নিউজ ডেস্ক : বহুল কাঙ্ক্ষিত দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। গত বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের মার্সেলি থেকে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত ২০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে সাউথ ইস্ট এশিয়া-মিডল ইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ-ফাইভ (সিমিউই-৫) কেবলে যুক্ত হলো বাংলাদেশ।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটায় এই সাবমেরিন কেবল সংযোগের ‘গ্রাউন্ড লোকেশন’ ঠিক করা হয়েছে। নতুন সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় আরো ১ হাজার ৩০০ জিপিএস ব্যান্ডউইডথ পাওয়া যাবে। আর এসএমডব্লিউ-৪-এর চেয়ে ১০ গুণ বেশি শক্তিশালী এসইএএমইডব্লিউই৫। তবে বাংলাদেশে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আগামী মার্চ মাসে আসতে পারে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘ক্যাপাসিটি মিডিয়া’ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কনসোর্টিয়ামে বাংলাদেশ (বিএসসিসিএল) ছাড়াও সদস্য হিসেবে রয়েছে, মালয়েশিয়া (টেলিকম মালয়েশিয়া), সিঙ্গাপুর (সিংটেল), ইন্দোনেশিয়া (টেলিন), মিয়ানমার (এমপিটি), শ্রীলংকা (শ্রীলংকা টেলিকম), পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ডিইউ), সৌদি আরব (এসটিসি), ওমান, মিসর, জিবুতি (জিবুতি টেলিকম), তুরস্ক, ফ্রান্স, ইতালি (টিআইএস), চীন (চায়না মোবাইল, চায়না ইউনিকম এবং চায়না টেলিকম) ও ইয়েমেন (টেলি ইয়েমেন)। ১৮টি দেশের ১৯টি ল্যান্ডিং স্টেশনে যুক্ত হবে এ কেবল।
গভীর সমুদ্রে স্থাপন করা মূল কেবল থেকে একটি সংযোগ কেবলের মাধ্যমে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। এটির ল্যান্ডিং স্টেশন স্থাপন করা হচ্ছে কুয়াকাটায়। এছাড়া মিসরের আবু তালাত, ইয়েমেনের আল হুদাইদাহ, ওমানের বারকা, ইতালির কাতানিয়া, জিবুতির জিবুতি সিটি, ইন্দোনেশিয়ার দুমাই ও মেদান, আরব আমিরাতের ফুজেইরাহ, পাকিস্তানের করাচি, তুরস্কের মারমারিস, শ্রীলংকার মাতারা, মালয়েশিয়ার মেলাকা, মিয়ানমারের নগওয়ি সাউঙ্গ, থাইল্যান্ডের সাতুন, ফ্রান্সের তৌলন, সিঙ্গাপুরের তুয়াস, সৌদি আরবের ইয়ানবু ও মিসরের জাফারানাতে ল্যান্ডিং স্টেশন থাকবে এ কেবলের।
১০০ গিগাবাইটস পার সেকেন্ড (জিবিপিএস) ডিডব্লিইডিএম প্রযুক্তি ব্যবহার করা এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫ সাবমেরিন কেবলটির ব্যান্ডউইডথ সরবরাহের সক্ষমতা ২৪ টেরাবিটস পার সেকেন্ড (টিবিপিএস)। এসইএএমইডব্লিউই-৫ কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে স্থাপন করা নতুন এ কেবল যাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে পশ্চিম ইউরোপে। এর মধ্যেমধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোও সংযুক্ত হবে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি স্থাপনের কাজ শুরু হয়। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সাবমেরিন যোগাযোগ ব্যবস্থার বহুমুখীকরণ লক্ষে প্রায় ৬৬০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয় করে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এতে বাংলাদেশ সরকারের ১৬৬ কোটি টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডকে (বিএসসিসিএল) ১৪২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা অর্থায়ন করেছে। বাকি ৩৫২ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি)।
প্রসঙ্গত, বিকল্প সাবমেরিন কেবল সংযোগ স্থাপন, আন্তর্জাতিক গন্তব্যের সংখ্যা ও ব্যান্ডউইডথ সরবরাহের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশও এ কনসোর্টিয়ামের অন্যতম সদস্য হিসেবে কেবলটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হতে সরকার ‘রিজিওনাল সাবমেরিন কেবল টেলিকমিউনিকেশন্স প্রজেক্ট, বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এর আওতায় ২০১২ সালের ২৭ জানুয়ারি দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে সংযুক্ত হতে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডকে (বিএসসিসিএল) দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বিএসসিসিএলকে এসইএএমইডব্লিউই-৫ কনসোর্টিয়ামে যুক্ত হতে অনুমতি দেওয়া হয়। এসইএএমইডব্লিউই-৫ স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণে ২০১৪ সালের ৭ মার্চ চুক্তি করে বিএসসিসিএল। এর আগে ২০০৫ সালে একই কনসোর্টিয়ামের অধীনে এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৪ নামে প্রথম সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ। প্রিয়.কম