ডেস্ক রির্পোট : মালাউন শব্দটি বাংলাদেশের আনাচে কানাচে কত হাজারবার উচ্চারিত হয় তার হিসেব হয়তো করা সম্ভব না। তবে কোন মন্ত্রী যখন মালাউন শব্দটি উচ্চারণ করেন তখন হিসেব করাটা সহজ হয়ে যায়। সেই সাথে নতুন হিসেব নিকেশও তৈরী হয়। সম্প্রতি ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনায় প্রশাসন পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের জবাবে উত্তেজিত মৎস ও প্রানীসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক বলে ওঠেন ‘মালাউনের বাচ্চারা বেশি বাড়াবাড়ি করতাছে’। এটি স্বাধীন বাংলাদেশে কোন মন্ত্রীর প্রথম ‘মালাউন’ উচ্চারন।
পরাধীন বাংলাদেশ অর্থাৎ পাকিস্তানি আমলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে মালাউন শুনেছে এদেশের মানুষ। একাত্তরে হিন্দু-মুসলিম সবাইকে গণহারে হত্যা করেও পাকিস্তানিরা বলতো ‘গাদ্দার মালাউন’। ২৬ মার্চ গণহত্যা চলাকালীন পাকিস্তানি সেনারা বিশিষ্ট বাঙালি হিন্দু অধ্যাপক ড: গোবিন্দচন্দ্র দেবকে হত্যা করে। হত্যা করার পূর্বে তাঁকে মালাউন বলে সম্বোধন করে। সে বছরই ১৩ই এপ্রিল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজে আর এক বিশিষ্ট বাঙালি হিন্দু দানবীর নূতনচন্দ্র সিংহকে নিজে গুলি করে হত্যা করেন। উপস্থিত মুসলমানরা নূতনচন্দ্র সিংহের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করলে তাদের ভৎর্সনা করে তিনি বলেন, সামান্য একটা মালাউনের মৃত্যুতে এত শোক প্রকাশ করার কি আছে।
বিএনপি সরকারের প্রথম টার্মে সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাবির হলে ঢুকে পুলিশ কয়েকজন ছাত্রকে লাথি মারতে মারতে বলে ‘শালা মালাউন কুত্তার বাচ্চা, রোজা রমজানের দিনে ভাত খাস?
শুধু বাকি ছিলো আওয়ামী লীগ। সেই কোটাও পূর্ণ করলেন ছায়েদুল হক।
মালাউন শব্দটি আরবী শব্দ “ملعون” থেকে উদ্ভূত যার অর্থ অভিশপ্ত বা আল্লাহর অভিশাপপ্রাপ্ত। আসলেই হিন্দুরা এই দেশে অভিশপ্ত (মালাউন) । বাংলাদেশে এমন কোন হিন্দু ধর্মালমন্বী নেই যে জীবনে একবারও মালাউন গালিটি শুনেননি। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ সবার জন্য গড়া এই দেশ। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের রুপ ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে। আর দুখের বিষয় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের একজন মন্ত্রীই তার অসাম্প্রদায়িক মুখোশ খুলে সাম্প্রদায়িক চেহারা দেখালেন।
‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ গানটি এখন বোধহয় আর মনে মনেও কেউ গাইছেন না।
আমাদের সময়.কম