১০০টি দেশে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন আজমেরী
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ট্রাভেলার্সদের মধ্যে অন্যতম এক নাম কাজী আসমা আজমেরী। তিনি একশ দেশ ঘুরে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। যিনি ভ্রমণের মধ্য দিয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, প্রকৃতি, দেশের মানুষ সম্পর্কে জানান দিচ্ছেন।
গত ২৯ অক্টোবর উজবেকিস্তান থেকে তুর্কিমিনিস্তানের দাসুদু বর্ডারে পা রাখার পর ১০০টি দেশ দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেন কাজী আসমা আজমেরী। ২০০৭ সালে প্রথম দেশ হিসেবে থাইল্যান্ডে দিয়ে ভ্রমণ যাত্রা শুরু করেন তিনি। এরপর ২০০৯ সালে ভারত, নেপাল, ভুটান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও হংকং। ২০১০ সালে কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, ব্রুনেই, চীন, ম্যাকাউ, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সাইপ্রাস, তুরস্ক, মিশর, মরক্কো ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০১১ সালে স্কটল্যান্ড, ওয়েলস, স্পেন, জার্মানি, পর্তুগাল, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোকোভিয়া, মিয়ানমার, দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া ও জাপান। ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, নিউজিল্যান্ড, কুক দ্বীপ, টঙ্গা। ২০১৩ সালে নিউ ক্যালেডোনিয়া, তাহিতি, সলোমন দ্বীপ, নিউ, কিরিবাটি তাইওয়ান, ভানুয়াতু ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট। ২০১৪ সালে মেক্সিকো, গুয়াতেমালা, এল সালভাডর, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া, কোস্টারিকা, পানামা, কলম্বিয়া, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে, বলিভিয়া, পেরু ও ইকুয়েডর। ২০১৫ সালে পোর্ট রিকা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, হাইতি, বেলিজ, জ্যামাইকা, বাহামা ও আরুবা।
২০১৬ সালে ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, মন্টিনিগ্রো, কোসোভো, আবলানিয়া, ম্যাসেডোনিয়া, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, মোল্দাভিয়া, পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, সুইডেন, ডেনমার্ক, ইতালি, হাঙ্গেরি, সার্বিয়া, নরওয়ে ও কুয়েত। ২০১৭ সালে কিউবা, সামোয়া, কাতার। ২০১৮ সালে ফিলিপাইন, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, কানাডা, জর্জিয়া, বেলারুশ ও আজারবাইজান।কাজী আসমা আজমেরী এখন অবস্থান করছেন উজবেকিস্তানে। বাংলাদেশের পাসপোর্ট হওয়ার কারণে তার ভিসা পেতে সমস্যা হচ্ছে। তবু বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকার বহন করেই ঘুরবেন বিশ্বময়।
আসমা খুলনা শহরে বড় হয়েছেন। কাজী গোলাম কিবরিয়া ও কাজী সাহিদা আহমেদ দম্পতি একমাত্র মেয়ে আসমা। আসমা ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে স্কুলে আসা-যাওয়া করতেন। একদিন স্কুল ছুটির পর তার মা নিতে এলেন না। অবশেষে তিনি একাই সাহস করে বাসার উদ্দেশে হাঁটা শুরু করেন। হাঁটছেন আর তাকিয়ে দেখছেন আকাশটাকে। আকাশ দেখে তার মনে হলো, সে আকাশের শেষ সীমানা দেখবে। কিন্তু আকাশের শেষ সীমানা আর দেখা পায় না। সেদিন তিনি বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হেঁটেছিলেন। পরে এলাকাবাসী তাকে ধরে নিয়ে বাসায় পৌঁচ্ছে দেন।আসমা ইকবালনগর গার্লস হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করার পর এবং খুলনা মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে স্নাতক করেন। উত্তর দক্ষিণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিষয়ে এমবিএ। আসমা এখন থাকেন অস্ট্রেলিয়ার পার্থে। সেখান থেকে সারা দুনিয়া ঘুরে লাটাই সুঁতার টানে ফিরে যান বাংলাদেশে। আবার পাখির মতো উড়াল পরবর্তী না দেখার দেশে।
কাজী আসমা আজমারী বলেন, আমি শৈল্পিকভাবে ইবনে বতুতা, ঠাকুরমার ঝুলি, তেপান্তরের রাজ্যকন্যার গল্পে শুনে আমার শৈশবে কল্পনায় তাদের মনে মনে ভাবতাম। কিন্তু তারপর তাদের ছেড়ে দেয়া যায় না। তাই আমি স্বাবলম্বী হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম।জনপ্রিয়তার জন্য নয়, আসমা দেশ ভ্রমণ করে নিজের শখ থেকে। প্রথম দিকে শখের বশত ভ্রমণ শুরু করলেও এখন আসমা অনুভব করেন যে, সে তার ভ্রমণের মাধ্যমে নিজ দেশকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরতে পারছেন। সেটা তাকে বেশ আনন্দ দেয়।
তার ইচ্ছে ছিল ২০১৮ সালের মধ্যে সে ১০০টি দেশ ভ্রমণ করা পূর্ণ করবে। তার সেই আশা পূর্ণ হয়েছে। তার স্বপ্ন বাংলাদেশের পতাকা হাতে বিশ্বের বাকি সব দেশ ভ্রমণ করার। তার যাত্রা অব্যাহত থাকবে পৃথিবীর বাকি দেশের পথে পথে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সুনাম বয়ে চলবে তার বিশ্বভ্রমণ। ভ্রমণ বিশ্বে বাংলাদেশি হিসেবে ইতিহাস গড়বেন কাজী আসমা আজমেরী।তার স্বপ্ন বাংলাদেশের পতাকা হাতে বিশ্বের বাকি সব দেশ ভ্রমণ করবেন। তার যাত্রা অব্যাহত থাকবে পৃথিবীর বাকি দেশের পথে পথে।