সীমান্তে উত্তেজনার রেশ পুরোপুরি না কাটতেই এবার কূটনৈতিক সম্পর্কেও টানাপোড়েন শুরু হয়েছে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে। নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনের এক কর্মকর্তার ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ ও তাকে ‘বহিষ্কার’কে কেন্দ্র করে দু’দেশই পরস্পরের হাইকমিশনারদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এমনকি হাইকমিশনে কূটনৈতিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যাও কমিয়ে দিচ্ছে তারা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে শুক্রবার (৪ নভেম্বর) এ খবর দিয়েছে ভারতীয় ও পাকিস্তানি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, এ প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শিগগির শুরু হতে হতে পারে।
পাকিস্তানের এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলছে, গত সপ্তাহে ভারতে পাকিস্তানের হাইকমিশনের কর্মকর্তা মাহমুদ আখতারকে গুপ্তচর সন্দেহে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ এবং পরবর্তী সময়ে তাকে নয়াদিল্লির বহিষ্কারের প্রেক্ষিতে ইসলামাবাদে তোলপাড় শুরু হয়েছে। হাইকমিশনে থেকে মাহমুদ গোয়েন্দাগিরি করছিলেন বলে অসন্তোষ দেখিয়েছে ভারতও। দু’পক্ষের এই অসন্তোষ ও দৌড়ঝাপের ধারাবাহিকতায় কূটনৈতিক সম্পর্কে অবনতি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের সূত্রমতে, দুই দেশ তাদের হাইকমিশনারও প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। প্রত্যাহারের পাশাপাশি দু’দেশ হাইকমিশনে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যাও কমিয়ে আনতে পারে। এমনকি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের সম্পর্ক থাকতে পারে কেবল নামমাত্রে।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানায়, মাহমুদ আখতারকে জিজ্ঞাসাবাদ ও বহিষ্কারের পর গুপ্তচর হিসেবে আরও ছয়জনকে সন্দেহ করছে নয়াদিল্লি পুলিশ। এরইমধ্যে ওই ছয়জনের নাম বিভিন্ন মিডিয়ায় চলে গেছে। যার ফলে সে ছয়জনও গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন। এই অবস্থায় পাকিস্তান তাদের ওই ছয় কর্মকর্তাকেও সরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
এই ছয়জনকে জড়ানোর পরপরই অবশ্য ‘পাল্টা অভিযোগ’ তুলেছে পাকিস্তান। তারা বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) দাবি করেছে, ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের আট কর্মকর্তা ‘র’ ও ‘আইবি’র গুপ্তচর হিসেবে কাজ করছেন, যে কারণে নয়াদিল্লিও ওই আটজনকে প্রত্যাহার করা ছাড়া কোনো উপায় দেখছে না।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়, মাহমুদ আখতারসহ ওই কর্মকর্তাদের পরিচয় প্রকাশ করে ভারত ‘কূটনৈতিক সমঝোতা’ লঙ্ঘন করেছে। কারণ উভয়পক্ষই জানতো, এ কর্মকর্তারা ছদ্মবেশে তাদের দায়িত্ব পালন করছিলেন, কিন্তু সেটা কোনোভাবেই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাবিধি লঙ্ঘন ছিলো না।
এ বিষয়ে ইসলামাবাদের এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, নয়াদিল্লি যেটা করেছে সেটা চিন্তাতীত। এখন দু’পক্ষই এ জন্য মাশুল দেবে। এমনকি দু’পক্ষই হাইকমিশন প্রত্যাহারের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে। চলে এসেছে মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী কমানোর পর্যায়েও। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া ছাড়া কূটনৈতিক সম্পর্ক এই ‘তলানি’ থেকে ওঠানো সম্ভব নয়।