ম্যাজিক মাহি
মেয়েটি নিজের চঞ্চলতা আর খামখেয়ালি সবকিছুতে ছাড়িয়ে গেছেন ঠিক তার জনপ্রিয়তার মতোই। হুট করে মনের ইচ্ছে বা ভেতরের কথা হয়তো ফেসবুকে পোস্ট করে দিলেন নিজের মোবাইলে ভিডিও করেই। চটুল আর চঞ্চলতার পুরো কারখানা তার মনজুড়ে। কেন এরকম খামখেয়ালি করা হয়, জানতে চাইলে মাহির সরল উত্তর, ‘জানি না ভাইয়া, আমি তো এত খ্যাতি কখনো প্রত্যাশা করিনি। আল্লাহর রহমতে পেয়ে গেছি, দর্শকেরা ভালোবেসে আমাকে এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে। তাই নিজের প্রতি এমন কোনো উচ্চাশা বা আত্ম-অহংকারে ভুগি না যে, আমাকে অন্য সবার থেকে আলাদা হতে হবে।’ কিন্তু ফেসবুকে পাবলিকলি কিছু পোস্ট করলে, তাতে তো বিভিন্ন অনলাইন বা জাতীয় দৈনিক বিভ্রান্ত হতেই পারে? ‘সেটা তো আমার কোনো দোষ না। কারণ আমার সাথে আপনার যেমন কথা হয়, আর সবারও হয় নিয়মিত। আপনি তো বানিয়ে বা ফেসবুক থেকে কিছু লেখেননি বা ইত্তেফাক কখনো লেখেনি। আমার প্রশ্নটা সেখানেই। সেক্ষেত্রে কেউ যদি আমার সাথে কথা না বলেই স্ট্যাটাস থেকেই মনগড়া কথা লিখে ফেলে তাহলে কী করার আছে!’ কিন্তু এই যে তারকা জীবন মেইনটেইনের ব্যাপারে আরও খানিকটা সিরিয়াস হওয়া উচিত নয় কি? কী মনে হয় তোমার? ‘না, ভাইয়া মোটেই উচিত না। আমি মনে করি, সহজাত মানুষটা থেকে আলাদা হওয়া উচিত না কখনই।’ তবে এই নানা রকম স্ক্যান্ডাল বা খানিক নেগেটিভ খবর তো এসব থেকেই তৈরি হয়। সেগুলোর দায়িত্ব বা সেইসব খবরের প্রভাব তো তোমার ওপরেই পড়বে? ‘সোজাসাপ্টা আপনি প্রশ্ন করলেই হয়। আমার সাম্প্রতিক ওই ভুয়া ভিডিও স্ক্যান্ডাল নিয়ে জানতে চাইছেন তো?’ হা হা হা। হ্যাঁ। কী করব, একজন শীর্ষ নায়িকাকে তো এইভাবে প্রশ্নও করা যায় না? অথচ তুমি যদি এ বিষয়ে স্পষ্ট স্টেটমেন্ট না দাও, সেক্ষেত্রে কিন্তু ধোঁয়াশা তৈরি হবেই। কারণ দর্শক-শ্রোতারা মুখরোচক খবর শুনতেই চায়।
‘হ্যাঁ তা চাই। কিন্তু যা আমি নই। যে নোংরা ভিডিওর কোনো প্রসঙ্গেই আমি নেই। সে সম্পর্কে কেন আমি বলতে যাব, যে না এটা আমি না। আর আমিও আমার শৈশবে তারকাদের এসব খবর পড়তাম, তখন কিন্তু দুই ধরনের কথাই মাথায় ঘুরপাক খেতো। মনে হতো এসব খবর সত্য নাও হতে পারে। তাই আমি মনে করি, নিজের কাজের ক্ষেত্রে সত্ থাকাটা সবচেয়ে জরুরি। আমাকে কিসের কসম খেলে আপনি বা আপনারা বিশ্বাস করবেন যে, ওই নোংরা ভিডিওর মানুষ আমি না। অনেক সময় মনে হয় কি জানেন, এই যে সেলেবদের নানান রকম ডিপ্রেশন বা সুইসাইড করা বা নানা দুর্ঘটনায় পড়ার জন্য অনেকটাই মিডিয়া দায়ী।’ এই যে এটা কিন্তু আমাদের গালি দেওয়া হয়ে যাচ্ছে! ‘না ভাইয়া আপনারা নন। সবাই তো আর মন্দ না। আমরা ইন্ডাস্ট্রিতেও সবাই ভালো নই। কেউ ভালো, কেউ খুব ভালো, কেউ ভালো দেখানোর অভিনয় করে, কেউ আবার নিজে খারাপ এটাই বড়াই করে সেটাকেই স্থায়িত্ব দেয়। কত্ত রকম যে মানুষ দেখলাম।’ তাহলে তো বিশাল এক্সপিরিয়েন্স হয়ে গেছে দেখছি?
