জীবনে কল্যাণ আনবে বিয়ে
---
বিয়ের সূত্র ধরেই মানবসম্প্রদায়ের বিনির্মাণ। সকল ধর্মেই নারী পুরুষের চিরকালীন বন্ধনের মাধ্যম বিয়ে। ইসলামও মানবজীবনে বিয়েকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখেছে। কোরআনুল কারিমে বলা হয়েছে, “হে মানব সম্প্রদায়! তোমরা ভয় কর তোমাদের সেই রবকে যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি থেকে আর তাঁর থেকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর স্ত্রীকে এবং তাদের দুজন থেকে সৃষ্টি করেছেন অগণিত নর-নারী।” (নিসা:১)
বিয়ে মূলত একজন সুস্থ মানুষের প্রাকৃতিক প্রয়োজন। উপরন্তু মানুষের স্বভাবগত পরিচ্ছন্নতা, মানসিক ভারসাম্য, চারিত্রিক উৎকর্ষতা ও পবিত্রতার অন্যতম উপায় বিয়ে। বিয়ে সম্পাদিত হতে হবে দুইজন স্বাধীন বিবেকবান প্রাপ্তবয়স্ক ও মুসলমান পুরুষ অথবা এ সকল গুণে গুণান্বিত একজন পুরুষ ও দুইজন নারী সাক্ষীর উপস্থিতিতে বর কিংবা কনে পক্ষের ইজাব তথা প্রস্তাব আর অপর পক্ষের কবুলের মাধ্যমে। এই প্রস্তাব ও কবুল সাক্ষীগণের শ্রবণও করতে হবে। এর বিপরীতে অন্য কোন পদ্ধতিতে বিয়ে সম্পাদিত হলে তা বিশুদ্ধ হবে না। (সূত্র : হিদায়া)
বিয়ের প্রয়োজনীয়তা
অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান ও চিকিৎসা যেভাবে মানব জীবনের অপরিহার্য প্রয়োজন, শিক্ষাদীক্ষার প্রয়োজনীয়তা যেভাবে যুক্তিতর্কের ঊর্ধ্বে- একজন মানুষের সুস্থ জীবনযাপনের জন্য বিয়ের অপরিহার্যতা তেমনই। তাই ইসলামে এর গুরুত্ব অপরিসীম। ফজিলত ও মর্যাদা তুলনাহীন। কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে যে পুরুষের স্ত্রী নেই আর যে নারীর স্বামী নেই তাদের এবং তোমাদের দাস-দাসীর মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ তাদের বিয়ে সম্পাদন করে দাও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তাহলে আল্লাহ (বিয়ের বরকতে) নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছলতা দান করবেন। আল্লাহ বড় প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সূরা নূর:৩২)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আপনার পূর্বে প্রেরণ করেছি অনেক রাসুল এবং তাদের দিয়েছে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি।” (সূরা রাদ:৩৮)
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, “হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মাঝে যারা বিয়ে করতে সক্ষম তারা যেন বিয়ে করে নেয়। কারণ বিয়ে দৃষ্টি অবনত রাখতে এবং গুপ্তাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষায় অধিক সহায়ক আর যে বিয়ে করতে সক্ষম নয় সে যেন রোযা রাখে। কেননা রোযা তার যৌন ক্ষুধাকে দমিত করবে।” (বুখারী:২/৭৫৮, মুসলিম:১/৪৪৯)
সাহাবী আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পূত-পবিত্র অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে চায় সে যেন, বিয়ে করে স্বাধীন নারীকে। (ইবনে মাজাহ : ১৩৫) অন্য এক বর্ণনায় আনাস (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, কোন ব্যক্তি যখন বিয়ে করল তখন সে যেন দ্বীনের অর্ধেকটা পূর্ণ করে ফেলল। এখন সে যেন বাকি অর্ধাংশের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে।” (মিশকাত:২/২৬৮)। সাহাবী আবু আইয়ুব (রা.) এর বর্ণনায় এসেছে মহানবী (সা.) বলেছেন- “নবী-রসূলগণের চারটি সুন্নত রয়েছে। সেগুলো হলো ১. লজ্জাবোধ, ২. সুগন্ধি ব্যবহার, ৩. মিসওয়াক করা, ৪. বিয়ে করা।” (তিরমিযী:১/১২৮)
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও ইরশাদ করেন- তিন শ্রেণিরর লোককে আল্লাহ অবশ্যই সাহায্য করবেন-১. স্বাধীন হওয়ার চুক্তিতে আবদ্ধ গোলাম, যে নিজ মুক্তিপণ আদায়ের ইচ্ছা রাখে, ২. চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার উদ্দেশ্যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ব্যক্তি, ৩. আল্লাহর পথে জিহাদকারী। (তিরমিযী:২/২৯৫;৪; নাসায়ী:২/৫৮; ইবনে মাজা;১৮১)
মানুষ মানবিক প্রাকৃতিক চাহিদার কারণেই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। অথচ আমাদের প্রাণের স্পন্দন ইসলাম বলেছে বিয়ে আর্থিক সচ্ছলতার কার্যকর উপায়। কখনো বলেছে, পবিত্রতার কার্যকর মাধ্যম। আবার কখনও বলেছে দ্বীনের অর্ধেক। কখনও বা আখ্যায়িত করেছে আল্লাহর সাহায্য লাভের মাধ্যম হিসাবে। সম্ভবত এত ফজিলত ও মর্যাদার কথা অন্য কোন ইবাদত সম্পর্কে বলা হয়নি। কারণও আছে। কেননা সকল ইবাদত বিশুদ্ধ ও পরিপূর্ণ রূপে আদায়ের জন্য প্রয়োজন শারীরিক, মানসিক ও চারিত্রিক শুদ্ধতা, পবিত্রতা এবং স্থিতিশীলতা। যার অনেকটাই নির্ভর করে বিয়ের উপর।