রাজধানীতে বৃষ্টি মানেই সীমাহীন ভোগান্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক : সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা, নগরজীবনে ভোগান্তি। আর ভারি বৃষ্টিপাত হলে তো কথাই নেই। ভোগান্তি তখন অনিবার্য, অসহনীয়।
মঙ্গলবারও রাজধানীতে সে একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটল। নগরজীবনে নেমে এলো সীমাহীন ভোগান্তি। অথচ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ৫৯ মিলিমিটার।
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ বিরাজ করায় ও বাংলাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার প্রভাবে সোমবারও রাজধানীতে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছিল। আবহাওয়া অফিস আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছিল মঙ্গলবারও ভারি বৃষ্টিপাতের। সকাল থেকেই আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বৃষ্টি। কখনও মুষলধারায় কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি। সারাদিনই ছিল এই চিত্র।
আবহাওয়া অফিস জানায়, ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজধানীতে ৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এর মধ্যে দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রেকর্ড করা হয় ৫৭ মিলিমিটার। এই বৃষ্টিতেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয় তীব্র জলাবদ্ধতা। নগরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে নগরবাসীর জীবনে নেমে আসে তীব্র ভোগান্তি। বিশেষ করে শেরেবাংলা নগর থেকে পল্লবী পর্যন্ত সড়কে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এ পথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে কালশী পর্যন্ত সড়ক পানির নিচে চলে যায় পুরোটাই। ফলে যানবাহনগুলো আর এগোতে পারেনি।
দুপুর থেকেই ওই সড়কে নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে রাত পেরিয়ে গভীর রাত। বুধবারও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ধীরে ধীরে মাত্রা কমবে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
বৃষ্টিপাতের কারণে পানি জমে রাস্তা সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় লেগে যায় তীব্র যানজট। অনেক স্থানে সিএনজি অটোরিকশা ও প্রাইভেটকারের ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বিকল হয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা যায়। অনেক স্থানে পানির ভেতরে থাকা ম্যানহোলে পড়ে নগরবাসী জীবন সংহারের ঝুঁকিতে পড়েন। অনেক স্থানে রিকশা উল্টে কাদা-পানিতে একাকার হয়ে গেছেন যাত্রী। অনেক এলাকার পানির সঙ্গে স্যুয়ারেজের লাইনের বর্জ্য যুক্ত হয়ে যাওয়ায় সেসব এলাকায় দুঃসহ অবস্থা তৈরি হয়। এরই মধ্যে ময়লা পানিতে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার দৃশ্যও দেখা যায়। বৃষ্টির কারণে রাজপথে গণপরিবহনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকরা ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করেন।
বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাব, শাহবাগ, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন বাসস্টপেজে দেখা যায় ঘরমুখী অসংখ্য মানুষের বাসের জন্য অপেক্ষা। এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতেও। প্রায় সব রুটেই যাত্রীদেরই গন্তব্যে পৌঁছতে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত সময় লেগে যায়। ধৈর্যহারা হয়ে অপেক্ষমাণ অনেক যাত্রী হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন। নারী-শিশুদের পড়তে হয় মহাযন্ত্রণায়।
মুষলধারায় বৃষ্টির পরপরই রাজধানীর ঝিগাতলা, ট্যানারি মোড়, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, মানিক মিয়া এভিনিউ, কাকরাইল, বাড্ডা, কুড়িল, ভাটারা, আজিমপুর, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, বংশাল, লালবাগ, কমলাপুর, বাসাবো, মুগদাপাড়া, জুরাইনসহ বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। এসব এলাকার প্রতিটি সড়কে লেগে যায় তীব্র যানজট। অনেক স্থানে ম্যানহোলে চাকা ঢুকে রিকশা উল্টে গিয়ে যাত্রীর আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। কাঁচাবাজারগুলোয় তৈরি হয় উৎকট দৃশ্য।
ঢাকা ওয়াসা জানায়, প্রতি ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পানি নিষ্কাশনের ক্ষমতা বর্তমান ড্রেনেজ ব্যবস্থায় রয়েছে। এর চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হলেই জলজট তৈরি হয়। হঠাৎ ভারি বৃষ্টি হলে পানি নিষ্কাশনের গ্যাসকিডগুলোর মুখে রাস্তার আবর্জনাগুলো আটকে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়। এ সমস্যা সমাধানে মঙ্গলবারও ওয়াসার ড্রেনেজ সার্কেলের লোকজন মাঠে নেমেছিলেন। এ জন্য দ্রুতই পানি সরে যায়।
ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বৃষ্টির কারণে মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, গুলশান, নিকেতন, শান্তিনগর, মালিবাগ, গুলিস্তান, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ কারণে সৃষ্টি হয় যানজটের। এসব এলাকার বেশিরভাগ ট্রাফিক পয়েন্টে পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে হিমশিম খেতে হয়।
মতিঝিল থেকে পল্লবী পৌঁছতে পুরো চার ঘণ্টা লেগেছে বলে জানান উজ্জ্বল নামের এক যাত্রী। অন্যান্য দিন লাগে সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় ঘণ্টা।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় দেশের সর্বত্রই বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী দু-তিন দিন কম-বেশি বৃষ্টি থাকবে। মাঝারি থেকে অতি ভারি বর্ষণও হতে পারে কোথাও কোথাও।