‘হ্যাঁ… বেশ ক’বছর তো হয়ে গেল। কিন্তু বিশ্বাস করেন, আমার বিরুদ্ধে কেউ বলতে পারবে না, যে আমি ভাব মেরেছি কারো সাথে।
একবার আউটিংয়ে বন্ধুদের সাথে খেতে গিয়েছি। তো সেখানে আমার ফ্রেন্ডদের ভেতরে আমাকে দেখে আশপাশের মানুষ অনেকেই খুব কনফিউজ, যে আমিই মাহি কি না? এক ছেলে তো বারবার আড়চোখে তাকায়। এরপর আমি নিজেই সেই ছেলের কাছে গিয়ে বললাম, এই যে আমিই মাহি। বলুন। আমিই চিত্রনায়িকা মাহি। ওই ছেলে তো অবাক।’
তা এ রকম অবাক করার তরুণের সংখ্যা তো অনেক। প্রেমে পড়া বা পছন্দের ছেলে কে? সরাসরি বলে দাও আজ পাঠকদের?
‘ওরে বাপরে বাপ। আমি এখনই বিয়ে করলে কাজ করবে কে? আর প্রেম, সে তো আরও ঝামেলা। এত সময় নেই। এমনি আড্ডাবাজিরই সময় পাই না। আর এসব সম্পর্ক!’ এফডিসি চত্বরে তখন কলকাতার ওম চলে এসেছে। মাহির সাথে আড্ডা ফুরোয় না। ‘ম্যাজিক মামণি’র গল্পই তো শোনা হলো না। সারা দেশ তো তোলপাড় এই গানে। ‘বিশ্বাস করো, আমি মনে মনে এমন একটা কাজই করতে চেয়েছিলাম। যেটি যেকোনো কিছুকে ছাপিয়ে আমার ক্যারিয়ারকে সমুজ্জ্বল করবে। তাই আমি ‘অগ্নি টু’-এর নায়িকা হিসেবে ফলাফল আগেই পেয়ে গেছি।’
বর্ষা বেলায় হঠাত্ রোদ উঠলে তার তীব্রতা থাকে অনেক। সেখানে মাহি যখন ফটোশুটে সময় দিচ্ছে, তখন একদল ভক্তরা ভিড় জমিয়েছে। অনেকদিন পর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি কোনো বড় ইমেজের নায়িকা পেলো। যাকে দেখলে মডেল, ছোট পর্দার অভিনেত্রী, আরজে বা উপস্থাপক অন্য কোনো কিছু মনে হয় না। যাকে দেখলেই আনমনেই মানুষ বলে ওঠে, ‘ওই নায়িকা আসছে।’
ইন্ডাস্ট্রিতে যখন অনেকেই অনেক কিছু করে নায়িকা হিসেবে কিছু করার চেষ্টা করছে, তখন মাহি তা তুরুপের টেক্কার দান আগেই ক্যাসিনো বোর্ডে ছেড়ে দিয়েছে। জীবনটাই যেখানে অনবরত বাজি যেখানে আজ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সাথে মনোমালিন্য। তো কাল একসাথে সেলফি, পরশু অন্য কোনো প্রযোজকের ঘরে যাওয়ার আশঙ্কা। এসব নিয়েই তো নায়িকার জীবন। ম্যাজিক মাহিও তেমনই এক কৌতুহলময় জীবনের সঙ্গী।