ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর, মন্দিরে হামলা-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার ‘বিচার বিভাগীয় তদন্ত’ দাবি করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। নাসিরনগর ঘুরে আসা সিপিবির প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদন তুলে ধরে আজ শুক্রবার সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান দলটির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
২০১২ সালে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও বসতিতে হামলার প্রসঙ্গ টেনে সিপিবি সভাপতি বলেন, “এসব ঘটনা প্রতিহত করার জন্য সরকার এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার ছিল তা হয়নি। রামুতেও দেখেছি, নাসিরনগরেও আমরা দেখছি।
‘সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস’ মোকাবেলায় সরকার ‘আপসকামী মনোভাব’ দেখাচ্ছে মন্তব্য করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এসব ঘটনাকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। অন্যান্য ক্ষেত্রে সরকার যদি ‘জিরো টলারেন্স’ দেখাতে পারে এক্ষেত্রেও তা দেখানো উচিৎ।
এ সময় সিপিবি সভাপতি সাম্প্রদায়িকতাকে দেশের ‘এক নম্বরের বিপদ’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে ‘সাম্প্রদায়িকতার কার্ড’ খেলার অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, “আমরা জানি যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াতে ইসলামী এবং আরও যেসব সাম্প্রদায়িক সংগঠন-সংস্থা আছে সেগুলোর সাথে বিএনপি জোটভুক্ত। বিএনপি সরাসরি তাদের মদদ দিচ্ছে।
মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর সাম্প্রতিক হামলা-নির্যাতন ‘এক সূতায় গাঁথা’।
তিনি আরো বলেন, দু-এক দিনের ব্যবধানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জে হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকালও বানারিপাড়ায়, বরিশালের ধুনটে, বগুড়া, যশোরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ে হামলা হয়েছে। এসব ঘটনার কোনোটিই বিচ্ছিন্ন নয়।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলন থেকে ‘সচেতন প্রয়াসের মধ্যে দিয়ে’ সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে তৃনমূলের জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম বাতিলের দাবি জানানো হয়। আর এসব দাবিকে সামনে রেখে আগামী ৮ নভেম্বর সিপিবি-বাসদের উদ্যোগে দেশব্যাপী ‘সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস’ এবং ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বর সিপিবির উদ্যোগে ‘সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী প্রচার ও প্রতিরোধ পক্ষ’ পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য, ফেইসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের দেড় শতাধিক ঘরে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এ ঘটনার পর গত বুধবার সিপিবির একটি প্রতিনিধিদল ওই এলাকা পরিদর্শনে যায়। প্রতিনিধিদলে ছিলেন- সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল্লাহ আল ক্বাফী রতন, মনিরা বেগম অনু, কাজী রুহুল আমিন, সিপিবি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাহরিয়ার মো. ফিরোজ, সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় পরিষদ সদস্য সাজিদুল ইসলাম।