খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার পরামর্শ বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর
নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে নির্বাচনে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা। রবিবার (২২ জুলাই) বিকালে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেড় ঘণ্টাব্যাপী দলের স্থায়ী কমিটির সঙ্গে সম্পাদকমণ্ডলীর নেতাদের এক বৈঠকে এই পরামর্শ দেওয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য জানান।
দলের সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক সদস্য বলেন, খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের বাইরে রেখে আমাদের নির্বাচনে যাওয়া উচিত হবে না। কারণ দলীয় প্রধানকে ছাড়া নির্বাচনে গেলে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়বেন। ভোটারদের মধ্যেও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। ফলে তাকে মুক্ত করে সঙ্গে নিয়েই নির্বাচনে অংশ নিতে হবে।
জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘সম্পাদকমণ্ডলীর নেতারা সবাই একমত হয়েছেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়া উচিত হবে না। এ বিষয়ে সবাই নিজের মতো করে যুক্তি তুলে ধরেছেন। তবে বৈঠকে স্থায়ী কমিটির নেতারা কেউ বক্তব্য রাখেননি।’
বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা বলেন, ‘বৈঠকে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে একটি বিষয়ে আমরা সবাই একমত হয়েছি যে, আগে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তারপর আগামী নির্বাচন নিয়ে অংশ নেওয়ার বিষয়ে ভাবতে হবে।’
সিলেট ও রাজশাহী অঞ্চলের দুই নেতা বলেন, সম্প্রতি ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্চাসেবক দলের বিভিন্ন জেলা ইউনিটের কমিটি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ সব কমিটি দেওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ বা সমন্বয়ন করা হয়নি। যারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন এবং আন্দোলন করতে গিয়ে হামলা-মামলার স্বীকার হয়েছেন, তাদের এসব কমিটিতে রাখা হয়নি। আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, কিন্তু টাকার বিনিময়ে অনেক জায়গায় তাদেরও পদ দেওয়া হয়েছে। এরফলে যারা আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন, তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। ফলে বিভিন্ন জেলায় দলের চলমান আন্দোলন সফল করতে গিয়ে অনেক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ কারণে যেসব সব জেলায় এখনও এসব সংগঠনের কমিটি বাকি রয়েছে, সেখানে জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কমিটি দিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটিকে অনুরোধ করেন দলের সম্পাদকমণ্ডলীর নেতারা।
এই প্রসঙ্গে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, ‘সম্পাদকমণ্ডলীর নেতারা আগামী দিনেও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে আন্দোলন জোরদার করতে যেসব জেলার দলের এবং দলের অঙ্গ সংগঠনের সংগঠনের কমিটি বাকি আছে, সেসব জেলায় দ্রুত কমিটি দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘আমি বলেছি, যেকোনও আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে ঢাকা মহানগর বিএনপি। কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে আন্দোলনে গড়ে তুলতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে মহানগর বিএনপি। গত ৩ জুন ঘোষিত ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ২৫টি থানা এবং ৫৮টি ওয়ার্ডের কমিটি নিয়ে দলের ভেতরে বিরোধ রয়েছে। এটি দ্রুত সমাধান করা উচিত।’
বিষয়টি নিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘ঢাকা মহানগর উত্তরের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের কমিটি নিয়ে কথা হয়েছে।এটি সমাধন করারও কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম দেখছেন।’
এদিকে, সভায় সম্পাদকমণ্ডলীর নেতাদের বক্তব্য শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আপনাদের কথা নোট করা হয়েছে। দলের সর্বোচ্চ ফোরামে আলোচনার পর পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।’
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. আব্দুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে ফজলুল হক মিলন, আসাদুল হাবিব দুলু, শামা ওবায়েদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, কামরুজ্জামান রতন, আবুল কালাম, সালাউদ্দিন আহমেদ, আমিনুল হক, মীর সরফত আলী সপু, সেলিম ভুইয়া, আনিসুজ্জামান বাবু, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, শিরিন সুলতানা প্রমুখ। বাংলা ট্রিবিউন