হঠাৎ সিপিবি কার্যালয়ে ওবায়দুল কাদের
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কার্যালয়ে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সেখানে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
এর আগে সকাল ১১টার দিকে হঠাৎই রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনের সিপিবি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান। প্রায় এক ঘন্টা সেখানে অবস্থানকালে দেশের অন্যতম প্রধান এই বামপন্থি দলের শীর্ষ দুই নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও শাহ আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
সূত্রমতে, বৈঠককালে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও আগামী নির্বাচন বিষয়ে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সিপিবি নেতাদের আলোচনা হয়। এ সময় সিপিবিসহ আটটি দলের সমন্বয়ে সম্প্রতি গঠিত গণতান্ত্রিক বাম জোট নিয়েও তাদের মধ্যে আলোচনা হয় বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
জানতে চাইলে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম অবশ্য এ প্রসঙ্গে কিছুই বলতে চাননি। সমকালকে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি কিছুই বলবেন না।
অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক সিপিবি’র একজন নেতা জানান, ওবায়দুল কাদেরের আগমন অনির্ধারিত। এটাকে সৌজন্য সাক্ষাৎ হিসেবে দেখছে সিপিবি।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ওবায়দুল কাদের বামপন্থি ও প্রগতিশীল বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এর অংশ হিসেবে সকালে সিপিবি কার্যালয়ে যান তিনি। বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো আগামী নির্বাচনে না এলেও যত সম্ভব বেশি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে নিয়ে আসার তৎপরতা আছে সরকারি দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে। এ কারণে আওয়ামী লীগ নেতারা পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। দুই একদিনের মধ্যে গণতান্ত্রিক বাম জোটের অন্যতম প্রধান শরিক খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সঙ্গেও বৈঠক করতে পারেন।
সম্প্র্রতি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সঙ্গে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএসহ নয়টি রাজনৈতিক দল মতবিনমিয় সভাও করেছে। ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমসহ ১৪ দলের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে নয় দলের নেতাদের ওই বৈঠককালে আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে হারাতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করার আগ্রহ দেখান নাজমুল হুদা।
এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনে সিপিবি ও বাসদসহ ১৪ দলের বাইরে থাকা বামপন্থি দলগুলো অংশ নেয়নি। যদিও নির্বাচনের আগে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সিপিবি ও বাসদ নেতাদের সঙ্গে বৈঠককালে তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে। কিন্তু বিএনপিসহ বিরোধী দলবিহীন ওই নির্বাচন ‘অশগ্রহণমূলক’ হবে না জানিয়ে নির্বাচনে যাওয়া থেকে বিরত থাকে বামপন্থি এসব দল।
এদিকে দীর্ঘ এক বছর ধরে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করার পর গত ১৮ জুলাই বামপন্থি দলগুলোর পৃথক দুই জোট সিপিবি-বাসদ এবং গণতান্ত্রিক বাম মোর্চাভুক্ত অন্য ছয়টি দলের সমন্বয়ে ‘গণতান্ত্রিক বাম জোট’ নামের নতুন জোট গঠিত হয়। সিপিবি ও বাসদ ছাড়াও এই বাম জোটের অন্য দলগুলো হচ্ছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ (মার্কসবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি এবং সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন। জোট গঠনের পরপরই সিপিবি নেতাদের সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের এই বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।