৩০৬ জন পরীক্ষার্থী ছিল। এসব পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮৯ জন ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। কিন্তু এসব শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিল।
সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের আমোদাবাদ শাহআলম উচ্চ বিদ্যালয়, কল্লা শহীদ দাখিল মাদ্রাসা, নাছরীন নবী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও দেবগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও ধরখার উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীসহ ২০ ছাত্রী বিয়ে হয়ে গেছে পরীক্ষার আগে। বিয়ে হয়ে যাওয়ায় ওই সব ছাত্রীরা পরীক্ষা দেয়নি। তাছাড়া পরিবারের অস্বচ্ছলতা ও শারীরিক অসুস্থতার কারনেও কিছু ছাত্রীর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে।
সবচেয়ে বেশি মোগড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়েছে ৮ ছাত্রী। মোগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শশাঙ্ক কুমার রায় জানান, ছাত্রীদের বিয়ে হয়েছে বলে তিনি ধারনা করছে।
ধরখার উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করার পর পরই।
উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের এক অভিভাবক জানান, ভাল পাত্র পাওয়ায় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। মাথা থেকে দুশ্চিন্তা কমেছে বলে তিনি জানান।
আরেক ছাত্রীর মা জানান, মেয়েকে পড়ালেখা শিখিয়ে বড় ঘরে বিয়ে দেয়ার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু এক বখাটে তার মেয়েকে প্রায়ই রাস্তা-ঘাটে বিরক্ত করতো। তাই পরিবারের মান সম্মানের কথা চিন্তা করে তাড়াতাড়ি মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।
আমোদাবাদ শাহ আলম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী মো: তারেক বলেন, আমরা সব সময়ই ভিভাবকদেরকে পরামর্শ দেই বাল্য বিয়ে যাতে না দেয়। কিন্তু আমাদের অগোচরে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তা রোধ করার কোন উপায় থাকে না।
আখাউড়া নাছরীন নবী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা কাজী সাফিয়া খাতুন বলেন, জেএসসি পরীক্ষার আগে মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়া নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে উদ্বেগজনক। এতেই বুঝা যায় বাল্য বিয়ে সমাজে এখনো বিদ্যমান
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: দেলোয়ার হোসেন, বাল্য বিয়ের জন্য অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, সরকার মেয়েদের শিক্ষার জন্য বিনা মূল্যে বই দিচ্ছে, উপ-বৃত্তি প্রদানসহ বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করছে। কিন্তু অভিভাবকরা গোপনে বিয়ে দেওয়ায় তা রোধ করা সম্ভব হয় না।