ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িঘর ভাঙচুরের প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আবার অনেক সংগঠন বিবৃতির মাধ্যমেও প্রতিবাদ জানান। শুক্রবার দুপুরে প্রায় আধা ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রেখেছে।
জানা গেছে, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের মন্দির ও বাড়িঘরে ভাঙচুর, লুটপাটের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’–এর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের কওে তারা। মিছিলকারীরা টিএসসি, দোয়েল চত্বর, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ও মৎস্যভবন হয়ে শাহবাগ মোড় গিয়ে অবরোধ করেন। দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাটের প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদী মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচি থেকে হামলাকারীদের শান্তি, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও দাবি জানানো হয়।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন, সচেতন হিন্দু পরিষদ, জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ, জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতি, মাইনরিটি সংগ্রাম পরিষদ, জগদ্বন্ধু মহাপ্রকাশ মঠ, জাগো হিন্দু পরিষদ, ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদ, মহিলা ঐক্য পরিষদ, জাতীয় হিন্দু ছাত্র মহাজোট, জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোট, জাতীয় হিন্দু মহাজোটসহ বিভিন্ন সংগঠন গতকাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধন শেষে প্রেসক্লাব এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে সংগঠনগুলো।
এর আগে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য নিম চন্দ্র ভৌমিক বলেন, সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় হামলা হচ্ছে। হিন্দুদের মন্দির ভেঙে দেওয়া হচ্ছে, বাড়িঘরে হামলা হচ্ছে। এর আগে বিদেশিদের ওপর হামলা হয়েছে, খ্রিস্টানের ওপর হামলা হয়েছে, মুসলমানদের ঈদের জামায়াতে হামলা হয়েছে। এসব হামলার মাধ্যমে বিভেদ, অনৈক্য সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি এই অবস্থা মোকাবিলার জন্য সব গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে একসঙ্গে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান।
কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসনের নির্লিপ্ততাও আছে এমন অভিযোগ করে নিম চন্দ্র নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে শাস্তির ব্যবস্থা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান।
অন্যদিকে পাঁচ দফা দাবিতে আগামী ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নেতারা বলেছেন, দাবি পূরণ না হলে কঠোর গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তাদের দাবিগুলো হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত, ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও ঘরবাড়ি সরকারি খরচে নির্মাণ করে দেওয়া, হিন্দু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, স্থানীয় সাংসদ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের পদত্যাগ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপারের অপসারণ; এবং একটি সংখ্যালঘু কমিশন গঠন।
সাংবাদিকদের সংগঠন ‘স্বজন’ এর শতাধিক সাংবাদিক স্বাক্ষরিত এক যুক্ত বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করার পাশাপাশি অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে পরিকল্পিত এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং যে কোন মূল্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ নাসিরনগরের স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধেও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। বিবৃতিতে সাংবাদিকবৃন্দ হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরসমূহ পুন:নির্মাণ ও পরিবারসমূহকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানান।