আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাধারণ যেসব রাজ্যে যে দলের প্রার্থীরা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকেন কিংবা সব সময় জয়ী হন সেসব রাজ্যে প্রচারণায় খুব একটা গুরুত্ব দেন না। গত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে এমনটা প্রায় অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। প্রার্থীরা যেসব রাজ্যে দুর্বল অবস্থানে থাকেন সেসব রাজ্যেই প্রচারণার সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। তবে এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অতীতের বেশকিছু হিসেব-নিকেশ ও রীতিনীতি পাল্টে দিয়েছে। যেমন, সর্বশেষ জনমত জরিপগুলোতে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যবধান কমে আসা এবং কয়েকটি রাজ্যে এগিয়ে যাওয়াতে চাপে পড়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি। নির্বাচনের শেষ সপ্তাহে হিলারি তাই ডেমোক্র্যাটদের দুর্গ বলে পরিচিত রাজ্যগুলোতে মরিয়া প্রচারণায় নেমেছেন। কারণ আর কিছুই, নয় ট্রাম্প যেনও তাদের দুর্গে হানা দিতে না পারেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে, দুই দলই এখন সিদ্ধান্তহীনতায় থাকা ভোটারদের নিজেদের পক্ষে টানতে কোমর বেঁধে প্রচারণায় নেমেছে। যদিও ইতোমধ্যে ৩৭ মিলিয়ন ভোটার আগাম ভোট দিয়ে ফেলেছেন। আর ৮ নভেম্বরের নির্বাচনের আগে এখন প্রচারণা যুদ্ধ প্রায় শেষ পর্যায়। ফলে প্রচারণায় বেশ মুখোমুখি অবস্থানেও রয়েছে দল দুটি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, নির্বাচনের দিন যুক্তরাষ্ট্রে হামলা করতে আল-কায়েদার হুমকি।
শুক্রবার ট্রাম্প ও হিলারি ওহাইয়ো ও পেনসিলভানিয়াতে সমাবেশ করেছেন। মঙ্গলবারের নির্বাচনে এ দুটি রাজ্যের ভোটের ফলাফল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শনিবার উভয় প্রার্থী ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে প্রচারণা চালাবেন। এই রাজ্যকে নির্বাচনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।
ওহাইয়োর ক্লিভল্যান্ডে হিলারি নিজের প্রচারণা শেষ করেন একটি কনসার্টের মাধ্যমে। যেখানে সংগীত তারকা বিয়ন্স ও তার স্বামী র্যাপ তারকা জে জেড উপস্থিত ছিলেন। সেখানে হিলারি বলেছেন, আমাদের অসমাপ্ত কাজ রয়েছে, আটকে যাওয়ার মতো অনেক বাধা রয়েছে কিন্তু আপনাদের সহযোগিতায় আমরা যদি একবার চূড়ায় পৌঁছাতে পারি, তাহলে সব বাধা অতিক্রম করা যাবে।
হিলারির প্রতি নিজের সমর্থনের কথা জানান র্যাপার জে জেড। কেন হিলারিকে সমর্থন দেন তিনি তা ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ট্রাম্পের প্রতি আমার কোনও খারাপ মনোভাব নেই। রিপাবলিকান শিবির বিভাজিত। এটা আমাকে মনোকষ্ট দিয়েছে। ফলে ট্রাম্প আমার প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না। তিনি আমাদের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না।
নির্বাচনি প্রচারণার অংশ হিসেবে হিলারি এ কনসার্টের আয়োজন করেছেন। তার কনসার্ট প্রচারণার উদ্দেশ্য নির্বাচনে বেশি করে আফ্রিকান-আমেরিকানদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে উৎসাহিত করা।
বিপরীতে নিউ হ্যাম্পশায়ারে এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেছেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিলারি যুক্তরাষ্ট্রে সিরীয় শরণার্থীর সংখ্যা ৫৫ শতাংশ বাড়াতে চান। ট্রাম্প বলেন, তার (হিলারি) পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে সন্ত্রাসবাদ, উগ্রপন্থা ও চরমপন্থার একটি প্রজন্ম আমাদের স্কুল ও সমাজে ছড়িয়ে পড়বে।
এর আগে পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গে হিলারি বলেছিলেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর হোয়াইট হাউসে বসার মতো যোগ্য নন তার নারী ও সংখ্যালঘুদের তার অপমানকজনক মন্তব্যের জন্য।
সর্বশেষ জনমত জরিপগুলোর ফল অনুসারে বর্তমানে ওহাইয়োতে হিলারির চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। পেনসিলভানিয়াতে খুব অল্প ব্যবধানে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন হিলারি। আরসিপির জরিপে ফ্লোরিডায় হিলারি এগিয়ে থাকলেও ফাইভথার্টিএইট জরিপে দেখা গেছে ৫২ দশমিক ৪ শতাংশের সমর্থনে ২৯টি ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে জয়ী হবেন ট্রাম্প।
কেন্দ্রীয়ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ফক্স নিউজ-এর চালানো সর্বশেষ জরিপে আগের চেয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটনের ভোটের ব্যবধান কমেছে। শুক্রবার (৪ নভেম্বর) প্রকাশিত জরিপে ২ শতাংশ পয়েন্টে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন হিলারি ক্লিনটন। অথচ তার আগের জরিপে হিলারি ৩ পয়েন্টে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন।.
পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ১ নভেম্বর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সর্বশেষ জরিপটি পরিচালনা করেছে ফক্স নিউজ। নভেম্বরের জরিপে অংশ নেন ১,১০৭ জন ভোটার। আর এ জরিপে উঠে এসেছে, যে হিলারি এখনও ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও ব্যবধানটা খুব একটা বড় নয়। জরিপে দেখা গেছে, হিলারির পক্ষে ৪৫ শতাংশ এবং ট্রাম্পের পক্ষে ৪৪ শতাংশ ভোটারের সমর্থন রয়েছে।
এর আগে গত ২২ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ফক্সের চালানো জরিপে ট্রাম্পের পক্ষে ৪১ শতাংশ এবং হিলারির পক্ষে ৪৪ শতাংশ মানুষের সমর্থন ছিল। প্রার্থীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির দিক দিয়েও অক্টোবরের জরিপের চেয়ে নভেম্বরের জরিপে পার্থক্য রয়েছে। এবারের জরিপে ট্রাম্পের প্রতি ভোটারদের আস্থা আগের চেয়ে বেড়েছে। এবারের জরিপে ৩৮ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পকে সৎ বলে উল্লেখ করেছেন। অথচ অক্টোবরের জরিপ অনুযায়ী সেসময় ৩৪ শতাংশ ভোটার এমনটা মনে করতেন।
এদিকে, হিলারির ইমেইল ইস্যুতে এফবিআই নতুন করে তদন্ত শুরু করার ঘোষণা দেওয়ার পর আগের চেয়ে হিলারির প্রতি ভোটারদের আস্থা খানিকটা কমেছে। ফক্স নিউজের জরিপে দেখা গেছে, হিলারির প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন ৪৩ শতাংশ ভোটার। অথচ আগের জরিপে তা ৪৫ শতাংশ ছিল। তবে এবারের জরিপে হিলারিকে ৩১ শতাংশ ভোটার সৎ বলে উল্লেখ করেছেন। আগের জরিপে তা ৩০ শতাংশ ছিল। সূত্র: বিবিসি, পলিটিকো, ফক্স নিউজ।