জাফলংয়ে চরম দুর্ভোগ তবুও পর্যটকদের ভিড়
বেহাল সড়ক যোগাযোগে দুর্ভোগ আর ভোগান্তির অন্ত নেই। ব্যস্ততম সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের সংস্কার কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তার কোনো সঠিক তথ্য নেই। তারপরও প্রকৃতি কন্যা জাফলং থেকে বিন্দুমাত্র বিমুখ হয়নি পর্যটক দর্শনার্থীদের হৃদয়। চরম দুর্ভোগ, ভোগান্তি উপেক্ষা করেও জাফলংয়ে অতীতের ন্যায় চলছে পর্যটক সমাগম। পর্যটক মুখর জাফলংয়ে প্রতিদিনই ঢল নামছে দর্শনার্থীদের। ভ্রমণপিপাসু মানুষের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠেছে জাফলং।
দেখলে মনে হবে যেন পর্যটক শ্রুতধারা বইছে এখানে। এখানে বেড়াতে আসলে ভারতের মেঘালয়ের দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়, টিলা, ওপারের ওমঘট নদীর উপরের ঝুলন্ত ব্রিজ, বহমান পিয়াইনের স্বচ্ছ নিলাভ জলরাশি, নুড়ি পাথরের সঙ্গে পানির কলতান, আদিবাসী খাসিয়াদের মাচাং বাড়িঘর, পান-সুপারির বাগান, জাফলং টি কোম্পানির একমাত্র সমতল চা বাগান ভ্রমণ মুখরতায় হারিয়ে যান পর্যটকরা। মনে হয় যেন দিগন্ত এসে মিশে গেছে পাহাড়ের গায়ে। গত রোববার দিনভর প্রকৃতিকন্যা জাফলংয়ের বিভিন্ন স্থান ঘুরে বেড়াতে আসা ভ্রমণপিয়াসুদের সঙ্গে আলাপ হয় মানবজমিনের। জানা যায়, জাফলং নিয়ে তাদের চিন্তা-চেতনাসহ নানা স্বপ্নের কথা। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাপেক্ষে পর্যটকরা দ্রুত সৌন্দর্য বর্ধনসহ জাফলংকে রক্ষার তাগিদ দিয়েছেন।
জাফলংকে এক্সক্লুসিভ পর্যটন জোন হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের উদ্যোগ ও বিনিয়োগ চিন্তাধারাকে দ্রুত বাস্তবায়নের কথাও বলেছেন আগন্তুকদের কেউ কেউ। সকাল ১০টায় জাফলং পিকনিক সেন্টারে কথা হয় বগুড়ার ধুনট থেকে আসা বেশক’জন পর্যটকের সঙ্গে। প্যাকেজট্যুরে জাফলং ভ্রমণে এসেছেন তারা। তাদের দলনেতা জাহিদুল ইসলাম সোহাগ জানান, জাফলংয়ের নাম শুনেছি বাট কখনো নিজ চোখে দেখিনি। এতো সুন্দর এই জায়গাকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অদ্যাবদি কেন নেয়া হচ্ছে না তা জানি না। আমার মনে হয় এই স্থানকে টার্গেট করে সরকার পর্যটনখাতে বিনিয়োগ করলে বছরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব উপার্জন করতে পারবে। খুলনা থেকে জাফলং বেড়াতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা জানান, শুনেছি প্রকৃতি কন্যা জাফলংকে এক্সক্লুসিভ পর্যটনজোন হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছেন। যদি তা দ্রুত বাস্তবায়ন হয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে জাফলংয়ে কক্সবাজার, মংলার ন্যায় দেশি-বিদেশি পর্যটক দর্শনার্থীদের সমাগম আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাবে। চট্টগ্রাম কালুরঘাট থেকে সপরিবারে এসেছেন ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান খান। তিনি জানান, প্রতি বছরই একবার আমি পিকনিকের এই প্রিয় স্থানে আসি।
আমার মনে হয় সরকার এখানকার সৌন্দর্য বেষ্টিত অঞ্চলকে অধিগ্রহণ করে পর্যটনবান্ধব কিছু গড়ে তুললে ব্যাপক রাজস্ব আদায় ও এ স্থানের মাধ্যমে দেশকে বিশ্বের দরবারে নতুন রূপে পরিচিতি লাভ করানো সম্ভব হবে। আব্দুস শুকুর নামের একজন মিনিবাস চালক জানান, এলাকাটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে খুবই পরিচিত। কিন্তু সড়ক যোগাযোগের ভঙ্গুর চিত্র হতাশাজনক। আমি মনে করি সরকারের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় যোগাযোগ ব্যবস্থা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাপেক্ষে পর্যটন শিল্প বিকাশে সরকার উদ্যোগী হলে বছরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব প্রাপ্তির পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রও আরও প্রসারিত হবে। জাফলং বল্লাঘাট জিরো পয়েন্টে কথা হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফুল হক পলাশের সঙ্গে। তিনি জানান, জাফলং এখন একটি হাইরাইজ পিকনিক অঞ্চল। এখানকার পর্যটন সম্ভাবনাকে দ্রুত প্রসারিত করতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বৃহৎ কর্মসূচি নিয়ে এগুতে হবে। সরকারি উদ্যোগে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সমাগম বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের বাড়তি রাজস্ব আদায়ের পথও সুগম হবে। তিনি দ্রুততায় জাফলংয়ে পর্যটন সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন বাস্তবায়নে সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। স্থানীয় বল্লাঘাটের ব্যবসায়ী হোসেন মিয়া জানান, বাংলাদেশের অন্যতম এ আকর্ষণীয় স্থানে প্রতিনিয়তই ঢল নামে হাজার হাজার পর্যটক দর্শনার্থীদের।
এখানকার বিপর্যস্ত সড়ক যোগাযোগ সত্যেও পর্যটক, দর্শনার্থী আর ভ্রমণপিপাসু মানুষের আগমনের কোনো কমতি নেই। পর্যটকদের নির্বিঘ্ন যাতায়াতে তিনি দ্রুত সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক সংস্কারের দাবি জানান। বল্লাঘাটস্থ জাফলং পিকনিক সেন্টারের সম্মুখে গড়ে ওঠা ক্ষুধা রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী সফিকুল ইসলাম জানান, পর্যটন মওসুম চলছে। প্রতিদিনই বাড়ছে জাফলংয়ের পর্যটক দর্শনার্থীদের সংখ্যা। তবে এ ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি পর্যটক ও দর্শনার্থীদের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। সড়ক সংস্কার না থাকায় পর্যটক ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। পাথর ব্যবসায়ী ফারুক আহমদ জানান, জাফলং ভ্রমণে সড়ক দুর্ভোগ এমনকি শত কষ্টের পরও জাফলংয়ে পর্যটক স্রোত বিন্দুমাত্র কমেনি। বরং দিন দিন তা প্রসারিত হচ্ছে। ৩ নং পূর্ব জাফলং ইউপির চেয়ারম্যান হামিদুল হক ভুঁইয়া বাবুল জানান, পর্যটক দর্শনার্থীদের প্রিয়স্থান জাফলংয়ের সৌন্দর্য বর্ধন ও রক্ষায় স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততায় সরকারি উদ্যোগে পর্যটনবান্ধব অবকাঠামো স্থাপনসহ দ্রুত পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে জাফলংয়ের পর্যটন শিল্প আরও গতিশীল হওয়ার পাশাপাশি ব্যাপক রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে। স্থানীয় এমপি সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ জানান, জাফলংকে একটি এক্সক্লুসিভ পর্যটন অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছেন।
সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করে অত্রাঞ্চলের পর্যটন ব্যবস্থাপনাকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে উদ্যোগ নিয়েছেন। স্থানীয় জনগণের জন্য পর্যটনবান্ধব ব্যবসায়িক পরিবেশও গড়ে তোলা হবে এখানে। পর্যটকদের দুর্ভোগ, ভোগান্তি লাঘবে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক অতি দ্রুততায় সংস্কারসহ পর্যটকদের যোগাযোগ নির্বিঘ্ন ও সহজতর করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অচিরেই সওজের অধীনে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক সংস্কার কাজ শুরু হবে।