রাইফার মৃত্যু: বিএমডিসির তদন্তে সাড়া দেননি তিন চিকিৎসক
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় শিশু রাইফা খানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে চট্টগ্রামে এসেছে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) চার সদস্যের তদন্ত টিম।
মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তদন্ত দল অভিযুক্ত ম্যাপ হাসপাতালে চার ঘণ্টা অবস্থান করে। তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্ত তিন চিকিৎসককে ম্যাক্স হাসপাতালে উপস্থিত থাকতে বলা হলেও তাদের কেউ সেখানে যাননি। বিএমডিসির তদন্ত টিম ম্যাক্সে শিশু রাইফার ভর্তি হওয়া থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সব তথ্য খতিয়ে দেখেছে। সেই সঙ্গে ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনরতদের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেছে।
এদিকে, বিএমডিসির তদন্ত কমিটিকে বির্তকের ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)।
বিএমডিসির তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রুহুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, শিশু রাইফার মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে আমরা চট্টগ্রামে এসেছি। তদন্তের জন্য যা যা প্রয়োজন তার সব তথ্যই সংগ্রহ করেছি। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যও নিয়েছি। তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্ত তিন চিকিৎসক ডা. বিধান রায় চৌধুরী, ডা. দেবাশীষ সেনগুপ্ত ও ডা. শুভ্রদেবকে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা উপস্থিত হননি।
তিনি বলেন, অনুপস্থিত থাকা তিন চিকিৎসক দোষী হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তদন্ত কমিটির সদস্য বিএমডিসির পরিচালক অধ্যাপক এমএ বসির জানান, শিশু রাইফার পরিবারের সঙ্গেও তদন্ত টিম যোগাযোগ করবে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন ইএনটি স্পেশালিস্ট অধ্যাপক আবুল হাসনাত জোয়ারদার ও নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক নারায়ন।
এদিকে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই ম্যাক্সে বসে খাবার খাওয়ার অভিযোগ উঠেছে তদন্ত কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে। তাদের এমন কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা হিসেবে দেখছেন চট্টগ্রামের সাংবাদিক-জনতা।
দুপুরে তদন্তের কাজ পরিচালনা করার সময় ম্যাক্স হাসপাতালের বিতর্কিত কয়েকজনকে নিয়ে দুপুরের খাবার খেতে বসেন বিএমডিসির তদন্ত টিমের সদস্যরা। অথচ সেসময় গণমাধ্যমকর্মীরা ম্যাক্সে অবস্থান করলেও তদন্ত টিম চলে গেছে বলে সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দেয় ম্যাক্স কর্তৃপক্ষ। তদন্ত টিমের সদস্যরা যে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন সেই বিষয়টি সাংবাদিকদের থেকে গোপন রাখে তারা।
অন্যদিকে তদন্ত টিমের সদস্যরা মঙ্গলবার মোবাইল ফোনে রাইফার বাবা সাংবাদিক রুবেল খানকে তাদের সঙ্গে ম্যাক্সে কিংবা কোনো রেস্টুরেন্টে বৈঠক করার কথা বলেন। তাদের এমন প্রস্তাবে রাজি হননি রুবেল খান।
এ বিষয়ে রুবেল খান বলেন, চট্টগ্রামে এসে তদন্ত টিমের সদস্যরা রাইফার পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা জানাতে না এসে উল্টো তাদের সঙ্গে দেখা করার কথা বলেছে। তদন্তের স্বার্থে তথ্য সংগ্রহ করতেও তারা আমার বাসায় আসতে পারতেন। তা না করে তারা উল্টো যে হাসপাতালে আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে সেখানে আসতে বলেছে। রেস্টুরেন্টে বসে কি তদন্তের কাজ পরিচালনা করা যায়? আমি তাদেরকে সার্কিট হাউজ কিংবা প্রেসক্লাবে আসতে বলেছিলাম। তাতে তারা রাজি হননি।
এদিকে, সিইউজের সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামল ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস এক বিৃবতিতে বলেছেন, ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে যেখানে সাংবাদিকদের অভিযোগ রয়েছে, সেখানে অভিযোগকারী রাইফার পরিবারকে ডেকে বক্তব্য গ্রহণ কখনই কাম্য হতে পারে না। ম্যাক্স হাসপাতালে রাইফার পরিবারের নিরাপত্তার প্রশ্নটিও জড়িত। তদন্ত কমিটির সদস্যরা রাইফার পরিবারের সদস্যদের ম্যাপ হাসপাতালে গিয়ে তাদের বক্তব্য দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এতে তদন্ত কমিটির কার্যক্রম নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সাংবাদিকরা তদন্ত কমিটির কাজের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। আমরা মনে করি, তদন্ত কমিটির সদস্যরা সকল বির্তকের ঊর্ধ্বে উঠে মানবিক ও আইনি দৃষ্টিভঙ্গিতে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
গত ২৯ জুন রাতে চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আড়াই বছর বয়সী শিশু রাফিদা খান রাইফা। ভুল চিকিৎসা ও চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ আনেন রাইফার বাবা সমকালের স্টাফ রিপোর্টার রুবেল খান। এরপর থেকে দোষী চিকিৎসদের শাস্তি ও অভিযুক্ত ম্যাক্স হাসপাতাল বন্ধের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করে আসছেন চট্টগ্রামের সংবাদকর্মীরা। এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে।